Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বেনাপোলে ১৭ কেজি স্বর্ণ চুরি রহস্য ১১ দিনেও অজানা

বেনাপোল অফিস | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বেনাপোল কাস্টম হাউসের ভোল্ট ভেঙে ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১৭ কেজি সোনা চুরি যাওয়ার ঘটনার ১১ দিনেও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এমনকি উদ্ধারও করা যায়নি চুরি যাওয়া সোনা। এ বিষয়ে গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিবি ও পিবিআইকে দিয়ে চুরির ঘটনা তদন্ত করার অনুরোধ করেছেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী।

চিঠিতে বলা হয়, পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, সরকারি ছুটি এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলাকালে বেনাপোল কাস্টম হাউসের মূল্যবান শুল্ক গুদামের নিরাপদ ভোল্ট ভেঙে ১৭ কেজি সোনা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। কিন্ত গত ১১ দিনেও সোনা উদ্ধার ও চোর সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (চ:দা) মো: এমদাদুল হক বাদী হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় গত ১১ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ কাস্টমস, পুলিশ , ডিবি, পিবিআই ও র‌্যাবের ইনভেন্ট্রি অনুযায়ী শুল্ক গুদাম থেকে ১৬ দশমিক ৫৮৮ কেজি স্বর্ণ, ১৯ হাজার ২৩০ ভারতীয় রুপি এবং ৩৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা চুরি যায়।
চুরির ঘটনা জানার পরপরই ভোল্টের গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সর্দারকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যকে অবহিত করা হয়। বন্ধের সময় কর্মরত ৪ (চার) জন সিপাইকেও দায়িত্ব অবহেলার জন্য তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ, পিবিআই, গোয়েন্দা, ডিবি, সিআইডি, এনএসআইসহ সকল সংস্থাকে তাৎক্ষণিক সম্পৃক্ত করা হয়। তাদের তদন্ত অদ্যাবধি চলমান রয়েছে।

যুগ্ম কমিশনারের শহীদুল ইসলামের নের্তৃত্বে ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাস্টম হাউস ও চেকপোস্টের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মূল্যবান গুদাম পাহারার জন্য পৃথক সিপাই ও আনসার পদস্থ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, চুরি যাওয়া স্বর্ণের বেশির ভাগই ২০১৭ ও ২০১৮ সালে শুল্ক গুদামে জমা হয়। উক্ত সময়ে ৭ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মূল্যবান গোডাউনের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘতম ১৪ মাস দায়িত্বে ছিলেন এআরও বিশ্বনাথ কুন্ডু। তাকে বদলি করে এআরও রিপন কান্তি ধর ও আবদুল আউয়াল মজুমদারকে মূল্যবান গুদামের দায়িত্ব প্রদান করা হলেও এই দুই কর্মকর্তা দীর্ঘ ৯ মাসেও বিশ্বনাথ কুন্ডুর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে পাননি। পরবর্তীতে এআরও মো. অলি উল্লাহকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। পরে মো. অলি উল্লাহ চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, এআরও মো. শহীদুল ইসলাম মৃধা ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এবং এআরও আর্শাদ হোসাইন ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল্যবান গুদামের দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর হতে দায়িত্বে আছেন এআরও শাহিবুল সরদার ।

চুরির ঘটনায় বন্দর থানা, পুলিশ সূত্রে জানা যায় বহিরাগত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আজিবর রহমান, মো. সুরত আলী, মহব্বত হোসেন, আসাদুজ্জামান, আলাউদ্দিন, সুলতান, আবুল হোসেন, টিপু সুলতান, ইমরান হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি পুলিশ। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে গুদাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। শুল্ক গুদামের নিরাপত্তার দায়িত্বে¡ নিয়োজিত সিপাই এবং আনসার সদস্যদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

যশোর জেলা পুলিশের নের্তৃত্বে স্থানীয় ডিবি, এসবি, সিআইডি ও পিবিআই গত ১১ নভেম্বর থেকে থেকে লাগাতার তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে সন্দেহজনক কর্মচারী-ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা। প্রকৃত অপরাধী এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিক তদন্তে চুরি যাওয়া স্বর্ণের পরিমাণ ১৯.৩১৮ কেজি বলা হয়। পরবর্তীতে ইনভেন্ট্রি করে দেখা যায়, শুল্কগুদামে ১৯৭৩ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আটককৃত বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ মুদ্রা, রূপা ও রৌপ্যসদৃশ বস্তু, স্বর্ণের গহনা ও স্বর্ণের বার, ঘড়ি ইমিটেশনসহ আরো অন্যান্য মূল্যবান জিনিস রক্ষিত থাকলেও পুরাতন জিআরের কোন স্বর্ণ চুরি হয়নি। শুধুমাত্র ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আটককৃত স্বর্ণই চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া ১৬.৫৮৮ কেজি স্বর্ণ এআরও বিশ্বনাথ কুন্ডু দায়িত্বে থাকাকালীন গুদামে জমা হয়।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুজ্জামান জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির দুঃসাহসকারী দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে সনাক্ত ও গ্রেফতার না করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ও সক্ষম পুলিশ বাহিনী ১১ দিনেও কেন আসামি সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে পারেনি এ বিষয়ে বেনাপোলের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিশেষ করে কাস্টমস এর অভ্যন্তরে যে সব এনজিওরা (বহিরাগত) বিভিন্ন শাখায় কর্তব্যরত আছে তারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে। কারণ ভোল্টের চাবি অনেক সময় তাদের কাছে দেয়া হয় গুদাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার করার জন্য ।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, চুরির ঘটনা কাস্টমস’র অভ্যন্তর থেকেই ঘটানো হয়েছে। দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে এ ধরনের চুরি করার সাহস পেয়েছে। চুরির সময় গোটা কাস্টমস হাউস’র সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো আর ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে সোনা লুট করা হলো কিভাবে সেটাই এখন তদন্ত র্কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, সোনা চুরির পরপরই কাস্টমস থেকে ৭ জনকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তদন্ত অব্যাহত আছে। অচিরে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ