পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, যে মুক্তির জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম, তা কতদ‚র? ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে মাওলানা ভাসানী ঘোষণা করেছিলেন, পিঞ্জির ভেঙেছি দিল্লির গোলামি করবার জন্য নয়।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মওলানা ভাসানী ও আমাদের সময়ের রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সেদিন ভাসানী বলেছিলেন, আজকে ভিনদেশী রাষ্ট্রের হুকুমে আমাদের নীতি নির্ধারণ হয়।
তিনি বলেন নরেদ্র মোদী যখন শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষের আয়োজনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হন, তখন আমরা কোন জায়গায় থাকি। যেখানে অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আমরা বুঝি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসমা¤প্রদায়িক চেতনার মানুষ, তার সাথে আমাদের রাজনীতির যত দূরত্বই থাকুক। মওলানা ভাসানী সত্যি কথা বলা শিখিয়েছেন, সেই সত্যের শক্তির ওপর ভরসা করেই আমাদের দেশকে মুক্ত করার রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতিতে গান্ধীর ধারা ছিল অহিংস, মওলানার রাজনীতি ছিলো বলপ্রয়োগের। তাকে টাইম পত্রিকা প্রফেট অব ভায়োলেন্স আখ্যা দিয়েছিল উনসত্তুরের গণঅভ্য‚ত্থানের সময়ে, তাকে নেতিবাচকভাবে উত্থাপন করার জন্য। কিন্তু মওলানা যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন, তা কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারবার নয়, তা মুক্তির আলো জ্বেলেছিল। কাগমারী সম্মেলনে মওলনা সা¤্রাজ্যবাদ ও কৃষকের ওপর নির্যাতনকারী সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহবান জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান ছিল অনকেগুলো জাতির একটা কারাগার, মওলানা সেই কারাগার ভেঙে দেয়ার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই একমাত্র নেতা ছিলেন যিনি ক্যানটনমেন্ট ভেঙে রাজবন্দীদের মুক্ত করে আনবার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই শাসকরা আতঙ্কিত হয়ে জনতার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোন একক ব্যক্তির অবদান নয়। বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে যারা ভ‚মিকা রেখেছেন, সন্দেহাতীতভাবেই মওলানা ভাসানী তাদের মাঝে অন্যতম। ভোটের রাজনীতি বা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়, ভাত-কাপড়ের রাজনীতি দিয়েই তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন। জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করেই তিনি আপোষহীনভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। আজকেও মুক্তি পেতে হলে জনগণের সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করেই মাওলানার রাজনীতিকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
মওলানা ভাসানীর জীবনীকার ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ভাসানীকে আজকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্মরণ করা হয় না। তার ভ‚মিকাকে আড়াল করা হয়। অথচ ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনসহ মুক্তির সংগ্রামের সকল ঘটনায় মওলানা ভাসানী ছিলেন অগ্রনায়ক।
নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কারও জন্য অপেক্ষায় না থেকে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কটে আছে, ভোট নিয়ে সঙ্কটে আছে, সঙ্কটে আছে নিপীড়ন-নির্যাতন নিয়ে। ভাসানীর পথ ধরে মানুষকে ডাক দিতে পারলে মানুষ ঠিকই নেমে আসবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আজকে যখন মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রে কোন ন্য‚নতম জবাবদিহিতা নেই, জাতীয় স্বার্থ প্রতিনিয়ত ভ‚লুণ্ঠিত হচ্ছে তখন ভাসানীর রাজনীতি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ভাসানীর কোন সংকীর্ণতা ছিলো না, সা¤প্রদায়িকতা-উগ্রতা-অন্ধত্ব থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ বহু দিক দিয়ে বিপন্ন। আজকে মাওলানার অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি অনুভ‚ত হচ্ছে, তার মত করে ‘খামোশ’ বলে হুঙ্কার ছাড়বে, এমন মানুষের অভাব অনুভ‚ত হচ্ছে। দেশের মানুষের আজ ভোটের অধিকার নেই, নেই কথা বলবার স্বাধীনতা। জবাবদিহিতাহীন শাসনে নজিরবিহীন সম্পদ আজকে দেশ থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে একের পর এক দেশবিরোধী চুক্তি। পেঁয়াজসঙ্কট বা আবরার হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সব মিলিয়ে আমরা দুঃশাসন আর নিপীড়নের যে ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাচ্ছি, তার থেকে মুক্তির দিশা আমাদের মওলানা ভাসানীর রাজীনীতিতেই খুঁজতে হবে। এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা তুলে দেয়া সংবিধান আজকে আমাদের সকল সঙ্কটের উৎস, মওলানা ভাসানী এই বিষয়ে ১৯৭২ সালে কথা বলেছেন। সুন্দরবনকে রক্ষা কিংবা অর্থনীতির সম‚হ পতন থেকে বাঁচাতে হলে, একই সাথে জবাবদিহিতা আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই জন্য দরকার জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। মাওলানা ভাসানী আমাদের সেই রাজনীতির পথ প্রদর্শন করেছেন। যতই দিন যাবে, মওলানা ভাসানী আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।