পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোসহীন নেত্রী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটেছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পায়ে হেঁটে আদালতে যাওয়া বেগম জিয়ার হাত-পা এখন বেঁকে গেছে। প্রিজন সেলে বন্দি থাকায় হাতে-পায়ের ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, জয়েন্টগুলোতে প্রচন্ড ব্যথার কারণে নিজে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না, সোজা হয়ে বসতেও পারছেন না। এমনকি নিজের হাতে তুলে খেতেও পারছেন না। স্বাস্থ্যের এতোটাই অবনতি হয়েছে যে, তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, বিএনপি নেতা ও দলের চিকিৎসকরা। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে এ খবর প্রকাশ করায় প্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতির খবরে উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীরা। প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেও জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না পাওয়ায় হতাশ তারা। রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দি ও চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগ করে তারা শুধু আইন-আদালতের দিকে না তাকিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। দলটির বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ্যে কর্মসূচির দাবিতে বক্তব্য দিচ্ছেন।
২১ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারাবন্দি অবস্থায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে তিনি যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না দাবি করে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ভীষণ অবনতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। যদিও বিএসএমএমইউ’র পরিচালক দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো রয়েছে। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার হাত-পাগুলো বেঁকে গেছে। নিজে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না, এমনকি সোজা হয়ে বসতেও পারছেন না। এতোটাই অবনতি যে, তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিএনপি নেতারা জানান, দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) হাইলি এক্টিভ ডিফরমিং, রিউমেটোয়েড আর্থাইটিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রোগের প্রয়োজনীয় যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা না হওয়ার কারণে উনার হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। উঠতে-বসতে পারছেন না। জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, যা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে। হাত-পায়ের আঙুল বেঁকে যাচ্ছে। নিজ হাতে কিছু খেতেও পারছেন না। স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারছেন না।
সর্বশেষ গত বুধবার কারাবন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান তার পরিবারের সদস্যরা। সাক্ষাৎ শেষে তার বোন বেগম সেলিমা ইসলাম জানান, বেগম জিয়ার হাত-পাগুলো বেঁকে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। হাত-পাগুলো বেঁকে যাওয়ার কারণে অসম্ভব ব্যথা অনুভব করছেন। বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকরা নিয়মিত আসলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত অবনতি ঘটেছে। চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের সদস্যরা প্রতিবেদনে বলেছেন যে, তিনি প্রায় পঙ্গুতের মতো অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু যিনি সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, হাসপাতালের পরিচালক তিনি কেন এটা গোপন করছেন? একজন ডাক্তার, পরিচালক হিসেবে তার দায়িত্ব রোগীর অবস্থা সঠিকভাবে জনগণকে জানানো, বিভ্রান্ত না করা। কিন্তু বেগম জিয়াকে নিয়ে একটা গভীর চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি দেশেনেত্রীর স্বাস্থ্যের সঠিক চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য। তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার জন্য।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, গত এক সপ্তাহে কোনো চিকিৎসক বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাননি। তাঁর হাতে যে ব্যথা ছিল তা পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। নার্সরা তাঁর হাতে-পায়ে হাত দিতে পারছেন না, হাত দিলেই তিনি প্রচন্ড যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ডান পায়ের গোড়ালীতে একটা ফোড়ার কারণে সেই যন্ত্রণা আরও তীব্রতর হয়েছে। অথচ সরকারি চিকৎসকরা দেশনেত্রীকে চিকিৎসা করছেন না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জরুরিভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন দাবি করে রিজভী বলেন, বেগম জিয়ার রিউমেটোয়েড আর্থাইটিস এর জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এখনও কোনো মতামত দিচ্ছেন না। অথচ ইতোমধ্যে রিউমেটোয়েড আর্থাইটিসের তিনজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে বোর্ডের যে রিপোর্ট সেটিও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান তার বোর্ডের অপর তিনজন সদস্যকে নিয়ে অদ্যাবধি কোনো বোর্ড মিটিং করেননি। মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অন্যান্য সদস্যদেরকে জানাচ্ছেন না। তিনি বলেন, কারাগারে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে দেশনেত্রীকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপকৌশল প্রয়োগ করছে সরকার। বিনা চিকিৎসায় তাঁকে কারাগারে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার চক্রান্ত চলছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, জনগণের সেন্টিমেন্ট তোয়াক্কা করে না বলেই সরকার দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়ার সকল আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে। একদলীয় পলিটিক্যাল মনোপলি বজায় রাখার জন্যই বেগম জিয়ার জীবন বিপণ্যের আয়োজনে সরকারের আগ্রাসী অসহিষ্ণুতা প্রবল হয়ে উঠেছে। সেজন্য তাঁর চিকিৎসার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই সরকার অন্ধ প্রতিহিংসার বশে বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেই তাঁর সুচিকিৎসা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাঁর প্রাপ্য জামিনে সরাসরি বাধা দেয়া হচ্ছে। নগ্নভাবে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা এক ভয়াবহ চক্রান্তের বর্ধিত প্রকাশ। সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির তারা বলেন, সরকারের এই টালবাহানায় খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে এর পরিণতি ভালো হবে না।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর মহাসচিব প্রফেসর ডা: আবদুস সালাম বলেন, খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এমতবস্থায় তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার অপপ্রয়াসে তার স্বাস্থ্য নিয়ে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ড্যাবের মহাসচিব বলেন, সবাই জানেন, বেগম খালেদা জিয়া চরম অসুস্থতায় ভুগছেন। আসলে তিনি ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার যথাযথ চিকিৎসা না দিলে এই অবস্থা স্থায়ী রুপ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ কথা সবাই জানেন যে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজে পায়ে হেঁটে জেলখানায় প্রবেশ করেন। প্রথমবার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখন গাড়ি থেকে নেমে নিজে লিফট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কেনো আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন সে প্রশ্ন জাতির কাছে। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এমন অবস্থা হতো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।