পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জীবন রক্ষায় থানায় পাঁচবার জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেও শেষ রক্ষা হলো না ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন আলীর। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। হত্যাকান্ডের পার গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইয়াছিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু ৫৩ দিনেও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলাটি আগে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, যেখানে মো. ইয়াছিন আলী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পাঁচবার থানায় গিয়ে জিডি করেও রক্ষা পায়নি, সেখানে খুনিদের গ্রেফতারে কতটুকু হবে তা বলা মসকিল। দীর্ঘ দিনেও খুনিরা ধরা না পড়ায় হতাশ ইয়াছিন আলীর পরিবার।
হত্যা মামলার বাদী ও নিহতের বোনের জামাই এ কে এম আমানুল্লাহ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি পুলিশ হত্যাকাÐের সাথে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার করবে। অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমাদের আশা নিষ্ঠুরভাবে যারা মো. ইয়াছিন আলীকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার হউক।
তিনি আরো বলেন, ঋণ নিয়ে যখন ঝামেলা চলছিল, তখন ইয়াছিন ওই জিডিগুলো করেছিলেন। এর মধ্যে দুবার পুলিশ সব পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার নিরাপত্তার জন্য কখনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইয়াছিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিদর্শক মুরাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসা নিয়ে ইয়াছিনের অনেকের সঙ্গেই বিরোধ ছিল। এ ছাড়া তার ভাইয়ের খুনের মামলারও বাদী তিনি। এদের কেউ তার খুনের সঙ্গে জড়িত কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।
মামলা ও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ইয়াছিন আলী ছিলেন শল্য (সার্জিক্যাল) চিকিৎসাসামগ্রীর ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে এসব সামগ্রী আমদানি করে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মহানগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে’ বিক্রি করতেন। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের বিপরীতে নিজের সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর তার ওই প্রতিষ্ঠান। তিনি অবিবাহিত। ব্যবসার পাশাপাশি গান-বাজনায় ছিল তার বিশেষ মনোযোগ। নিজে গান গাইতেন। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডাও দিতেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইয়াছিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিজের ছোট ভাইয়ের খুনের মামলার বাদী হিসেবে আদালতে হাজিরা শেষে ওই দিন তিনি বগুড়া থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।
সূত্র জানায়, ইয়াছিনের লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত করে। তারা কোনো কিনারা করতে না পারায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে মামলাটি তা হস্তান্তর করা হয়। ঘটনাটি তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াছিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক জটিলতা ছিল। সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইয়াছিন ছিলেন সপ্তম। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলার পশ্চিম করমজায়। একসময় প্রবাসে থাকলেও আশির দশক থেকে ঢাকায় ব্যবসা করেন। প্রথমে কলাবাগানে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা ছিল। এরপর ২০০০ সালের দিকে তিনি সার্জিক্যাল পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। নিরাপত্তার কথা জানিয়ে ইয়াছিনের পাঁচটি জিডির মধ্যে দুটি ধানমন্ডি থানায়, দুটি মোহাম্মদপুর থানায় এবং একটি কলাবাগান থানায় করেন। ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর এই সময়ের মধ্যে তিনি জিডিগুলো করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রমনা অঞ্চলের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পর দুই বছরের মাথায় তিনি খুন হলেন।
২০১০ সালের ২২ জুন মোহাম্মদপুর থানায় করা প্রথম জিডিতে ইয়াছিন উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে তার ছোট ভাই মতিউর রহমানের খুনের মামলার বাদী তিনি। এই মামলার আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে না যায়, সে জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। তারা কয়েকবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করেছে। ওই দিনও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন এসে তার সন্ধান চায়। তাকে না পেয়ে দোকানের কর্মচারীদের বলে যায়, মামলা তুলে না নিলে ভাইয়ের মতোই তার পরিণতি হবে। এরপর তিনি দোকানে এসে দেখতে পান উল্টো পাশে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. খাজা, মো. বাদশা ও মো. ফরহাদ একটি সিএনজিতে বসে ফোনে কথা বলছে। এ অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে জিডিটি করেন।
এরপরের চারটি জিডিতে ইয়াছিন তার একটি ব্যবসায়িক বিরোধের কথা উল্লেখ করেন। জিডিতে তিনি দাবি করেন, পূবালী ব্যাংক থেকে তার এক দূর সম্পর্কের মামা নিজের প্রতিষ্ঠান মার্প বাংলাদেশের জন্য একটি চলতি ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণ নেয়া হয়েছিল ইয়াছিনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ৫ দশমিক ৪৮ কাঠা জমির বিপরীতে। ওই মামার মৃত্যুর পর তার ছেলে মার্প বাংলাদেশের পরিচালকের দায়িত্ব পান। কিন্তু তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আরও ঋণ নেন। সুদ-আসলে এই ঋণ ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়। এ নিয়ে তিনি কথা বলতে গেলে মামার ছেলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।