পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পারিবারিক ছোট-খাটো দ্ব›েদ্বর বলি হতে হয়েছিল উচ্চ শিক্ষিত সগিরা মোর্শেদকে। তুচ্ছ দ্ব›দ্ব থেকে হওয়া শত্রুতা একসময় রূপ নেয় ভয়াবহ হত্যাকান্ডে। যদিও তিন দশক ঘটনাটি চাপা থাকার পর অবশেষে হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের চিনতে পেরেছে বাদীসহ ভুক্তভোগীর পরিবার। নিজের পরিবারের আপনজনেরা এমন ঘৃণিত কাজ করতে পারে সেটি ভাবনায়ও ছিল না নিহতের স্বজনদের। যদিও সংশ্লিষ্টদের আচরণে কিছুটা সন্দেহের ইঙ্গিত ছিল। দীর্ঘ তিন দশক পর হত্যা রহস্য উদঘাটন হওয়ায় এখন সুবিচার পাবেন বলেও খুবই আশাবাদী বাদী আ. ছালাম চৌধুরী। তাদের কেবল অপেক্ষা- সর্বোচ্চ শাস্তি হবে হত্যায় জড়িত আসামিদের। একইসঙ্গে দীর্ঘ এত বছরে হত্যা মামলাটির রহস্য চাপা দেওয়ায় জড়িত তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সগিরা মোর্শেদের পরিবার।
এদিকে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই) জানিয়েছে- নির্দিষ্ট দু’মাসের আগেই একটি নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট আদালতে জমা দেবেন তারা। সংস্থাটি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ও তদন্ত করে দেখছে। দীর্ঘ ৩০ বছর পর চাপা পড়ে মৃত প্রায় একটি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইর দক্ষতায় জনমনে প্রশংসার ঝড় বইছে।
পরিবারের সদস্যদের বর্ণনায় জানা যায়, রাজারবাগের ৯৫৫ আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন সগিরা মোর্শেদ। ছোট খাটো পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে তার জা সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও দ্ব›দ্ব হতো। এই পারিবারিক কলহের জের ধরে সগিরাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন জা সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন। পরিকল্পনায় শরিক হন তার স্বামী নিহত সগিরা মোর্শেদের স্বামীর ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী। তিনিই তার এক পেশেন্ট মারুফ রেজাকে শায়েস্তা করার কাজটা দেন। আর এই কাজে সহযোগিতার দায়িত্ব দেয়া হয় আনাস মাহমুদ রেজওয়ানকে। সে অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে ভিকারুননেসা স্কুলের সামনে গুলি করা হত্যা করা হয় তাকে। একটি মোটরসাইকেলে করে দু’জন এসে প্রথমে সগিরা মোর্শেদের হাতে থাকা বালা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মারুফ রেজা। তবে মারুফ রেজাকে চিনে ফেলায় এবং বাধা দেয়ায় সগিরাকে গুলি করা হয়। মাত্র ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তিটি করা হয়েছিল।
পিবিআইর হাতে গ্রেফতারের পর জবানবন্দিতে আসামিরা বলেন, ঘটনার দিন মারুফ রেজার মোটরসাইকেলে ছিলেন আনাস মাহমুদ। রিকশাযোগে সগিরা স্কুলে আসার পথে তারা পিছু নেন। বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে কয়েক গজ দূরে তারা মোটরসাইকেল দিয়ে রিকশাটি ব্যারিকেড দেন। সগিরার হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করেন মারুফ। তখন আনাসকে দেখে সগিরা বলেনÑ ‘এই আমি তো তোমাকে চিনি, তুমি এখানে কেন?’ এই কথা বলার পরই মারুফ ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে সগিরার বুকে গুলি করে পালিয়ে যান। বেইলি রোডের বাসীন্দা মারুফ রেজা বর্তমানে একজন নামকরা আবাসন ব্যবসায়ী।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিনই রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের স্বামী আ. ছালাম চৌধুরী। এই মামলার তদন্ত করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত শেষে ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের সময়। তাদের জবানবন্দিতে মারুফ রেজার নাম আসায় আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। কিন্তু আদালতের এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন মামলা করে বিবাদী পক্ষ। এতে আদালত মামলার ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। পরবর্তীতে ৬ মাস করে সময় বাড়াতে বাড়াতে একসময় মামলাটির বিচারকাজ ফাইলবন্দি হয়ে যায়।
নিহতের স্বজন ও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হত্যার পরই ছিনতাইকারী সাজিয়ে খুনিদের রক্ষা করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময়ের এক মন্ত্রীর চাপেই এমন ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হয়। তার আত্মীয় এ হত্যাকাÐে জড়িত থাকায় মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়ে যান। এরই মধ্যে সগিরা মোর্শেদের স্বামীর বড়ো ভাই, ভাবিসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হলে মারুফ রেজা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাত্র ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করা হয়েছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঘটনার পর সেই সময়ে হত্যার ঘটনাটিকে ছিনতাই বলে চালানোর চেষ্টা হয়। তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি বুঝতে পারলেও মন্ত্রীর চাপের কারণে সেটি ভিন্নখাতে চলে যায়।
এদিকে, চলতি বছর একটি বেসরকারি টেলিভশনে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন সেটি আদালতের নজরে আনা হলে চলতি বছরের ১১ জুলাই মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিআইবির ডিআইজিকে নির্দেশ দেন আদালত। পিআইবির তদন্তে এই হত্যাকাÐে ডা. হাসান আলী চৌধুরীসহ অন্যদের সম্পৃক্ততা উঠে আসে এবং তাদের গ্রেফতার করা হলে তারা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দেন।
পিবিআইর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, তাদের ওপর তদন্তভার আসার পর কয়েকটি প্রশ্ন সামনে রেখে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেন। কেন এতদিন মামলাটি চাপা পড়েছিল, কার স্বার্থে চাপা পড়েছিল। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে তারা অগ্রসর হয়। তারা হত্যাকান্ডস্থলে গিয়ে ৩০ বছর আগের লোকদের খুজে বের করতে শুরু করেন। একই জায়গায় বারবার যাওয়া, বিভিন্ন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করতে করতে এক সময় হত্যাকান্ড নিয়ে ক্লু বেরিয়ে আসে। বিভিন্নজনের সাথে আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে আসে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা আনাস মাহমুদ রেজওয়ানের নাম। তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সব অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে পিবিআই তাদের অনুসন্ধানে আনাস মাহমুদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।
এদিকে, দীর্ঘ তিন দশক পর হত্যা রহস্য উদঘাটন হওয়ায় নতুন আশা জাগছে সগিরার স্বামী আ. সালাম চৌধুরীর পরিবারে। বিচার না পাওয়ার বেদনা ও হতাশায় জবীবনের এতগুলো বছর অতিবাহিত হলেও একন নতুন স্বপ্ন দেখছেন সুষ্ঠু বিচার পাবেন বলে। তিনিসহ সগিরার পরিবার ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, হত্যার পর আমার বড়ো ভাই হাসান আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে। বারবার বলেন, মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না। তোমার মেয়েদের বিপদ হতে পারে। মারুফও বেনামি টেলিফোনে হুমকি দিয়েছে। তবে তিনি দমে যাননি। তিনি বলেন, পিবিআই যে কাজটি করেছে তা প্রশংসারযোগ্য। পিবিআই যখন হত্যা রহস্য বের করতে পেরেছে তবে আমি শতভাগ নিশ্চিত যে স্ত্রী হত্যার বিচার আমি ও আমার সন্তানেরা পাবে। আ. ছালাম বর্তমানে একটি স্কুল পরিচালনা করছেন। সগিরা মোর্শেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণি লাভ করে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। তার স্বামী সালাম চৌধুরী তার সহপাঠী ছিলেন।
আ. ছালাম চৌধুরী বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করত সায়েদাতুল মাহমুদা। আমার স্ত্রীর উচ্চশিক্ষা, স্ত্রীকে আমার মায়ের পছন্দ সব মিলিয়ে আমার মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। যে কারণে আমার স্ত্রীকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।