পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যদিও নরেন্দ্র মোদির অধীনে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরেছে, কিন্তু এর শুরু হয়েছিল কয়েক দশক আগেই। ১৯৪৭ সালে ভারত যখন ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, আধুনিক ভারতের স্থপতি জওহরলাল নেহেরু এমন একটি সংবিধান তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা ‘চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, ধর্ম বিশ্বাস এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা’ এবং ‘মর্যাদার সমতা’ রক্ষা করবে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মুক্ত সংবাদ ম্যাগাজিন হার্ডনিউজের সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর সিএনএনকে বলেন ‘নেহেরু এই বিষয়টি সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন যে ভারতের সমাজ ব্যবস্থা বিচিত্র এবং একমাত্র যে জিনিসটি সবার অধিকার রক্ষা করতে পারে তা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা।’ এর পরের বছরগুলিতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি আরও বিমূর্ত হয়ে উঠতে শুরু করে। এমনকি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নেহেরুর নিজের দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসও (আইএনসি) ভোটারদের সমর্থন পেতে ধর্মীয় বিভাজন শুরু করে।
১৯৮০ এর দশকে নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী এবং বড় নাতি রাজীব গান্ধী দুজনেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তার ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে, ইন্দিরা গান্ধীও কর্তৃত্ববাদী নীতিমালা চাপিয়েছিলেন যা ভোটারদের মধ্যে পাল্টা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং হিন্দু-জাতীয়তাবাদী বিজেপির পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছিল। অযোধ্যার ইস্যুটি ছিল বিজেপি’র জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ক্ষেত্র অর্জনের প্রথম ধাপ। এই বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি নিয়ে বহুকাল ধরে মতপার্থক্য ছিল যা কেবল স্থানীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল, তবে বিজেপি চতুরতার সাথে জায়গাটি নিয়ে প্রচারণা শুরু করে ও বিতর্ক আরো বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে, উত্তর প্রদেশের ১৯৯১ সালের রাজ্য নির্বাচনের অর্ধেক আসন তারা সুরক্ষিত করতে সমর্থ হয়।
সে সময়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিজেপি’র বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজন বাড়িয়ে তোলা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তোলার অভিযোগ করেছিলেন। একই অভিযোগ এখনও মোদির দলের বিরুদ্ধে নিয়মিত উঠছে। ১৯৯২ সালে, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপির জয়ের এক বছর পরে, ডানপন্থী হিন্দু জনতা অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়েছিল, দেশব্যাপী দাঙ্গা শুরু করেছিল, যার ফলে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। এটি ছিল ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ঘটা নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িক সহিংসতারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কারও কারও কাছে এটি এমন একটি মুহুর্ত যা ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তিত হয়েছিল। সাংবাদিক সঞ্জয় কাপুর স্মৃতিচারণ করেছিলেন যে, তার কয়েকজন সহকর্মী কীভাবে মসজিদ ধ্বংস হওয়া এবং তার পরবর্তী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার শেষ পরিণতি দেখেছিলেন। ২০০০ সালে বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির পরে, ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেস সমর্থন হারানোর মাধ্যমে বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার দ্বার উন্মুক্ত হয়।
২০১৪ সালে, মোদি এবং বিজেপি জাতীয় নির্বাচনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে, ৩০ বছরের মধ্যে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী প্রথম দল হয়ে উঠে। এটি ছিল ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের শুরু, ব্রেক্সিট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় আসা ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ এর মতো জাতীয়তাবাদি প্রচারণার ভারতেই আগে শুরু হয়।
যারা প্রতিশ্রুতি এবং রাজনৈতিক স্বার্থ দেখেতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য মোদি অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ও ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের সপ্ন তুলে ধরেছিলেন। তবে ভারতের এই নতুন নেতা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদেরও প্রচার শুরু করেন।
মোদির প্রথম মেয়াদে, গরু জবাই বা পাচারে অভিযোগে হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠী কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করেছিল - তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল মুসলমান। গরুকে বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী ‘পবিত্র’ বলে বিবেচনা করে। সমালোচকরা বলেছেন, দিল্লিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের উপস্থিতি কট্টরপন্থী সমর্থকদের মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস কাজ করতে উৎসাহিত করেছিল। যদিও, বিজেপি এমন অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।