Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ে জমি লিজ নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প

রাজধানীতে জেএমবির ৩ সদস্য আটক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের জমি লিজ নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেখানে প্রথমে মাদরাসা এবং পরবর্তীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। গতকাল সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এর আগে গত রোববার রাতে রাজধানীর ভাটারার সাইদনগর এলাকা থেকে জেএমবির আমিরসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলোÑ জেএমবির আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আব্দুল হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর। তাদের কাছ থেকে ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেলজাতীয় বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট দীর্ঘদিন ধরেই নব্য জেএমবি ও পুরোনো জেএমবির ওপর বিশেষ নজর অব্যাহত রেখেছিল। তারই একপর্যায়ে গত রোববার রাতে ভাটারার সাইদনগর এলাকা থেকে তিন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে আবু রায়হান পুরোনো গেøাবাল জামাআতুল মুজাহিদীনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অস্থায়ী আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল। পাহাড়ে মানুষের যাতায়াত কম থাকায় জঙ্গিরা ওই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে কার মাধ্যমে কিভাবে জমি লিজ নিয়েছিল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান মনিরুল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক তিনজন জানিয়েছে, আবু রায়হান টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায় লেখাপড়া করা অবস্থায় ২০১০ সালে মৃত তালহা এবং মৃত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা এবং বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়ী (দাওয়াতী) শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে শুরু করে। ওই সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এক ব্যাগ কমান্ড ছুরি আবু রায়হানকে দেয়।
২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতার আবু রায়হান জঙ্গি খোকনের চাচাতো শালিকে বিয়ে করে। আবু রায়হান ওই ছুরির ব্যাগ কক্সবাজারের নুরুল হাকিমের কাছে দেয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নুরুল হাকি সংগঠনের আরো সদস্যসহ ৩০টি কমান্ডো ছুরি ও বিস্ফোরকসহ আটক হয়। আটক হাবীবুর রহমান জেএমবির ইসাবা গ্রæপের প্রধান হিসেবে সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করত। সে গত বছরের ২৯ মার্চ দক্ষিণখানের পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকাতির সময় হাতেনাতে আটক হয়। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পুনরায় জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আবু রায়হান হচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পলাতক জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। সালেহী নিজেকে গেøাবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করে। তখন জেএমবির আমির ছিল খোরশেদ আলম। খোরশেদ নিহত হওয়ার পর ২০১৭ সালে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়। আটক আবু রায়হান চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমানকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলো। এ সময় তাদের আটক করা হয়। হাবিবুরের বাসা ঢাকাতেই। আর রাজিবের বাড়ি নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকায়। তার বাড়িতে নতুন জঙ্গি সদস্যরা সহজেই মিলিত হতো। তিনজন মূলত ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের আত্মীয় মাওলানা রাকীব নামে এক ব্যক্তি বিদেশে থেকে এদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।
আটক জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল জানিয়ে মনিরুল বলেন, তাদের নেটওয়ার্ক শুরুতেই ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরা নব্য জেএমবির সাথে ইতিপূর্বে যোগাযোগ করেছে কি না তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, পুলিশের ওপর নব্য জেএমবির যে গ্রæপটি হামলা চালিয়েছিল, তার প্রত্যেকটিতে ৫ জনের একটি জঙ্গি সেল ছিল। তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করা গেছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি দু’জন এখন দৌঁড়ের ওপর আছে। তাদের ছবিও পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের সেই সেল ভেঙে দেয়া হয়েছে। আর নতুন করে যাতে সেল গঠন হতে না পারে সে জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ