Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

রাজধানীর পল্টনে গতকাল বায়ুদূষণ ছিল ২৩৩ পিএম

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রাজধানীতে বায়ুদূষণ চরম মাত্রায় ঠেকেছে। গতকাল ঢাকার পল্টনে বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ২৩৩ পিপিএম। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। যার ফলে রাজধানীতে বসবাসকারী সবাই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু মান ও দূষণ পরিমাপের ভিত্তিতে সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০১ থেকে ৩০০ পিএম ২.৫ মাত্রার বায়ুদূষণ খুবই অস্বাস্থ্যকর। এ অবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্য সাবধানতা জারি করতে হয়। এ সময় সব বয়সের মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।
শিশু, বৃদ্ধ ও যাদের শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ (যেমন এজমা) রয়েছে তাদের এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়া উচিত না। সবারই বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত, বিশেষ করে শিশুদের।
ঢাকা ইউএস কনস্যুলেটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (১৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্বের শীর্ষ ৯ বায়ুদূষিত দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। এ সময় ঢাকার পল্টনে বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ২৩৩ পিএম, এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। এ অবস্থায় সাধারণত জরুরি স্বাস্থ্য সাবধানতা জারি করতে হয়। এ সময় সব মানুষই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
ঢাকা ইউএস কনস্যুলেটের সকালের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় বিশ্বে বায়ুদূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি রয়েছে চীনের কাশগড়ে ৯৯৯ পিএম, এরপর মেক্সিকোর অ্যাগাস্কালিয়েন্টসে ৭৫২ পিএম, ভারতে পশ্চিমবঙ্গের চাকাপাড়ায় ৪৯২ পিএম, তুরস্কের এলবিস্তানে ৩০৭ পিএম, ইউক্রেইনের কেইভে ৩০২ পিএম, মঙ্গেলিয়ার উলান বাতরে ৩০২ পিএম, পাকিস্তানের লাহোরে ২৪৬ পিএম, যুক্তরাষ্ট্রের পেন্ডলেটনে ২৪২ পিএম ও বাংলাদেশের ঢাকার পল্টনে ২৩৩ পিএম।
উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িতে বছরজুড়েই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীর। বর্ষায় ছিল কাদাপানি আর খানাখন্দের দুর্ভোগ। শুষ্ক মৌসুমে এসে পড়তে হয়েছে ভয়াবহ ধুলাদূষণে। প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ছাড়াও এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজধানীর জনসাধারণ। এর প্রতিকার করার কেউ নেই। সিটি কর্পোরেশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। রাজধানী ধুলামুক্ত রাখতে দুইবার পানি ছিটানোর নির্দেশনা উচ্চ আদালত দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর এব্যাপারে নীরব। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীর।
উন্নয়ন-ধুলায় শ্বাস নিতেও কষ্ট নগরবাসীর। শহরের রাস্তার দুই পাশের দোকানপাট আর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ধুলায় ঢাকা পড়েছে। ধুলার কারণে এখানকার চায়ের দোকান আর খাবারের হোটেলে মানুষ খেতে পারে না। এ চিত্র এখন ঢাকার অধিকাংশ এলাকার। বিশেষ করে রাজধানীর খিলগাঁও, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, সায়েদাবাদ, শ্যামপুর-ধোলাইখাল, চিটাগাং রোড, রায়েরবাগ, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, কারওয়ান বাজার, বংশাল, কুড়িল বিশ্বরোড, ওয়ারী, সদরঘাট, বাবুবাজার, ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁও, কালশী, রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ, বছিলা, মিরপুর-১৪ থেকে ভাসানটেক, বিমানবন্দর, উত্তরা মডেল টাউন, টঙ্গীসহ ঢাকার বেশিরভাগ সড়কই ধুলার চাদরে আচ্ছাদিত। সাধারণ যান চলাচলকারী এলাকার তুলনায় মেট্রোরেলের সড়ক নির্মাণ কাজ চলা এলাকাগুলোয় সব সময় ব্যাপক ধুলাবালি ওড়ায় আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে শ্বাসকষ্ট, য²া, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুলার দূষণ। এ কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী। ধুলার দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসরত শিশু ও বয়স্ক নাগরিকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের প্রফেসর শিশু বিশেষজ্ঞ নুরুল ইসলাম বলেন, ধুলি বালি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ধুলি বালির কারণে ব্রঙ্কাইটিজ, সর্দি, কাশি, জ্বর, চোখের ব্যথা, মাথা ব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ