পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে দেশের নিত্যপণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের বাজার মূল্য দ্বিগুণ থেকে ৭-৮ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা। পেঁয়াজ নিয়ে দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বর স্ববিরোধী কথাবার্তা ও প্রশাসনের দুর্বল উদ্যোগ নিত্যপণ্যের বাজারকে করে তুলেছে লাগামহীন। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজসহ পণ্যের দাম। পেঁয়াজে ভোক্তাদের যখন নাভিশ্বাস তখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ‘যে যার মতো’ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। পেঁয়াজে ভারতের ওপর বর্তমান সরকারের অধিক নির্ভরশীলতাই মূলত এ জন্য দায়ী।
এ অবস্থায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ১৭ নভেম্বর রোববার থেকে জরুরিভিত্তিতে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে টিসিবি তুরস্ক এবং বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আনবে। গতকাল বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, যতদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানির জন্য একজন উপসচিবকে তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া একজন উপসচিব মিসরে রয়েছেন।
বর্তমানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা দরে। চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫-৬ টাকা। শীতের আগাম শবজি বাজারে এলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে ক্রেতাদের উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ত্রাহি অবস্থায় দেশের আমজনতা। কিন্তু দোষারোপের রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি চলছেই। পেঁয়াজ না খাওয়ার উপদেশও দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যারা বলছেন পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করা যায়, পেঁয়াজ না খেলে কি, তারা ১০০০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ কেনার সামর্থ্য রাখেন। এবং আমি বিশ্বাস করি পেঁয়াজ খাওয়া একটুও কমাননি তারা। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার মুরোদ নেই, ইচ্ছাও নেই এদের। কিন্তু মানুষের গায়ে ফোসকা পড়ার মতো কথা বলতে তাদের কোনো কার্পণ্য নেই’।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। সেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই। ৩০ টাকা দরের পেঁয়াজ এখন ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দফায় দফায় দাম বেড়ে রাজধানীর কাঁচাবাজারে এখন সবচেয়ে বেশি দামের পণ্যের তালিকায় সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে পেঁয়াজ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান, নতুন আমদানির ঘোষণা, টিসিবি’র খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি- সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি পার করে ত্রিপল সেঞ্চুরির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা। পেঁয়াজের এমন দামে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এমনকি পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক থেকে ৪৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ হাতাহাতি হয়। পেঁয়াজ কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যহারা হয়ে নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ এমন কান্ড ঘটিয়ে বসেন।
অপ্রতিরোধ্য পেঁয়াজ
পেঁয়াজ যেন অপ্রতিরোধ্য। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে এবং ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির কথা বলছে, কিন্তু থামানো যাচ্ছে না এর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। প্রতিদিনই যেন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার পথে পেঁয়াজ। সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে শেষ তিন দিনেই বেড়েছে ৮০ টাকা। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ায় ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতারাও অবাক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁযাজ রফতানি বন্ধ রাখার পর থেকে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বললেও এর দাম কিছুতেই কমছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অনেক কথা। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রধান দুই কারণ ‘ভয়’ ও ‘কারসাজি’।
এ দিকে, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি থেকে খুচরাবাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। মূলত পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পর এখন সেই দামের পতনের ক্ষণ গুনছেন ব্যবসায়ীরা। তাই মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন আমদানিকারকরা। অর্থাৎ দাম পড়ে যাওয়ার ভয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর গত দুই মাস প্রায় ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। তবে গত এক সপ্তাহে আমদানির সেই পরিমাণ কমেছে।
অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এলসি খুলেও যদি আমদানি না হয়, তবে এর পেছনে টাকা পাচারের মতো ঘটনা থাকতে পারে। আবার দাম কমে যাওয়ার ভয়ে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এমনও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
সূত্র মতে, ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এরপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরাপর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে আবারও ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তব্যে বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরো উসকে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা। গত বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরো বেড়ে ২২০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার তা আরো বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।
গতকাল রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিসর থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কথা বললে শ্যামবাজারের সোহেল স্টোরের মালিক বলেন, পেঁয়াজের দাম অনেক বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ শ্যামবাজারে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, আপনারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। মিসরের পেঁয়াজ এখানে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামবাজারের আরেক স্টোর পপুলার বাণিজ্যালয়ের বিক্রয়কর্মী মিরাজ বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই। পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। শুক্রবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তার কোনো ঠিক নেই।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দাম কমবে।
এদিকে রামপুরার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী জামাল বলেন, প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আমাদের করার কিছু নেই। বুধবার শ্যামবাজার থেকে ১৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২০০ টাকায়। আর আজ (শুক্রবার) শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ২৩০ টাকা কেজি। এই ব্যবসায়ী বলেন, শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আর মন্ত্রীদের বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। মন্ত্রীরা উল্টাপাল্টা বক্তব্য না দিলে কিছুতেই পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা হয় না।
শান্তিনগর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করছেন। বাজারটির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখলেও পেঁয়াজের ঘর খালি রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাই ভাই স্টোরের ইমরান বলেন, যে মূল্য তালিকা রয়েছে তা বৃহস্পতিবারের। আজ (শুক্রবার) পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। আগের দিন যে পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি তা এখন ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
নিউমার্কেটে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এ বাজারটিতেও পেঁয়াজের মূল্য তালিকা দেখা যায়নি।
বাজারের ব্যবসায়ী কাউসার বলেন, প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল যে পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি ছিল, শুক্রবার তা ২৪০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ায় আমরাও হতবাক। দেশে কখনো পেঁয়াজের এমন দাম হয়নি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। পাইকারিতে দাম না কমলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।
হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি
পেঁয়াজের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন আরেকটি দুঃসংবাদ হয়ে এলো চালের দাম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়েছে মিনিকেট চালের। মোকাম মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
হঠাৎ করে দাম বাড়ার পেছনে কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, মৌসুম শেষ। তাই সরবরাহ কমে আসায় চালের দাম বেড়েছে। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। আবার মিলাররা বলছেন, সরকার আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়ায় তাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এ দিকে, কৃষকের মাঠে এখন আমন ধান রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক জমিতেই আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে আমন ধানের নতুন চাল বাজারে উঠবে শিগগিরই।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে ১০ দিনের ব্যবধানে তাদের বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোকাম থেকে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার চাপ থাকায় তারাও বর্ধিত মূল্যে চাল বিক্রি করছেন।
এ বাজারের মেসার্স তাসলিমা রাইস এজেন্সির বিক্রয় প্রতিনিধি বাচ্চু মিয়া বলেন, এক থেকে দেড় সপ্তাহ আগেও তাদের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। আর ২৮-২৯ টাকার বিআর-২৮ (লতা নামে পরিচিত) চাল গতকাল ৩০-৩১ টাকা, ২৮ থেকে ৩০ টাকা, বিআর-২৯ চাল গতকাল ৩০-৩১ টাকা এবং ৫০ থেকে ৫২ টাকার নাজিরশাইল গতকাল ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মিনিকেট চালের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যে পরিমাণ সিদ্ধ চালের ব্যবহার হয়, তার বেশির ভাগই মিনিকেট। মিনিকেট চাল সব শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করেন। আর এ কারণে অসাধু মিল মালিকরা এই চালের সঙ্গে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চাল মিশিয়ে বিক্রি করছেন।
বাদামতলী এলাকার মেসার্স মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, বাজারে যত পরিমাণ চালের ব্যবহার হয়, তার ৬০ শতাংশই মিনিকেট। আর এ কারণে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, মিনিকেট চালের দাম তাদের এলাকায় কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৬ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০ টাকায়। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪১ টাকা।
কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি
কার্গো বিমানে করে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি সিদ্ধান্তের কথা জানায় গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রæপ মিসর থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরিভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সমুদ্রপথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে। পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় এই চালান খুব শিগগিরই বাংলাদেশে পৌঁছবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় স¤প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েক দিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরিভিত্তিতে উল্লেখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুদ করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা অবলম্বন করা হয়। তবে এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অজুহাতে হঠাৎ করে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। অবশ্য অন্যান্য দেশে ভারতের পেঁয়াজ যাচ্ছেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।