পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘প্রয়োজন মানুষকে পথ দেখায়’ প্রবাদটি যথার্থই। আল্লাহ’র সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। আদিযুগে মানুষ গুহায় থাকতো, কাঁচা ফলমূল খেত। পরবর্তীতে মানুষ নদীর ধারে বসতি গড়ে এবং ফলমূল পশুর গোশত আগুনে ঝলসে খাওয়া শেখে। বিবর্তন এবং বিবেকবুদ্ধি খাটিয়ে মানুষ চাহিদার যোগানে নানান খাবার খায়, বিকল্প পথ বের করে নেয়। ’৭৪ সালে লবণের অভাবেও বিকল্প পণ্য দিয়ে লবণের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে দেশের মানুষ। ধনী-গরীব সবার রঁসুই ঘরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় মশলা জাতীয় কাঁচা পণ্য পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় উঠেছে। অনেক ভোক্তার পক্ষে এতো বেশি দামে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সে চিন্তা মাথায় রেখে পেঁয়াজের অভাব পূরণে নতুন নতুন মশলা উদ্ভাবন করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা সফলও হয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বারি পাতা পেঁয়াজ-১ একটি মসলা জাতীয় ফসল। এ মসলাটি রঁসুই ঘরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি জনপ্রিয়। এশিয়ার সাইবেরিয়া এবং চীন এই পেঁয়াজের উৎপত্তিস্থল।
পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ‘চিভস’ আবিষ্কার করেন। এই চিভসের উদ্ভাবনের আগে বিদেশি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে আবিষ্কার করে বারি পাতা পেঁয়াজ-১। এ পণ্যটি বাংলাদেশে চাষ করা সম্ভব। ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ নামে এই উন্নত পেঁয়াজ পাতা আবিষ্কার নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ ভোক্তাদের পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করবে। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দূর করবে। সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটাতে এই পাতা বসতভিটাসহ মাঠপর্যায়ে এর চাষ করা যায় চিভসের মতোই।
জানা যায়, বিএআরআইয়ের মসলা গবেষণা কেন্দ্র বগুড়া শাখা ২০১৪ সালে এটি উদ্ভাবন করে। ৫ বছর আগে এটির উদ্ভাবন করা হলেও বর্তমান পেঁয়াজ বাজারের সঙ্কট কাটাতে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের আগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, এই বারি পাতা পেঁয়াজ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল।
বাংলাদেশে ব্যবহার না হলেও ইতোমধ্যেই এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই পণ্য খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অবশ্য দেশভেদে এর নামের বৈচিত্র্য রয়েছে। জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা, সাইবেরিয়ায় এই পাতা পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। তবে গুরুত্বের বিবেচনায় জাপানে এ ফসলটি বাল্ব পেঁয়াজের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। এটি বাংলাদেশে চাষ উপযোগী। পাতা পেঁয়াজ বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে টবেও চাষ করা যায়।
এ জাতের পাতা পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করা যাবে এবং সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্করায়নের মাধ্যমে রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার সাংবাদিকদের আরও জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মে-জুন বা অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ এর বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। সারি পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৪ থেকে ৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৮ থেকে ১০ কেজি বীজের প্রয়োজন পড়ে। সাধারণ পেঁয়াজ বীজের মতোই এই বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ১২ ঘণ্টা শুকনা পাতলা কাপড়ে বেঁধে রেখে দিলে বীজের অঙ্কুর বের হয়।
বীজতলায় পঁচা গোবর সার দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করা হয়। বীজতলায় আগাছা নিড়ানোসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হয়। চারার বয়স ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়ে যায়। চারা উত্তোলনের পর চারার ওপর থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছেঁটে ফেলে দিয়ে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের দুই মাস পরেই প্রথমে পাতা সংগ্রহ করা যায়। মে থেকে জুন মাসে বীজ বপন করলে নভেম্বর পর্যন্ত গাছ থেকে গড়ে ২ থেকে ৩ বার পাতা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
জানা যায়, প্রথমে সংগ্রহের ২০ থেকে ২৫ দিন পরপর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছটি তুলে মূল এবং হলুদ পাতা কেটে পানিতে ধুয়ে আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করা যায়। এ প্রসঙ্গে মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র (ফরিদপুর) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, মে থেকে নভেম্বর মাসে যখনই বীজ বপন করা হোক না কেন মূল জমিতে রোপণের পর ডিসেম্বর মাসে পাতা পেঁয়াজের ফুল আসা শুরু হয়। এটা পরপরাগায়িত ফসল। তাই জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি জাতের মাঠ থেকে অন্য জাতের মাঠের দূরুত্ব কমপক্ষে এক হাজার মিটার বজায় রাখতে হবে। সব বীজ একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না। তাই কয়েক দিন পরপর পরিপক্ব পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
সূত্র জানায়, অনেকটা দেশি পেঁয়াজের বীজের মতোই সামান্য দেরিতে বীজ সংগ্রহ করলে গাছ থেকে সব বীজ ঝরে মাঠিতে পড়ে যায়। পাতা পেঁয়াজের বীজ সাধারণত ফেব্রæয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
বীজ সংগ্রহ করার পর রোদে শুকিয়ে হালকা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বীজ বের করতে হবে। পরে বীজ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ছিদ্রবিহীন পলিথিন বা টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম। এক হেক্টর জমিতে ৭০০ থেকে ৯০০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।