পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পওস মেশিন, নোট কাউন্টিং এবং ফ্রাংকিং মেশিন। স্থাপন এবং রাখার জায়গাও ছিল না অনেক জায়গায়। ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশিকা না থাকায় মেশিনগুলো ব্যবহার হয়নি একবারও। ৯০ ভাগ ল্যাপটপ ও মেশিনই অকেজো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ডাকঘরে পৌঁছল কম্পিউটার ব্যবহারের চেয়ার-টেবিল। এর আগে প্রকল্প চলাকালে মাত্র ২ হাজার পোস্ট অফিসে ফার্নিচার দিয়েই প্রকল্পের সমাপ্তি টানা হয়। দৈনিক ইনকিলাবে ডাক বিভাগে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরু করে। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে পৌঁছানো হয় ফার্নিচারগুলো।
গত ৩ সপ্তায় সাড়ে ৬ হাজার ডাকঘরে পৌঁছানো হয় অবশিষ্ট ফার্নিচার। অথচ প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে ২০১৭ সালের ৩০ জুন। প্রজেক্ট কনক্লুসিং রিপোর্টও (পিসিআর) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে বছরখানেক আগে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘ই.সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়নের হালচিত্র হচ্ছে এই।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৯ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবে ‘ডাকঘরে ৭০ কোটি টাকার মচ্ছব : কাজে আসেনি ২০ হাজার পওস মেশিন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি অনুসন্ধানের নামে দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবিরের মাধ্যমে বৃহৎ দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার ঘটনায় প্রকাশিত হয় আরেকটি প্রতিবেদন। এ দু’টি প্রতিবেদনের পর মন্ত্রণালয় এবং ডাক অধিদফতরে তোলপাড় হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের উদ্যোগে গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি।
একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বেশকিছু ডাকঘর সরেজমিন পরিদর্শন করে। ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। পরে প্রকল্পের আওতায় কেনা মেশিন ও আসবাবপত্রের বাস্তব অবস্থা জানতে চেয়ে বিভাগীয় ডাক দপ্তরগুলোতে চিঠি দেয় কমিটি। চিঠির উত্তরে অধিকাংশ কর্মকর্তাই জানান যে, প্রকল্পের আওতায় কেনা মেশিনগুলোর কনফিগারেশন করা হয়নি, মেশিনগুলোর ব্যাটারিও শেষ।
কিভাবে মেশিন চালানো হবে- তার কোনো নির্দেশনা কিংবা কোনো প্রশিক্ষণও পোস্টমাস্টারগণ পাননি। ফলে মেশিনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এমন চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক (বর্তমানে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক) সুধাংশু শেখর ভদ্র শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের আওতায় তড়িঘড়ি করে অবশিষ্ট আসবাবপত্র প্রেরণ শুরু করেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক থাকাকালে তিনি ছিলেন প্রকল্পটির পরিচালক। প্রকল্পের উপ-পরিচালক ছিলেন মোস্তাক আহমেদ।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার পোস্ট অফিসে ফার্নিচার পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র। অপ্রয়োজনীয় সত্তে¡ও প্রকল্প তৈরি, বাস্তবায়নের নামে শত শত কোটি টাকা অপচয়, মেশিন ক্রয়, ফার্নিচারের অভাবে সেই মেশিন স্থাপন না করা, প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশনার অভাবে সেই মেশিন অব্যহৃত অবস্থায় অকেজো করে ফেলে রাখার পর পৌঁছানো হলো চেয়ার-টেবিল। বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে যা ‘ই.সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ নামক ৫৪০ কোটি টাকার অপচয়মূলক প্রকল্পের সর্বশেষ নিদর্শন।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের শুধু ফার্নিচার কেনা বাবদ ১০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ঠিক রাখতে ফার্নিচারগুলো কেনা হয় সরকারি মালিকানাধীন ‘বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএফআইডিসি) থেকে। তবে প্রকল্প থেকে সরকারি অর্থ সরাতে অবলম্বন করা হয় ভিন্ন কৌশল। বিএফআইডিসি’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডাক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গোপন সমঝোতা হয় আগেই।
এই সমঝোতার আওতায় সরকারি দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে চুক্তি হয়। গোপন সমঝোতা অনুযায়ী বিএফআইডিসি কোটেশন দেয়। কোটেশনে রাবার কাঠের চেয়ার-টেবিলের উচ্চমূল্য ধরা হয়। সেই মূল্য ডাক বিভাগকে দিয়ে অনুমোদনও করানো হয়। সে অনুযায়ী হাতলছাড়া একেকটি চেয়ার সাড়ে ৩ হাজার টাকা, হাতলওয়ালা চেয়ার ধরা হয় ৪ হাজার ৬শ’ টাকা এবং একেকটি টেবিলের মূল্য ধরা হয় ১০ হাজার টাকা। এভাবে এক সেট রাবার কাঠের (রাবার কাঠের কি না এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে) ফার্নিচার ক্রয় দেখানো হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। যার বাস্তবিক বাজার মূল্য ৭ হাজার টাকার বেশি নয়।
এ দিকে বিএফআইডিসি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে স্থায়ী জনবল সঙ্কট। এ কারণে অধিকাংশ সরকারি অর্ডারি কাজই বাইরে থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করানো হয়। অনেক সময় ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয় কাজ। বিএফআইডিসি’র নিজস্ব কারখানায় এত বিপুল সংখ্যক ফার্নিচার তৈরির সক্ষমতা নেই। ডাক বিভাগকে ফার্নিচার সরবরাহের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
ফার্নিচার তৈরির জন্য বিএফআইডিসি’র যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছিল সেসবের সঙ্গেও ডাক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গোপন সমঝোতা হয়। অর্থাৎ ডাক বিভাগ-বিএফআইডিসি-ফার্নিচার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মাঝে একটি ত্রি-পক্ষীয় গোপন সমঝোতা হয়। এই সমঝোতার ভিত্তিতেই অতিমূল্যে ফার্নিচার ‘ক্রয়-বিক্রয়’ দেখানো হয়।
শুধু ফার্নিচার বাবদই হাতিয়ে নেয়া হয় প্রকল্পের অন্তত ১০ কোটি টাকা। ফলে রেকর্ডপত্র এবং পিপিআর-এর মানদন্ডে এই হরিলুট শনাক্ত করা আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়। এ মানদন্ড ধরেই অনুসন্ধান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক টিম তাদের অনুসন্ধানে দেখেছে প্রকল্পের বৃহৎ এই কেনাকাটায় পিপিআর অনুসরণ করা হয়েছে কি না। ফলে এ ক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ আতাউল কবির নেতৃত্বাধীন টিম প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতিই ‘খুঁজে’ পায়নি। এর ভিত্তিতে সহজেই দায়মুক্তির সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন ডাক বিভাগের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
অথচ দুর্নীতি উদঘাটনে আন্তরিক হলে দুর্নীতির মূল জায়গাটিতে হাত দিত দুদক টিম। প্রকল্পটির যৌক্তিকতা, প্রকল্পের আওতায় কেনা মেশিনগুলোর কার্যকারিতা, বাস্তব অবস্থা, মেশিন স্থাপন এবং ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের গুণগতমান, স্পেসিফিকেশন, আসবাব বুঝে পাওয়া এবং আসবাবের ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলত। সরেজমিন পরিদর্শন করত। তার কোনো কিছুই না করে ৫৪০ কোটি টাকার দুর্নীতি কার্যত ধামাচাপা দেয়।
প্রকল্পের নামে ডাক বিভাগে অর্থ হরিলুট বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ডাক) মো. শাহাদাৎ হোসেন ‘ইনকিলাব’কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে কি না এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। এ বিষয়ে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলুন। তদন্ত কর্মকর্তা কিংবা ডিজি সাহেব হয়তো আপডেট দিতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।