পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। গতকাল স্থানীয় সময় ১২টা ৫৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১টা ২৫ মিনিট) ভিভিআইপি গ্যালারিতে রক্ষিত ঘণ্টায় লাগানো রশি ধরে টান দিয়ে প্রথম দিবারাত্রির গোলাপি বলের এই ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ উদ্বোধন করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতায় দুই দেশের এই ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান। এর আগে বিসিসিআই’র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী কলকাতায় দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ খেলা দেখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। নরেন্দ্র মোদি না এলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতার ইডেনে হাজির হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খেলার আগে দুই দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম সেশনের খেলা উপভোগ করেন। ভিভিআইপি গ্যালারির বিশেষ বক্সে শেখ হাসিনার পাশেই বসা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় ইডেন গার্ডেনে শেখ হাসিনাকে দেখা গেছে খুবই সপ্রতিভ, প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়া অনুরাগী, খেলাপ্রেমী। মনপ্রাণ দিয়ে খেলা ভালোবাসেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে সময়-সুযোগ পেলে শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি খেলা দেখতে মাঠে চলে যান। বাংলাদেশ যেখানেই খেলুক না কেন, তিনি দলের খোঁজখবর রাখেন। ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করেন। সাহস ও উদ্যম জোগান।
শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। এসময় পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। গতকাল কলকাতায় -সংগৃহীত" width="850" height="500" />এর আগে প্রধানমন্ত্রী ভারতের ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ভেনু কলকাতার ইডেন গার্ডেনে পৌঁছলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী তাকে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি শচিন তেন্ডুলকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘গোলাপি বল’ দিয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ আয়োজনকে কেন্দ্র করে পুরো ইডেন গার্ডেনকে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। ফেয়ার প্লে প্ল্যাকার্ডবাহী শিশু থেকে শুরু করে স্কোর বোর্ড এমনকি ম্যাচের টস কয়েনটিও গোলাপি বর্ণের ছিল।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারতের এই দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম সেশনের খেলা দেখার পর হোটেলে ফিরে যান। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। তিনি সন্ধ্যায় পুনরায় স্টেডিয়ামে ফিরে আসেন। তিনি প্রথম দিনের ম্যাচের পর ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী রাত ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। ফ্লাইটটি রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইডেনে খেলা দেখার জন্য এক দিনের সফরে কলকাতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই শেষমুহূর্তে আকাশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপারদের হেলিকপ্টার থেকে মাঠে নেমে দুই অধিনায়কের হাতে গোলাপি বল তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। শেখ হাসিনাকে ঘিরে নিরাপত্তাবলয় যেমন ছিল, তেমনি ইডেনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর খেলা দেখার জন্য বিশেষ বক্স তৈরি করা হয়। কলকাতা পুলিশের কমান্ডোরা ঘিরেই ছিল সেই বক্স। আরো ছিল সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা।
শেখ হাসিনা এর আগে গতকাল কলকাতায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান কলকাতার মেয়র এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগর উন্নয়ন এবং পৌরসভা বিষয়ক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, বাংলাদেশে কর্মরত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। সেখান থেকে শেখ হাসিনা সোজা চলে যান দক্ষিণ কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়েই তিনি যান ইডেন গার্ডেনে। উদ্বোধনের পর দুই দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন। কিছুক্ষণ খেলা দেখে হোটেলে ফিরে কয়েকটি বৈঠক করেন।
সন্ধ্যায় ইডেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রখ্যাত গায়িকা রুনা লায়লা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের (বাংলাদেশ) পাশে ছিল। যুদ্ধের সময় এই কলকাতাই বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল, তা আমরা কোনোদিন ভুলিনি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীর অবদান চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। গতকাল শুক্রবার ইডেনে টেস্ট খেলা উদ্বোধনের পর কলকাতার পাঁচ তারকা হোটেল তাজ বেঙ্গলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি সৌরভ গাঙ্গুলির দাওয়াতে কলকাতা এসেছি। দুই দেশের মধ্যে গোলাপি বলে প্রথম খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিয়ে কলকাতা এসেছি। কলকাতায় দিন রাতের যে গোলাপি বলে খেলা হচ্ছে মূলত সেই খেলা দেখতেই এসেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ’৭১ সালে যে মহান মুক্তিযুদ্ধ করি; সেই মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারতবাসীর সেই অবদান আমরা চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। তাই এদেশের (ভারত) মানুষের প্রতি সবসময় আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমি যখনই এদেশে আসি আমার খুবই ভালো লাগে। তিনি আরো বলেন, এই যে আমরা দুটো প্রতিবেশী দেশ, সবসময় আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। এই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সবসময় সম্পর্ক বজায় থাকুক সেটাই আমরা চাই।
ইডেনের ঐতিহাসিক টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলায় আজ ভালো করেনি। ইনশাল্লাহ, একদিন ভালো করবে।
বৈঠক শেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। বৈঠকের বিষয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, এটা ছিলো সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ। দুই বাংলার সঙ্গে আমাদের রিলেশন বরাবরই ভালো। ভারত-বাংলাদেশের রিলেশন বরাবরই ভালো। দুই দেশের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এসব ছিল একেবারে ঘরোয়া আলোচনা। শেখ হাসিনাকে আমি আবার এখানে আসতে বলেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বরাবর যেন এভাবেই বজায় থাকে সে প্রত্যাশা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।