Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অসংখ্য ডুবন্ত নৌযানে বহু বন্দর ঝুঁকিতে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দূর্ঘটনা কবলিত অসংখ্য ডুবন্ত নৌযান সময়মত অপসারণ না করায় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে বরিশাল, খুলনা এবং নওয়াপাড়া নদী বন্দরসহ পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের নৌযোগাযোগ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব নৌপথে দীর্ঘদিন ধরেই দূর্ঘটনাকবলিত নৌযানসমূহ অপসারণ করছেনা এর মালিকগন। ফলে সারা দেশের সাথে দ্বিতীয় বৃহত নদীবন্দর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী পরিবহন এবং পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেসরকারি নৌযান মালিক-চালকগন সরকারি বিধি বিধান উপেক্ষার পাশাপাশি দিক নির্দেশনাকারি পাইলট ছাড়াই নৌযান পরিচালন-এর কারনে দূর্ঘটনা ঘটছে বলেই অভিযোগ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র বিধি অনুযায়ী রাতে কোন পণ্যবাহী নৌযান পরিচালন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেনা বেশিরভাগ বেসরকারি নৌযান মালিক ও চালকগন। ১শ টনের অতিরিক্ত পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান ছাড়াও যাত্রীবাহী নৌযানের ক্ষেত্রে পাইলট নিয়ে চলাচল বাধ্যতামূলক হলেও তা এখন আর প্রায় কেউই মানছে না। বিষয়টি নিয়ে বিআইডবিøউটিএ’র খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত তিন দশকে দেশের অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় নৌপথে সব ধরনের নৌযানের সংখ্যা কয়েকগুন বাড়লেও নিরাপদ নৌযান চলাচলের বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বাড়ছে দূর্ঘটনার সংখ্যাও। আর বেশিরভাগ দূর্ঘটনার পেছনে বিধিবিধান অমান্যের বিষয়টি অন্যতম প্রধান কারন বলেই বিবেচিত হচ্ছে। দূর্ঘটনার সময় প্রতিটি দূর্ঘটনা কবলিত নৌযানেই কোন পাইলট থাকছে না।

বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রমতে বর্তমানে ১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বরিশাল-চাঁদপুর-ঢাকা/ নারায়নগঞ্জ নৌপথে ৬টি ডুবন্ত মাঝারি ও ভারি পণ্যবাহী নৌযান রয়েছে। যদিও বিআইডিবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি দূর্ঘটনা কবলিত নৌযানের স্থান দৃশ্যমান করার লক্ষে বয়া/লাইটেড বয়া স্থাপনের কথা জানিয়েছে। কিন্তু এর পরেও ঝড়-ঝঞ্জাসহ ঘন কুয়াশার সময় এসব পথ বা রুট নির্দেশক চিহ্ন অনেক সময়ই দৃশ্যমান হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের বামনির চরের কাছে এমভি টপসিট এবং মিয়ার চরের কাছে এমভি গিয়াস ছাড়াও চর বিরবিরীর কাছে এমভি তানভীর-তাওসীফ-২ মৌলভীর হাট এলাকায় এমভি আল্লাহর দান, একই এলাকায় এমভি আকাশ মেঘলা-১ সহ একই স্থানে অজ্ঞাতনামা একটি নৌযান ডুবন্ত ও আধা ডুবন্তবস্থায় রয়েছে। গত ২৮ আগষ্ট বরিশালÑচাঁদপুর নৌপথের হিজলাÑশৌলা চ্যানেলের মৌলভীর হাট এলাকায় একটি ডুবন্ত নৌযানের সাথে এমভি আল্লাহর দান ও এমভি আকাশ মেঘলাÑ১ নৌযান দুটির সংঘর্ষে তা ডুবে যায়। এর মধ্যে এমভি আকাশ মেঘলা-১ নৌযানটি ডুবন্ত নৌযানটির ওপরে অর্ধ নিমজ্জিতাবস্থায় রয়েছে। ডুবন্ত ঐ নৌযানটি কবে কিভাবে দূর্ঘটনার শিকার হয় সে তথ্য বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ফলে ডুবন্ত ঐ নৌযানটির স্থানে কোন বিপদ সংকেতও দেয়া হয়নি ইতোপূর্বে। যার প্রেক্ষিতে ইউরিয়া সার ও সিলেকশন বালু বোঝাই আরো দুটি নৌযান সেখানে দূর্ঘটনার শিকার হয়।

বরিশাল-নন্দীবাজার-চাঁদপুর নৌপথের জুনাহার চ্যানেলে মূক্তিযুদ্ধের সময় পাক নৌবাহিনীর গানবোটের কামানের গোলায় পিএস ইরানী ও পিএস মাজবী নামের দুটি যাত্রীবাহী নৌযান নিমজ্জিত হবার পরে সরকারি ঐ নৌযান দুটি অদ্যবধি পরিপূর্ণভাবে উদ্ধার করা হয়নি। ফলে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে ঐ চ্যানেলটিই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিআইডবিøউটিএ এক পর্যায়ে ঐ চ্যনেলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। স্বাধীনতার দুই দশক পরে পিএস মাজবীর বেশিরভাগ অপসারণ করা হলেও পিএস ইরানী এখনো পরিত্যক্ত ঐ নৌপথটি আগলে আছে। অথচ রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য ঐ নৌপথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে বরিশাল-খুলনা-নওয়াপাড়া এবং নারায়নগঞ্জ, আশুগঞ্জ ও ঢাকা নদী বন্দর ছাড়াও পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের নৌপথগুলোতে ১৮টি মাঝারি থেকে বড় ধরনের পণ্যবাহি ডুবন্ত নৌযান রয়েছে। যা এসব নৌপথের জন্য যথেষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ভাষানচরের কাছে এমভি টিটু-১৮ নামের একটি ডুবন্ত নৌযান যথেষ্ঠ ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। বিআইডবিøউটিএ’র বরিশালের দক্ষিণ ব-দ্বীপ শাখা এবং চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম পাইলটেজ ও কনজার্ভেন্সি ইউনিটগুলো থেকে ডুবন্ত নৌযানগুলোর স্থানে নৌ সংকেত স্থাপন করে নৌযান চালকদের দূর্ঘটনাস্থলগুলো এরিয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হলেও বরিশালের মৌলভীর হাট এলাকার হিজলা-শৌলা চ্যানেলের ডুবন্ত নৌযানের মত এ ধরনের আরো একাধিক ডুবন্ত নৌযান দূর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

সরকারি বিধান অনুযায়ী দূর্ঘটনা কবলিত নৌযান ৮৯ দিনের মধ্যে মালিক-কর্তৃপক্ষ অপসারণ না করলে বিআইডবিøউটিএ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তা নিলামে বিক্রী করে নৌপথ নির্বিঘ্ন করবে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের নৌযোগাযোগ রক্ষাকারি নৌপথে বিপুল সংখ্যক নৌযান মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করলেও তা নির্বিঘ্ন করনে তড়িৎ পদক্ষেপ অনুপস্থিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি রাতের বেলা পণ্যবাহি নৌযানগুলোর বেপরোয়া পরিচালন সহ পাইলট ছাড়া নৌযান চলাচলে প্রায়সই দূর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি নৌপথ বিশেষজ্ঞদের।
অপরদিকে নৌযান চালকদের তরফ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে সঠিক বয়া-বাতিসহ নৌ-সংকেত ব্যবস্থার অভাব এবং নাব্যতা সংকটের কারনে দূর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে বিআইডবিøউটিএ’র কনজার্ভেন্সী ও পাইলটেজ-এর পরিচালক’এর বক্তব্য জানতে তার সেলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ