Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ধুলায় ধূসর চট্টগ্রামের বাতাসে বিষ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ধুলায় ধূসর চট্টগ্রামের বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। শীত আসার আগে বাড়ছে রোগ-বালাই। শিশু থেকে বুড়ো সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। রাস্তায় নেমে দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। মুখে মাস্ক ব্যবহার করেও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড সম্প্রসারণসহ উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের কারণে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নগরীর আশপাশের ইট ভাটার দূষণ। কল-কারখানার ধোঁয়াও প্রতিনিয়ত দূষিত করছে চট্টগ্রামের বাতাস। খোঁড়াখুঁড়ি নেই এমন সড়কেও ধুলাবালির অভাব নেই।

নগরীর বিমানবন্দর থেকে কাটগড় হয়ে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বোট ক্লাব হয়ে বিমানবন্দর, পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি হয়ে কালুরঘাট সড়কসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সড়কজুড়ে ধুলাবালির স্তুপ জমেছে। মহানগরীর ১২শ কিলোমিটার পাকা সড়কের ৭৫৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়হীন রাস্তা কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে ধুলাবালি জমে আছে। যানবাহনের চাকায় উড়ছে এসব ধুলাবালি।

নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কদ্বীপের গাছপালা থেকে শুরু করে দুই পাশের ভবনগুলোও ধুলায় ধূসর হয়ে গেছে। যানবাহন চালকেরা জানান, রাস্তায় ধুলার পরিমাণ এত বেশি কয়েক মিনিটের মধ্যে গাড়ির গøাসে ধুলা জমে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ধুলার কারণে সামনের গাড়ি দেখতে পান না চালকেরা। গণপরিবহনের যাত্রীরা ধুলায় নাকাল হচ্ছে। পথচারী এবং রিকশা আরোহীদের অবস্থা আরও কাহিল। পথ চলতে গিয়ে ধুলাবালিতে গায়ের পোশাক নোংরা হয়ে যাচ্ছে। নাকে রুমাল চেপে ধরে পথচারীদের এসব এলাকা পার হতে দেখা যায়। সড়কের আশপাশের বাসাবাড়ির বাসিন্দারা পড়েছেন মহাবিপাকে। দরজা, জানালা বন্ধ রেখেও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। সড়কে চলতে গিয়ে নগরবাসীকে দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল পড়–য়া শিশু-কিশোরদের কষ্টের শেষ নেই। মুখে মাস্ক পড়া থাকলেও ধুলায় ধূসর হচ্ছে পুরো শরীর। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর থেকেই সড়কজুড়ে ধুলা উড়ছে। ধুলার কারণে বাসাবাড়ির দরজা, জানালা খোলা যায় না। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ধুলাবালির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠায় শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখ-বিসুখে পড়ছে শিশুরা।

পুলিশ লাইন এলাকার একটি শো-রুমের ম্যানেজার আবুল হাসেম বলেন, ফার্ণিচারের উপর ধুলোর আস্তরণ জমছে। দিনে কয়েকবার মোছার পরও ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে তৈরি ফার্ণিচারের রঙ নষ্ট হচ্ছে, ক্রেতারাও ধুলাবালির ভয়ে এ সড়ক এড়িয়ে চলছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। সড়কের পাশে খাবারের দোকানগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। দোকানদাররা জানান, ধুলাবালির কারণে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে।

যেসব এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প চলছে সেখানে ধুলাবালি কমাতে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। নগরীর ধুলোপ্রবণ এলাকাগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পানি ছিটানোরও কোন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ধুলাবালি বেড়েই চলেছে। কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, খোঁড়াখুঁড়ি না থাকলেও রাস্তা এবং ফুটপাতে বালির স্তুপ পড়ে আছে। যানবাহন চলাচল সময় এসব বালি উড়ে আশপাশের দোকানপাট, বাসাবাড়িতে পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এসব সড়কে নিয়মিত ঝাড়– দেন না। কোন কোন সড়কে সংস্কার কাজের পর অবশিষ্ট ধুলাবালি স্তুপ করে রাখতে দেখা গেছে।

রাস্তায় ধুলাবালির কারণে রোগবালাই বাড়ছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট এবং চোখ উঠা রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। যাদের অ্যালার্জি, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের মত রোগ আছে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ধুলাবালিতে। হাসপাতালগুলোতে এসব রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ধুলাবালিসহ রোগজীবাণুর পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে শিশু এবং বয়স্করা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার এবং হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ধুলাবালি থেকে শিশুদের রক্ষায় মাস্ক ব্যবহার এবং ফুলহাতা শার্ট পড়ার পরামর্শ দেন তিনি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ধুলাবালি বিশেষ করে বায়ু দূষণের কারণে অনেক জটিল রোগের শিকার হচ্ছেন অনেকে। নাক, চোখ এবং কানে ধুলাবালি ঢুকছে। এতে করে নাক, কান, গলার জটিল রোগসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ধুলাবালি থেকে রক্ষায় মুখে মাস্ক পড়ার পাশাপাশি মাথায় ক্যাপ বা টুপি পড়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া বাসায় ফিরে যতদূর সম্ভব হাত, মুখ এমনকি মাথা পরিষ্কার করা পারলে গোসল করে ফেলা জরুরি বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ