Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক

রুয়েট নিয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখ

মিজানুর রহমান রানা, রুয়েট থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

শিক্ষা নগরী রাজশাহীর এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায় (রুয়েট)। ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক স্লোগানকে ধারণ করে পঞ্চান্ন বছর ধরে নিরন্তর জ্ঞানের আলো বিতরণ করে চলেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের পাশেই সবুজ আ¤্রকানন ঘেরা চত্বর। প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় থেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়।
এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রুয়েট মাত্র ১২২ জন শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করলেও সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠিানটি ব্যাপক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই বিশ^বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বাড়তি যোগ্যতা অর্জনে কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিজের জন্য প্রায় ৩৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ১৫২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট ভবন, ল্যাবেরেটরি, ওয়ার্কশপ, লাইব্রেরি, জিমনেশিয়াম, কেন্দ্রীয় সাধারণ কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা অবস্থিত রয়েছে।

এই বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের ‘ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত বছরের ৩০ জুলাই রুয়েটের ভিসি হিসেবে যোগদান করে দক্ষতার সাথে ক্যাম্পাসকে পরিচালিত করছেন। তিনি সম্প্রতি ক্যাম্পাসের সাবির্ক পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা বলেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ ইনকিলাবকে বলেন, ‘ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক’ রাজশাহী আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেক। আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীজুড়ে বিচরণ করছেন। বিশে^র বিখ্যাত অনেক বিশ^বিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে শিক্ষাদান করছেন। এছাড়াও রুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে অনেক বড় বড় ভবন তৈরির নকশা খ্যাতি অর্জন ছাড়াও গবেষক হিসেবে তারা ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করছেন। দেশের জন্য অবদান রাখছেন।
ভিসি বলেন, তবে স্বল্প বাজেটেও রুয়েটে গবেষণা করার অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের যথেষ্ট দক্ষ ও যোগ্য গবেষক আছেন কিন্তু তারা বাজেট স্বল্পতার কারণে সঠিকভাবে গবেষণায় চালাতে পারছেন না। আমাদের গবেষকদের গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে আমরা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্রয় করছি। অথচ আমাদের গবেষকদের সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য সরকার যদি গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দেয়, তবে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খলার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সর্বোচ্চভাবে তা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান অনেক ভালো, তারপরও শিক্ষার গুণগতমান কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বর্তমান প্রশাসন সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে। গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে কীভাবে এ বিশ^বিদ্যালয়কে কাজে লাগানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছেন ।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সঙ্কট রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রুয়েটের জন্য ৩৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দিয়েছেন। এদিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি ১০ তলা আবাসিক হল নির্মাণ এবং দুই তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওপর আরও কয়েকতলা বৃদ্ধির কাজ চলমান থাকবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল স¤প্রসারণসহ নতুন দুইটি হল নির্মাণ হলে আবাসন সঙ্কট অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

ড. শেখ বলেন, আমাদের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণে কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের জন্য প্রায় ৩৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমিতি আছে যেগুলো তাদের কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সেশনজটের বিষয়ে বলেন, আমাদের এই বিশ^বিদ্যালয়ে সেশনজট অনেক কম। বিভিন্ন বিভাগে ৪ থেকে ৫ মাসের সেশনজট আছে। তবে সেশনজট দূর করতে ফ্যাকাল্টিভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।

ভিসি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫৭ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। যারা যোগ্য এবং মেধাবী তারাই নিয়োগ পেয়েছেন। চার পয়েন্টের মধ্যে রেজাল্ট ৩ দশমিক ৭০ এর কম হলে আমাদের এখানে কারও আবেদন করারই সুযোগ নেই। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, সারা জীবন শিক্ষকতা করেছি, এখন ভিসির দায়িত্ব পালন করছি। তাই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক বেশি। সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দিয়েছি।

আলাপচারিতায় ভিসি জানান, আন্তর্জাতিক কনফারেন্সগুলো যেন নিয়মিত হয় সেটা নিশ্চিত করা হবে। ২০১২ সালের পর এখান থেকে কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয়নি, সেটা আমি শুরু করেছি। আপনি জেনে খুশি হবেন, অস্ট্রেলিয়ার একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। অচিরেই আমরা এমন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি যে, শিক্ষার্থীরা রুয়েটে দুই বছর এবং অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর পড়াশোনা করে অস্ট্রেলিয়ারই সার্টিফিকেট পাবে। রুয়েটের পড়াশোনার মান দেখে তারাই আমাদের এ প্রস্তাব দিয়েছে।

সর্বোপরি সমাজের নৈতিক অধঃপতন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নৈতিকতা বিকাশ ছাড়াও শিক্ষকদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পাঠদানের জন্য তিনি গুরুত্বরোপ করেন। তিনি বলেন, একাডেমিক শিক্ষার বাইরে নৈতিকতার বিকাশসহ সব জ্ঞানই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন। এবং তাদের সেই শিক্ষা দেয়া হয়। তবে এই প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ভালো দিক গ্রহণ ও খারাপ দিক বর্জন করার সাথে সাথে আরও পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ