পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের মাধ্যমে মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। কেননা মানুষ যদি তার নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার রাখে তাহলে সুস্থ সবল মানুষ দুটো কিডনি থেকে একটি দান বা বিক্রি করে দেয়ার অধিকার রাখে। কেননা এ জন্য তাকে কিডনি দাতা ও গ্রহীতার কোনো সমস্যা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ২০১৮ সালের সংশোধিত মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯-এর অসম্পূর্ণতা ও সমস্যা সম্পর্কে অবহিতকরণের উদ্দেশ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজার মানুষের কিডনি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। এটা কোনো বড় অপারেশন নয়। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপন করে। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিপরীতে যে চিকিৎসাটি রয়েছে সেটা হলো ডায়ালাইসিস। সেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাসিক প্রায় ৩০ হাজারের অধিক টাকা খরচ হয়। অথচ আমাদের দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ। যাদের এত টাকা খরচ করার মতো সামর্থ্য নেই। এ ক্ষেত্রে যদি প্রতিস্থাপনের দিকে যাওয়া হয় তাহলে দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ হয় মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এ ছাড়া এরপর এক বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ২ হাজার টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। আর যদি ১৮৮২ সালের ওষুধ নীতি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে ওষুধের দাম হবে মাত্র ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাংযোজন আইন সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ২০১৮ সালের সংশোধিত মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯-এর পরিধি অত্যন্ত সীমিত ও সঙ্কীর্ণ। কিডনি প্রতিস্থাপনের কোনো সুব্যবস্থা আইনে নেই। দেশে মানুষের জীবনকাল বেড়েছে অথচ দাতা ও গ্রহীতার বয়স ৬৫ থেকে ৭০ বছরে সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়কে মিথ্যা বলতে প্রভাবিত করছে এবং দায়িত্ব বর্তাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিংসকের ওপর। এই আইনে নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলো ও ইরানের ন্যায় সুস্থ জাতীয় ও অনাত্মীয় সকলের অঙ্গদানের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের আশপাশের দেশগুলোতেও আইন এরকম অধিকার হরণমূলক নয়।
কিডনি দানে প্রতিস্থাপনে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৯০ করে আইন সংশোধন বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ থাকবে, যার সভাপতি হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি/ চিকিংসক/ সিনিয়র শিক্ষক/ সাংবাদিক/মুক্তিযোদ্ধা/ দানশীল ব্যক্তি। তিন ধরনের জীবিত অঙ্গদান আইনসিদ্ধ হবেÑ জীবিত আত্মীয় থেকে দান, জীবিত অনাত্মীয় থেকে দান, বন্ধুত্ব ও আবেগজনিত কারণের নিমিত্তে। আর অঙ্গদানকারীকে ইরানের ন্যায় ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা পুরস্কার এবং প্রয়োজনে দাতার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিংসা সুবিধা প্রদান। অঙ্গপ্রতিস্থাপনকালে চিকিৎসকের অবহেলা বা লজ্জাকর ভুল না হলে শল্য চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও এ চিকিৎসার প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে সরকারের প্রতি পরামর্শ রেখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দেশে প্রতি বছর ১০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। কিন্তু দেশে হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন। যেখানে রোগীরা আইনের ভয়ে দানকারীকে মিথ্যা সম্পর্কে নিকটাত্মীয় বানিয়ে নেয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিকল কিডনি রোগী ভারত ও শ্রীলঙ্কায় গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করায়, এতে প্রতিজনের ৩০ লাখ টাকার অধিক ব্যয় হয়। ধনীরা সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। সেখানে এক থেকে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশী রোগীরা কেবল কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করেন। অপরপক্ষে প্রত্যেক জীবিত দাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দিলে সরকারের ব্যয় হয়ে ৫০০ কোটি টাকা। জনগণের অর্থ সাশ্রয় হবে ৩০০ কোটি টাকা। সঙ্গে দেশের চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কিডনি দানে আসলে আমাদের আরেকটা বাধা হলো ধর্মীয় গোঁড়ামি। মৃত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেয়া এ জন্য সম্ভব হয় না। যদিও জীবিতদের কিডনি বেশি কার্যকর। কিন্তু ইরানের মতো মুসলিম দেশে কিন্তু সবচেয়ে বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। আর কিডনি দান করার পর দাতা-গ্রহীতা বড় কোনো রোগে আক্রান্ত না হলে বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। ৯৫ ভাগ কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়ে থাকে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আগামী বছর থেকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হবে। গরিবদের জন্য খরচ হবে দেড় লাখ এবং বড়লোকদের জন্য আড়াই লাখ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।