Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএফআইইউ সেকেন্ড হোমের বাংলাদেশিদের খুঁজছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে যেসব বাংলাদেশির নাম রয়েছে, তাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তারা অর্থপাচার করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশটিতে একাধিকবার ঘুরে এসেছেন। বিএফআইইউ জানতে পেরেছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের পাশাপাশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, সেকেন্ড হোমের সুবিধা কারা নিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। এখনও নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচার বা সেকেন্ড হোম নিয়ে বিএফআইইউ নিজেদের মতো করে কাজ করছে। তার মতে, সরকার চাইলে দেশের বাইরে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে, অথবা কারা অর্থপাচার করেছে, সে তথ্য আমরা আনতে পারব। রাজী হাসান বলেন, কার কোথায় কী আছে, এখন সবই জানা যায়। মানুষের যাতায়াত এখন সারা পৃথিবীতেই। কাজেই কে কী পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন, তা পুরোপুরি জানা না গেলেও সেকেন্ড হোম সুবিধা নেয়াদের খবর সহজেই পাওয়া যায়।

সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ করা বাংলাদেশিদের অর্থের উৎস জানার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, মমিনুল হক সাঈদ, খালেদ মাহমুদ ভূইয়াসহ অন্তত ৫০ জনের বিদেশে থাকা অর্থের তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। বিএফআইইউ’র কর্মকর্তারা বলছেন, স¤প্রতি যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তারা অর্থপাচার করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএফআইইউ জানতে পেরেছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের পাশাপাশি সম্পদ গড়েছেন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা, রাজনীতিবিদসহ ৪ হাজারের বেশি নাগরিক নাম লিখিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে সপরিবারে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ৩শ’র বেশি বাংলাদেশি সেখানে বাড়ির মালিক হয়েছেন।

মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অ্যান্ড ট্যুরিজম আর্টস অ্যান্ড কালচারের ওয়েব সাইটের সর্বশেষ তথ্য (২০১৮ সালের জুন) অনুযায়ী, দেশটিতে সেকেন্ড হোমের সুবিধা নেয়া বাংলাদেশির সংখ্যা চার হাজার ১৮ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে দেশ থেকে শুধু হুন্ডির মাধ্যমে নগদ টাকা পাচার হয়েছে চার হাজার ২১৯ কোটি টাকার মতো। অবশ্য সেকেন্ড হোমের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে প্রকৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ হাজারের মতো। তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে অনেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন সেখানকার কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে।

এদিকে, অবৈধভাবে বিদেশে অর্থপাচার করে যারা সেকেন্ড হোমের মালিক হয়েছেন, তাদের ধরতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পাশাপাশি এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। সেকেন্ড হোম সুবিধাভোগীদের ধরতে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।
বিএফআইইউ প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা রাজী হাসান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে শুধু বিএফআইইউ নয়, সরকারের আরও কয়েকটি বিভাগের কাজ আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, আইনশৃঙ্খলা বিভাগের সহযোগিতারও বিষয় আছে।

সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ ব্যক্তি। মালয়েশিয়া সরকার ২০০২ সালে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প শুরু করে। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯১ জন ওই সুবিধা নিয়েছেন। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেখানে বাড়ি বানিয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের অট্টালিকায় বসবাস করছেন। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কৌশলে তারা বিদেশে পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন।
উল্লেখ্য, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭-এর ৫(১) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউই দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠাতে পারেন না। যদিও শুধু মালয়েশিয়া নয়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইয়ে বাংলাদেশের কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অ্যান্ড ট্যুরিজম আর্টস অ্যান্ড কালচারের ওয়েব সাইটের সর্বশেষ তথ্য (২০১৮ সালের জুন) অনুযায়ী, পৃথিবীর ১৩০টি দেশের ৪০ হাজার নাগরিক সেকেন্ড হোমের বাসিন্দা হয়েছেন। সেকেন্ড হোমের বাসিন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীনারা ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জাপানিরা। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ