Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষকদের কাছ থেকে ৬লাখ টন ধান কেনা হবে : কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে চলতি বছরের আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার ৬ লাখ টন ধান কিনবে। ধান কেনার ক্ষেত্রে আমরা দরিদ্র কৃষকদের বেছে নেব। তাদের মধ্যে লটারি হবে। ফলে রাজনৈতিক চাপ থাকবে না।
গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী সপ্তম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের চাল কেনার ঘোষণায় হয়তো ধানের দাম ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে। এটা কৃষকের জন্য সুখবর। দাম বাড়া বা কমা নিয়ে মন্ত্রণালয় সব সময় উভয় সংকটে থাকে। কারণ দাম কমলেও সমালোচনার শিকার হতে হয়। আবার বাড়লেও সে দায় আমাদের ওপর চাপে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংরক্ষণের জায়গা সংকটের অভাবে গত বছর ইচ্ছা থাকার পরও কৃষকদের কাছ থেকে বেশি ধান কেনা সম্ভব হয়নি। তবে এবার ৬ লাখ টন ধান আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা সময় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি ছিল। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে খাদ্য আমদানি করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি করেছে। প্রধান খাদ্য চালের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে আমাদের সমস্যা হলো উৎপাদন হলেও বিক্রি করতে না পারা। আজও উদ্বৃত্ত ধান নিয়ে বিপাকে পড়ছে কৃষক।
মন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকার পরও কয়েক দিন ধরে চালের দাম বেড়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। গত এক সপ্তাহে মানসম্মত চালের দাম কেজিপ্রতি চার-পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় চাষের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। এছাড়া অন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জের নাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। গত বছর দেশে ৪ মিলিয়ন টন আলু উদ্বৃত্ত ছিল। পণ্যের সুলভ মূল্য পেতে উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে সরকার কাজ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে।
তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের রফতানি বর্তমানে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনকে (বাপা) ধন্যবাদ দেন তিনি।
বিশেষ করে বাপার প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. রাজ্জাক। দেশে-বিদেশে আমজাদ খান চৌধুরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএলের নানা পণ্যের বিকাশেও সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, বাংলাদেশ এখন ১৪৪টি দেশে কৃষিপণ্য রফতানি করে। অ্যাগ্রো খাতে যেন কোনো কালি না লাগে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি করা গুঁড়ো হলুদে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে, যা ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো, আমরা যাতে নিরাপদ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি, এ অঙ্গীকার হোক সবার।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রবার্ট ডগলাস সিম্পসন বলেন, বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য ডায়নামিক ও শক্তিশালী খাত। এ দেশের বেসরকারি খাত খুব ভালো করছে। অ্যাগ্রোতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পণ্য তৈরি করতে হবে। মান নিশ্চিত করলে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্যে রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিশ্বদীপ দে, ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জিন মেরিন সুহ, সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন এসিআই অ্যাগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারি, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) প্রেসিডেন্ট আ ফ ম ফখরুল ইসলাম মুনশি। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাপার জেনারেল সেক্রেটারি ইকতাদুল হক, মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ