Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনার শীতল অভ্যর্থনা সমালোচিত দিল্লি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গত শুক্রবার কলকাতায় যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তাকে স্বাগত জানাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কি না বাঁধাধরা ক‚টনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে কোন কিছু জানাতে রাজি হয়নি সাউথ বøক। এ ঘটনার সমালোচনা করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোও। পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক প্রসিদ্ধ বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার’ গতকাল রোববার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম বারের সাংসদ তথা নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। হাসিনার সফরসঙ্গী নেতারা ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছিলেন, এটা ‘যেচে অপমান নেওয়া’। প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা কোনও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন এটাই ছিল প্রত্যাশা। প্রথম বার জিতে আসা কোনও প্রতিমন্ত্রী নন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই ছিল এর জন্য দায়ি। এক দিকে তারা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহেরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদি সরকার, তা নিয়ে চুপ থেকেছেন সাউথ বøকের কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও বেড়ে গেল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই ক‚টনীতিকদের।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের ভ‚মিকা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় শেখ হাসিনা প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে আসাম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লির এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য না করলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা পরোক্ষভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।

চীনপন্থী গোতাবায়া রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চীনের কাছে ঋণের ফাঁসে কার্যত বন্দি কলম্বো তাদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তুলে দিয়েছে বেইজিংয়ের হাতে। ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। এ বার গোতাবায়ার আমলে সেই কাজ আরও সহজ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ডোকলাম পরবর্তী ভুটান এবং চীনপন্থী সরকার হওয়ার পরে নেপালও খোলাখুলি ভাবেই বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য বড় অঙ্কের পর্যটন শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান। অন্য দিকে চীনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ায় নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নেপালের। ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমুন্ডুর সরে দাঁড়ানো, চীনের সঙ্গে পণ্য পরিবহণ চুক্তি করা, বেইজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ‘সিপিসি’তে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহার অবাক করেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।



 

Show all comments
  • Saifur Rahman ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরা আপনার- আমার বন্ধু না..এরা আমাদের রক্ত চোষক..এদের দিয়েই যাবেন কিন্তু অপমান আর সীমান্তে পঁচা লাশ ছাড়া কিছুই পাবেননা..সময় থাকতে দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসুন. দেশের মানুষের মতামতের গুরুত্ত দিন. দুনিয়ায়ও ভালো পাবেন.. পরকালেও শান্তি পাবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Sarkar ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
    যতটুকু করেছে আমার হিসেবে সেটাই অনেক বেশি
    Total Reply(0) Reply
  • AB Ahad Khan ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
    Er pore o amader lojja hobe na
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Ahmmed ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
    যার কতটুকু প্রাপ্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • Faruk Ahmed ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
    চেতনা এখন দন্ডায়মান নয়, চেতনা আজ চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে। চেতনা বাজরাও চৈতন্য হারিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ali Akbar ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
    আমরা স্বাধীন জাতি হিসাবে খুব লজ্জিত হয়েছি এই অপমানে ! একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নিয়ে এই তামাশা সত্যিই আমাদেরকে অপমানিত করা । শুধু এই দিন নয় ইতিপূর্বেই এই ধরনের আচরন করা হয়েছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sk Farid Fatik ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
    অপমান শুরু শেষ দেখার অপেক্ষা করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • HABIB ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৭ এএম says : 0
    Ekhon Awamlegue ki bole dekha jak ?
    Total Reply(0) Reply
  • ATIQUR Rahman ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ৯:৪৬ পিএম says : 0
    ভোট বিহীন সরকার এর থেকে আর কি আশা করতে পারে। বাংলাদেশ এর সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে, নেত্রী ভুলে গিয়েছেন মায়ের ইজ্জত গেলে গায়ের ও ইজ্জত যায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ