Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক এডিবি আইএমএফ দুষ্টচক্র’

জলবায়ু ঝুঁকির ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফকে পৃথিবীর মানববিধ্বংসী দুষ্টচক্র বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় যে ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশের পাওয়া উচিত তা পাচ্ছে না এই চক্রের কারণে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে টিআইবি।

স্পেনের মাদ্রিদে আসন্ন ‘কপ ২৫ জলবায়ু সম্মেলন : জলবায়ু অর্থায়নে দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশসমূহের প্রতিশ্রুতির বাস্তব অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি বলছে, এ পর্যন্ত গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) থেকে বাংলাদেশের জন্য ৮৫ মিলিয়ন ডলার ছাড় হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়া যায়নি। অথচ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দরকার। কিন্তু প্যারিস চুক্তিতে এ বিষয়ে লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ) একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে অর্থ ছাড়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম ভারতীয় বেসরকারি ব্যাংক আইএল অ্যান্ড এফএস এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত এইচএসবিসি ব্যাংক জিসিএফে নিবন্ধন পাওয়ায় এর শুদ্ধাচার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হয়ে ঐচ্ছিক হওয়ায় ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সর্বোচ্চ দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বের হওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থায়নে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশসহ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি জিসিএফ থেকে মাত্র এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এর দশমিক ০৭ শতাংশ অর্থাৎ ৮৫ মিলিয়ন ডলারের অনুমোদন পেয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩০টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। এতে বায়ুম-লে ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সসাইড নিসৃত হবে। ফলে কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে দেশের জনগোষ্ঠীকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে দেশ। চার ও পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

জার্মান ওয়াচের বরাত দিয়ে টিআইবি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার ৮২৬ দশমিক ৬৮ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া টাআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, বন্যার কারণে পরিবারপ্রতি গড়ে ২১০ ডলার ক্ষতি হয়। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে তিন হাজার ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতি বছর জিডিপির অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৩০ প্রবৃদ্ধ অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিবিধ বীমা ও বন্ডকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় দেয়া কিস্তি থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অনুদানভিত্তিক অভিযোজন তহবিল প্রদানের মূল নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বীমা ও বন্ডভিত্তিক কার্যক্রম পরিকল্পনা মুনাফায় আগ্রহী ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থার প্রসারে সহায়ক হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছ থেকে বীমার কিস্তি আদায়ের কারণে তাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে এবং ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের ওপর আরও আর্থিক চাপ বাড়বে।

 



 

Show all comments
  • Nasim ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    সাম্রাজ্যবাদিদের জন্য কোনো নিয়মকানুন নেই, যত সমস্যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর।
    Total Reply(0) Reply
  • সোয়েব আক্তার ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    টিআইবিকে ধন্যবাদ সত্য কথা বলার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    জলবায়ূ মোকাবেলায় ক্ষতিপূরণ আদায় কে করবে? আমেরিকা কাউকে কোনোদিন তোয়াক্কা করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    উন্নতদেশগুলোর দূষণ আজ আমরা গরীব দেশের মানুষেরা ভোগ করছি। এই অবিচারের বিচার হবে কিয়ামতের দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী দেশগুলোর একজোট হয়ে কিছু একটা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিআইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ