পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) চুড়ান্ত করে আসামের মুসলমান নাগরিকদের ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ আখ্যা দিয়ে বাংলাভাষীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। আটক শত শত বাংলাভাষীদের বিভিন্ন সীমান্তপথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। কয়েক দফায় তিন শতাধিক বাংলাভাষীকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাভাষীদের ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় ক্রমাগতভাবে বাড়ছে সীমান্তে উত্তেজনা।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) আতঙ্কে চলতি মাসের ১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২১৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিজিবি প্রতিদিন যতজনকে আটক করেছে, অনুপ্রবেশ করছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
স্থানীয়দের দাবি, মহেশপুর উপজেলার জুলুলী, খোসালপুর, বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর ও শ্যামকুড় সীমান্ত দিয়ে প্রতদিন অবৈধভাবে ভারত থেকে রাতের অন্ধকারে শত শত নারী-পুরুষ প্রবেশ করছেন। এতে সহায়তা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
সীমান্ত সূত্র জানায়, গতকাল শনিবারও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জন বাংলাভাষী নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। এছাড়া বেনাপোল, মহেশপুর, জীবননগর সীমান্তের ওপারে বিএসএফ আরো কিছু বাংলাভাষী নারী, পুরুষ ও শিশুকে জড়ো করেছে বাংলাদেশে পুশ ইনের জন্য। সূত্র জানায়, সীমান্তে বাংলাভাষীদের প্রতি বিএসএফ অমানবিক আচরণ করছে। শীতের রাতে সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠেলে দিতে গিয়ে তাদের ঝোপজঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে ঘন্টার পর ঘণ্টা রাখা হচ্ছে।
ওপারের সূত্র জানায়, ব্যাঙ্গালুরের একটি হোমে আটক ছিলেন ৫৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বনগাঁ সীমান্তপথে বাংলাদেশে পুশ ইনের জন্য আনা হচ্ছে। আনান্দবাজার পত্রিকাও এমন খবর প্রকাশ করে। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তাদের ট্রেনে আনা হচ্ছে। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, ব্যাঙ্গালুর পুলিশের দাবি করেছে আটককৃতদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদেও তারা নিজেদের বাংলাদেশি বলে স্বীকার করেন এবং কোনো কাগজপত্র ছাড়াই তারা ভারতে প্রবেশ করে। ওপারের সূত্র বলেছে, ৫৭ জন নয়, ২৭ জনের একটি দলকে সীমান্তে আনা হচ্ছে পুশ ইনের জন্য।
আনান্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএসএফ ঠিক করছে কোন সীমান্ত দিয়ে পার করা হবে। আমরা এ বিষয়ে আর কিছু জানি না।’ তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, বনগাঁ সীমান্ত দিয়েই ওই ৫৭ জনকে সীমান্তের অন্য পাড়ে পাঠানো হবে। রাজ্য পুলিশ কর্তারা স্বীকার করেন, সা¤প্রতিক অতীতে এত বড় সংখ্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের এ ভাবে এ রাজ্য দিয়ে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে বলে তারা মনে করতে পারেন না।
গোটা ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর। তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ ঘটনা। কর্নাটক সরকার দেশের আইন-সংবিধান সব লঙ্ঘন করেছে। কাউকে এ ভাবে পুশব্যাক করা যায় নাকি! কোনও মামলা নেই ওদের বিরুদ্ধে। পুলিশ কী করে নিশ্চিন্ত হল ওরা বাংলাদেশি? ওরা পশ্চিমবাংলার বাঙালিও হতে পারে। পুলিশকে বাংলাদেশি নির্ধারণের ক্ষমতা কে দিল? কোন আইনে? পুশব্যাকের অর্ডার কে দিল? কোর্টের আদেশ ছাড়া পুশব্যাক কখনওই করা যায় না। কর্নাটক সরকার ফেরত পাঠাচ্ছে, তাতে সাহায্য করছে বাংলার সরকার। আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দাবি করছি, এই পুশব্যাকবন্ধ করুক। বাংলার সবাইকে আবেদন করছি, এর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য।’ ওই পত্রিকাটি জানায়।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৯ তারিখ ওপার থেকে ঠেলে পাঠানো ৪৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বিজিবি আটক করে থানায় দেয়। এরপর আর ওপার থেকে পাঠানো কাউকে থানায় দেওয়া হয়নি। যশোর ৪৯ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল সেলিম রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে গতকাল বলেন, নতুন করে কাউকে বিএসএফ ঠেলে পাঠায়নি। সীমান্তে অনুপ্রবেশরোধে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
আমাদের ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যহত রয়েছে। শনিবার ভোর ৫টার দিকে ২১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তাদেরকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ঠেলে পাঠানো লোকজন জানিয়েছেন, তারা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিল। এখন ভারতের বিভিন্ন বাহিনী তাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের কাজের মুজুরী দিচ্ছে না। বাংলাদেশে না আসলে নানা হুমকী ধামকি দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে এসেও তাদেরকে বিভিন্ন দালালের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে।
সীমান্তবর্তি এলাকার শ্যামকুড়, যাদবপুর, বাশবাড়িয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, প্রশাসনের নির্দ্দেশে তারা সীমান্তের গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করে পাহারা দিচ্ছেন। তার পরও ওপারের বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে।। মহেশপুর ৫৮ উপ-অধিনায়ক লে.কর্ণেল কামরুল হাসান জানান, বিজিবি’র নিয়মিত টহল দেয়ার সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর বিওপি’র ১০০ থেকে দেড়শ’ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে নিশ্চিন্তপুর কালভার্টের পাশ থেকে শনিবার ভোর ৫টার দিকে ১৬ এবং জলুলি বিওপি’র মগদাশপুর মাঠ থেকে ৫জন সহ মোট ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বিজিবি জানতে পেরেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল। এখন বাংলাদেশে ফেরত আসছে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১১(গ) ধারায় আটককৃতদেরকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিএসএফএর ঠেলে পাঠানো বেনাপোলে ৩ দফায় ৬২ জন, মহেশপুরে ৪ দফায় ২১৪ জন, জীবননগরে ১৭ জন বাংলাভাষীকে আটক করে ৫৮ বিজিবি, ৪৯ বিজিবি ও ২১ বিজিবি। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।