পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সার্ভার না কিনেই ‘খরচ’ দেখানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ‘অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প’-এর শত কোটি টাকা। তবে কেনাকাটার কাগজপত্রে ঠিকঠাক রাখা হয়েছে সবকিছু। দারুণ দক্ষতার সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে প্রকল্পের অর্থ ব্যয়। তবে ভয়াবহ এই পুকুরচুরির ঘটনার আলামত মিলেছে অন্য একটি দুর্নীতির তদন্তকালে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প ‘ই. সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ৭০ কোটি টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ তদন্ত করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। পুরো প্রকল্পটি নিয়ে পৃথক একটি তদন্ত চালাচ্ছে একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।
দৈনিক ইনকিলাবে প্রকল্পের নানা দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরার পর ঘটনা তদন্তে মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ডাক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ডাক) মো. শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব যুগ্ম-সচিব মো. মুসলেহউদ্দিন। এ কমিটি গত সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে প্রকল্পের আওতায় কেনা পয়েন্ট অব সেল বা পিওএস-পস মেশিনের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও তা বিকল অবস্থায় পড়ে আছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সোলার প্যানেল, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন (বায়োমেট্টিক), ইউপিএস মেশিন পাওয়া যায় বিকল অবস্থায়। কোনো কোনো মেশিনের প্যাকেটও খোলা হয়নি।
প্রকল্পের আওতায় কেনা রাবার কাঠের চেয়ার-টেবিলও খুঁজে পাওয়া যায়নি অধিকাংশ পোস্টঅফিসে। তবে এ কমিটি তদন্তকালে আরেকটি পুকুরচুরির সন্ধান পেয়েছে বলে জানা গেছে। সার্ভার ক্রয় দেখিয়ে আরো অন্তত ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের আলামতও মিলেছে। পোস্ট অফিসগুলোতে কোনো সার্ভার দেয়া হয়েছে বলে জানেন না পোস্টমাস্টারগণ। বিভাগীয় পোস্টমাস্টার জেনারেলগণও এমন কোনো সার্ভার তারা পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করতে পারেননি। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়সারা অনুসন্ধানে বিষয়টি বেমালুম চেপে যাওয়া হয়। দুদকের অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিব যিনি কিনা পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনÑ তিনি বৃহৎ এই আত্মসাতের অনুসন্ধান থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি পেতে সহায়তা করেছেন মর্মে জানা গেছে। দুদক দায়মুক্তি দিলেও মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে প্রকল্পটির ভয়াবহ সব দুর্নীতির তথ্য।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ই.সেন্টার ফর রুলাল কমিউনিটি প্রকল্প’-এর আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলা ডাকঘর এবং ৬৫টি জেলা ডাকঘরের জন্য একটি করে সার্ভার কেনার কথা ছিল। পরবর্তীতে কোনো সার্ভারই কেনা হয়নি। তদন্ত টিম বিভাগীয় পোস্টমাস্টার জেনারেলদের (ডিপিএমজি) মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা এবং জেলা পোস্ট অফিসে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৩০টির মতো সার্ভার কেনার কথা। ই.সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের আওতায় ১১০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে এ কেনাকাটায়।
ডাক বিভাগ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) এবং আইটিসিএল সমন্বিতভাবে সরকারি ক্রয়নীতি (পিপিআর) ঠিক রেখেই সম্পন্ন করা হয় কথিত এই ‘সার্ভার ক্রয়’। ৫৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩০ জুন। সাবেক ডাক কর্মকর্তাদের মতে, এটি হচ্ছে, ডাক বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ একটি প্রকল্প। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থ লোপাট এবং অপচয় ছাড়া এটি আর কিছুই ছিল না। অথচ প্রকল্পের অর্থ প্রাক্কলনে বলা হয়, ‘রূপকল্প ২০২১ বাস্তবে রূপায়ণ’-এর ডাক সেবা অংশে উল্লেখ করা হয়, ডাক সেবা উন্নয়ন অংশে বিধৃত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ডাক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সঙ্গতি বিধান দেশের সকল ডাকঘরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, গ্রাহক-উপযোগী পণ্য ও সেবা প্রদান, স্বল্প-সুবিধাযুক্ত এলাকাগুলোতে ডাকসেবার বিস্তার, উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে শহর ও গ্রামের মধ্যকার অসঙ্গতি দূরীকরণে ডাক বিভাগ পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
ডাক অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ৮৫০০টি ডাকঘরকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং পোস্ট ই- সেন্টার হতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাসমূহ প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। দেশের ডাকঘরগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ইমেজ বৃদ্ধিতে একাধিক উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর একটি হলো, ডাকঘরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ।
এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ডাকঘরই ‘পোস্ট ই-সেন্টারে’ পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তার সব ধরনের ভাতা গ্রামীণ ডাকঘর ও পোস্ট ই- সেন্টারের মাধ্যমে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রকল্প বাস্তবায়নে। এর মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সহযোগিতায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাইলট ভিত্তিতে পোস্টাল ক্যাশকার্ডে বিতরণেরও কথা ছিল এই পোস্ট ই সেন্টারের মাধ্যমে। তবে প্রকল্প সমাপ্তির পর দেখা যায়, পোস্ট ই.সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনায় কেনা যন্ত্রপাতি সব অকেজো হয়ে পড়ে আছে। উল্লিখিত এসব সেবা পোস্ট ই. সেন্টারের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় এবং আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মহাপরিচালক (প্রকল্প পরিচালক) সুধাংশু শেখর ভদ্রর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে তিনি আগ্রহী নন বলে তার কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। ডাক বিভাগের দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মো. মুসলেহ উদ্দিন টেলিফোনে জানান, ইতোমধ্যেই প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কী রয়েছে তা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, এই বিভাগে দুর্নীতি জিরো-টলারেন্স। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।