পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পেঁয়াজের মূল্য হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। গত এক মাস থেকে রঁসুই ঘরে মশলা জাতীয় এই পণ্যটির দাম প্রতিদিন বেড়েছে। এমনকি রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিঘণ্টায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পণ্যটি আমদানিতে ভারতের উপর অধিক নির্ভরশীল হওয়ায় মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের লাগাম অবশেষে টেনে ধরেছে নতুন পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমেছে এক হাজার টাকা। আবার তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর কার্গো বিমানে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম এক সপ্তাহের মধ্যে না কমলে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছে। সবকিছু মিলেই ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের।
গতকাল রোববার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে আগের দিনের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা কম কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ ২০০ টাকা এবং মিশরের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শনির আখড়া বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখে জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেন, শ্যামবাজার থেকে প্রতিকেজি ১৮ টাকা কমে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি, তাই ২০ কমে বিক্রি করছি। উল্লেখ, গত শনিবারও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৬০ টাকা।
ইনকিলাবের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, উত্তরাঞ্চলের হাটবাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, জয়পুরহাটের বাজারগুলোতে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। নতুন পেঁয়াজ উঠায় বাজারে ‘পেঁয়াজ মূল্যে’ প্রভাব পড়েছে। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের পাতাসহ বিক্রি হচ্ছে। পাতাসহ পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারগুলোতে এখনো পুরনো পেঁয়াজ বেশি।
আমাদের প্রতিনিধি জানান, গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে মজুদকৃত ৪০ টন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। শিবগঞ্জ উপজেলায় মানুষ লাইন ধরে পেঁয়াজ কিনেছে। শিবগঞ্জ বাজারে পেঁয়াজের আড়ৎদার তাজেল মেম্বার, আজিজুল হক, নাসিরুল হক, জোহরুল, আব্দুল লতিফ অধিক লাভের লোভে গুদামে রাখা ৪০ টন পেঁয়াজ মজুদ করেন। এ খবর জানতে পেরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ কাগজপত্র দেখে মজুদদারদের রোববারের মধ্যে মাইকিং করে খুচরা ১৫০ টাকা এবং পাইকারী ১৪০ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশ দেয়।
ইনকিলাব প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলের পেঁয়াজের ১০ থেকে ১২টি হাট পেঁয়াজের জন্য বিক্ষাভ। সেগুলোর মধ্যে সাঁথিয়া একটি। সাঁথিয়ার করমজা হাটে সরেজমিনে দেখা যায় পুরনো পেঁয়াজের পাশাপাশি হাটে নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও নতুন পেঁয়াজ পাইকারী প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগে হাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা ধুলাউড়ি গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পর পেঁয়াজ উঠা শুরু হবে। হাটের পেঁয়াজের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। নতুন পেঁয়াজের কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে একদিনের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দাম মণে এক হাজার টাকার মতো কমেছে।
রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে দেখা গেছে কৃষকরা পেঁয়াজের জমি পাহারা দিচ্ছেন। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের ওপর তাদের অধিক মনোযোগ। রংপুর শহরের লালবাগ, পীরগাছা, হারাগাছ, কাউনিয়া, মাহিগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসতে শুরু করেছে।
সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে প্রায় অভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। সব জেলায় পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। চট্টগ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশ থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ আসছে। স¤প্রতি ১৯৮ টন পেঁয়াজ বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এরমধ্যে চীন ও মিসর থেকে আনা ১১৪ টন পেঁয়াজ বন্দরে খালাস হয়েছে। মিয়ানমার থেকে ৮৪ টন পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, এর মধ্যে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ এসেছে ৬ হাজার ২৭ টন।
এদিকে রাজধানীর জিগাতলা, কারওয়ান বাজার, যাত্রবাড়ী আড়ৎ এবং রায়েরবাজারে পেঁয়াজের দামের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের দিনের চেয়ে বাজার ভেদে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজিতে কমেছে। কিন্তু ক্রেতারা তাতে সন্তুষ্ট নন। কারণ ৩০-৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখনও ২৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা সামিউল হক বলেন, গত শনিবারের তুলনায় রোববার সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তিনি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ২৩০ টাকায়। যা একদিন আগেও বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকা দরে। তিনি জানান, দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ ২০০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। যাত্রাবাড়ী আড়তের এক ব্যবসায়ী জানান, পেঁয়াজের দাম আর স্বাভাবিক না হলেও এক মাসের মধ্যে অর্ধেকে নেমে আসবে। তার বক্তব্য নতুন পেঁয়াজ উঠলে দেশের কৃষকরা যদি কিছু দাম পায় তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে এতো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার মেসার্স মাতৃভান্ডের মালিক কালাম শেখ বলেন, গত শনিবারের তুলনা রোববার পাইকারী বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কম। তাই এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কারওয়ান বাজারের আড়তদার মমতাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী মো. মোস্তফা বলেন, পাবনা, ফরিদপুর আর রাজবাড়ীর পেঁয়াজ ঢাকায় এনে বিক্রি করে থাকি। এসব দেশি পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে। ইতোমধ্যে পাতা পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। আর এ মাসের শেষের দিকেই পেঁয়াজ ওঠা শুরু করবে। তখন প্রতিদিন দাম কমবে।
তবে পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভ ক্রেতাদের মাঝে। তারা মন্ত্রীদের স্ববিরোধী কথাবার্তার সমালোচনা করছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা এবং ভারতের ওপর অধিক নির্ভরশীলতার অভিযোগ তুলছেন। তারা প্রশ্ন করছেন ভারতের ওপর কেন অধিক নির্ভরশীল হতে হবে? ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশের পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছে? তবে তারা স্বস্তির কথা জানিয়ে বলেছেন, মিশর ও তুরস্ক থেকে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির খবর স্বস্তিদায়ক। কিছু বিমানে আসবে সামান্য পেঁয়াজ। কিন্তু এই পেঁয়াজ আসার মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।