Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা

১০ শতাংশ উৎসে কর হার বৃদ্ধি বড় কারণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কমেছে ১৮৫ শতাংশ : তিন মাসে নিট বিক্রি ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা


সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটার টান। ব্যাংকবিমুখ সঞ্চয়কারীদের ভিড় ঠেকাতে সরকারের নানা পদক্ষেপ, মুনাফা কমায় নিরাপদ এ বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮৫ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টম্বর সময়ে নিট সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব বিভিন্ন কড়াকড়ির ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কেেমছ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৪২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ৭ হাজার ৭৫৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর ৩ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে মোট ৬ হাজার ১১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এই খরচে সুদ বাবদ চলে গেছে ২ হাজার ৬৭৭ টাকা। এ হিসাবে আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ৯৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে দ্বিতীয় মাস আগস্টে মোট ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। এই খরচে সুদ বাবদ চলে গেছে ২ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ হাজার টাকা। এ হিসাবে আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তার আগের মাস জুলাইয়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয় ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। সুদ বাবদ খরচ হয় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

এদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রাায় দ্বিগুণ ঋণ নেয়। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হচ্ছিল। বিকল্প অর্থায়নের তেমন কোনো উপায় না থাকায় সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক আমানতের সুদহার কম ও পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছিলেন। কারণ, এখানে সুদহার ৯ থেকে ১১ শতাংশ। বিভিন্ন নাম দেখিয়ে অনেকে এখানে বিনিয়োগ করে। কিন্তু করের হার বৃদ্ধির কারণে এখন কম মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া টিআইএন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

 



 

Show all comments
  • Tajul Islam ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
    bisoy ti nea Authority'r uchit vaba
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ