Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে এসেছে পরিবর্তন

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ ঘিরে। প্রায় ৩৩ বছর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষের উদ্ভাবন সারা দেশে এখন মডেল। মাছ চাষ একদিকে খেটে খাওয়া মানুষের অভাবের দরজা বন্ধ এবং অন্যদিকে শিক্ষিত তরুণ-যুবকদের বেকার জীবনের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। সবমিলে তিন দশকে প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে প্লাবনভ‚মির মাছ চাষ। 

বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। আর কুমিল্লার ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর চাহিদার শতভাগ পূরণ হচ্ছে প্লাবনভ‚মির মাছে। কুমিল্লায় প্লাবনভ‚মিতে প্রথম মাছ চাষ শুরু হয় দাউদকান্দি উপজেলায়। ১৯৮৬ সালে ওই উপজেলার ধনুয়াখোলা গ্রামের প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ শুরু করেন সুনীল কুমার রায় নামে এক মৎস্যচাষি। অল্প সময়ে তার এ প্রকল্পের সাফল্য উপজেলার তরুণ যুবকসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেককে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে তোলে।
সুনীলের সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৬ সালে পানকৌড়ি ফিসারিজ লিমিটেড নামে একটি সংস্থা সম্মিলিতভাবে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ শুরু করে। দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের ৩৮৭ জন জমির মালিক সংগঠিত হয়ে ১১০ হেক্টর বর্ষা প্লাবিত জমিতে গড়ে তোলেন এই প্রকল্প। ধীরে ধীরে মাছ চাষের মডেল হয়ে উঠে দাউদকান্দি।
সময়ের পরিক্রমায় দাউদকান্দি উপজেলা ছাপিয়ে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষে ঝুঁকে কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলের মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর ও তিতাস উপজেলা। আবার কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ উপজেলাতেও প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন মৎস্যচাষীরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও সমবায়ের ভিত্তিতে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ করছে। এছাড়া অনেকে ব্যক্তিতগত উদ্যোগেও প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ করছেন।
বর্তমানে দাউদকান্দি উপজেলায় ৭৫টি ছোট-বড় প্লাবনভ‚মি মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। আয়তন প্রায় ৬ হাজার একর। এসব প্লাবনভ‚মিতে বছরে প্রায় এক লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। প্লাবনভ‚মিতে উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, কুমিল্লা জেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন মাছ। এরমধ্যে কুমিল্লার জেলার ৮৪ হাজার ৪২৪টি পুকুর, খামার, বেলেতে প্রতি মৌসুমে ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। আর প্লাবনভ‚মিতে লক্ষাধিক মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়।
প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ প্রকল্প মেসার্স হিমালয় ফিসারিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আহাম্মদ মিয়াজী ও উদ্যোক্তা মতিন সৈকত জানান, মাছ চাষের ফলে দাউদকান্দি ও আশপাশের জলাঞ্চলের মানুষের অভাব ঘুচেছে। শিক্ষিত তরুণরাই এখন প্লাবনভুমির মাছ চাষ প্রকল্পে বেশি ঝুঁঁকছে। ফলে কমেছে বেকারত্ব।
সরপুঁটি, তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভারকার্প, পাঙ্গাশ, ঘাসকার্পসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ হয় প্লাবনভূমিতে। এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনমান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা প্লাবনভ‚মিতে শ্রম দিচ্ছে। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠৈছে অত্যন্ত নান্দনিক।
দাউদকান্দির প্লাবনভ‚মি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সাধারণ কৃষক যারা এতদিন শুধু ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তারা মাছ চাষ প্রকল্পে অংশ নিয়ে লাভবান হচ্ছেন। এলাকার কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ বাড়তি আয় করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার অনেকেই অন্য পেশা বাদ দিয়ে প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ করাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। আবার শিক্ষিত তরুণ যুবকরাও মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিশেষত গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও তরুণ-যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কুমিল্লায় প্লাবনভ‚মিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ