Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জলদস্যুতার সাজা যাবজ্জীবন

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার সায় দুর্যোগ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রস্তাবে মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কোনো জলদস্যুতা বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাজা যাবজ্জীবন রেখে বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে দুর্যোগ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনী বাস্তবায়িত হলে জলবায়ুবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি প্রসার ঘটবে। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পাবে, যা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশ মন্ট্রিল প্রটোকলে অনুস্বাক্ষর করায় এটি ইউনিভার্সেল রেটিফায়েড প্রটোকলের মর্যাদা লাভ করেছে। ২০১৬ সালে রুয়ান্ডার কিগলিতে মন্ট্রিল প্রটোকলের ২৮তম সভায় শক্তিশালী গ্রিন হাউস গ্যাস-এইচএফসির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মন্ট্রিল প্রটোকল সংশোধিত হয়।
সংশোধনটি বাস্তবায়িত হলে এ শতাব্দীর শেষে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রায় ০.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমানো সম্ভব হবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০১৫ সালে গৃহীত প্যারিস চুক্তির প্রায় ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, কিগালি সংশোধনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- শক্তিশালী গ্রিন হাউস গ্যাস যেমন- এইচএফসি-এর ব্যবহার হ্রাস করা। এইচএফসিগুলোর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্ষমতার মানমাত্রা প্রটোকলে যুক্ত করা হয়েছে। এইচএফসির ব্যবহার, আমদানি, রফতানি, উৎপাদন ইত্যাদির মান কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মানে নির্ধারিত হবে। ভিত্তিস্তর কোনো নির্দিষ্ট কয়েক বছরের এইচএফসি ও এইচসিএফসি উভয় ধরনের এবং দ্রব্য ব্যবহারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
কিগালি সংশোধনী অনুযায়ী উন্নত রাষ্ট্রসমূহ ২০১৯ সাল থেকে এইচএফসির দুই রকম ফেজ ডাউন সিডিউল অনুসরণ করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো ২০২৯ সাল থেকে দুই রকম ফেজ ডাউন সিডিউল অনুসরণ করবে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশ যারা কিগালি সংশোধনীর আর্টিকেল-৫ এর গ্রæপ-১ সমর্থন করেছে তাদের জন্য ২০২৯ সালের ১ জানুয়ারি অর্থাৎ, উন্নত দেশগুলোর ঠিক ১০ বছর পর বাধ্যবাধকতা শুরু হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিগালি সংশোধনী গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। আর গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ৮১টি দেশ সংশোধনীটি অনুস্বাক্ষর করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ অনুস্বাক্ষর করেছে। অন্য দেশ অনুস্বাক্ষর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনী বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষরের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ/ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়/ কৃষি মন্ত্রণালয়/ সুরক্ষা সেবা বিভাগ/ শিল্প মন্ত্রণালয়/ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়/ পরিবেশ অধিদপ্তর/ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে স্বপক্ষে মতামত পাওয়া যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর আলাদা-আলাদাভাবে অংশীজনদের সঙ্গে সভা করে অনুস্বাক্ষরের পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছে। কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষরের বিষয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুন্দ্রে সন্ত্রাস এবং চুরি করতে গিয়ে কেউ খুন হলে সাজা মৃত্যুদন্ড হবে। আর সাধারণ কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্রে সন্ত্রাস করলে তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং দস্যুতা করে নেয়া সম্পদ ফরফিট (বাজেয়াপ্ত) করে দেয়া হবে। কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্রে সন্ত্রাস বা সংঘটনের চেষ্টা বা সহায়তা করলে অনূর্ধ্ব ১৪ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। আর কেউ সহযোগিতা করলেও ১৪ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। দেশি-বিদেশি সবার জন্য এই আইন কার্যকর হবে। রাষ্ট্রীয় জলসীমায় চলাকালীন কোনো বিদেশি জাহাজে কোনো অপরাধ হলে অপরাধী গ্রেফতার ও দন্ত পরিচালনায় একই বিধান কার্যকর হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড নেশন্স কনভেনশন অন দ্য ল’ অব দ্য সী শীর্ষক’ কনভেনশন গৃহীত হলে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল’ অব দ্য সী’ কর্তৃক প্রদত্ত হয় এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্র সীমা নির্ধারণে ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী উপক‚লীয় দেশের মধ্যকার সমুদ্র সীমা নির্ধারণ হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য লেজিসলেটিভ বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রসীমা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌ চলাচলের নিরাপত্তাবিরোধী অবৈধ কর্মকান্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, দূষণ করা ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতি, বু ইকোনমিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইনের খসড়া প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সুনীল অর্থনীতির উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই অনুসন্ধান ও আহরণ হতে সর্বোচ্চ উপযোগিতা প্রাপ্তির পূর্ব শর্ত হলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সঠিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণ। আইন প্রণীত হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় ও জলসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জলসদ্যুতা, সমুদ্র সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ এবং নৌ চলাচল নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
দুর্যোগ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) সংক্রান্ত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বইটি হস্তান্তর করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা মো. এনামুর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ