Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

বরিশাল ব্যুরো ও সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র ছোঁবলে দক্ষিণাঞ্চলে এবার ফসল আর মাছের ক্ষতি সরকারি হিসেবে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা বলা হলেও বাস্তাবে তা ২শ’ কোটির ওপরে। শুধু ফসলের উৎপাদন ক্ষতিই ৩০ হাজার টনে পৌঁছতে পারে বলে জানা গেছে। রোববারের ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৭ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ও রবি ফসল ছাড়াও প্রায় ৬ হাজার হেক্টর পুকুর, দিঘি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়।

ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টরের আমনসহ রবি ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ডিএই’র মতে বুলবুল’র তান্ডবে দক্ষিণাঞ্চলে ফসল উৎপাদন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার টন। যার সরকারি মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা হিসেব করা হলেও বাস্তবে তা দেড়শ’ কোটিরও বেশি বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা জানিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কৃষক এ ঝড়ে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে ডিএই’র অনুসন্ধান টিম জানিয়েছে।

অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পুকুর ও দিঘি ছাড়াও ১৮৪টি মাছের ঘের বুলবুল’র বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ফলে এসব পুকুর-দিঘি ও ঘের থেকে প্রায় দেড় হাজার টন বিভিন্ন ধরনের মাছ ছাড়াও ২ কোটি বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা বের হয়ে গেছে। মৎস্য অধিদফতরের মতে, মাছ ও মাছের পোনা ছাড়াও মৎস্য সেক্টরের বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোরও এবার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু মৎস্য সেক্টরেই দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ফলে কৃষকদের মত মৎস্যজীবীদেরও এখন মাথায় হাত। দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসলের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও পান বরজের ক্ষতিও মারাত্মক। বেশিরভাগ পান বরজই মাটির সাথে মিশে গেছে। যা এখনো প্লাবনমুক্ত হয়নি।

কৃষিবিদদের মতে, প্লাবিত রবি ফসল রক্ষার কোন সুযোগ নেই। তবে আমন জমি থেকে যত দ্রুত পানি সরে যাবে ততই মঙ্গল। উঠতি আমন ফসলের বেশিরভাগই এখন ফুল ও থোর পর্যায়ে রয়েছে। ফলে নুয়ে পড়া জমির ধানের বেশিরভাগই চিটা হবারও আশঙ্কা রয়েছে। এর সাথে বৃষ্টির পানির কারণে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মাঠ থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সোনাগাজী উপক‚লীয় অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড বাতাস ও ভারি বর্ষণের কারণে আমন ধান, সবজি ও খেসারি চাষীদের কপাল পুড়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ২৯০ হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান, ৮০ হেক্টর জমির খেসারিসহ অন্য ফসল শাক সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপক‚লীয় অঞ্চলের সাইফুল নামে এক কৃষক জানান, আমন ধান কাটার প্রস্তুতি চলছিল। হটাৎ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এসে পাকা ধান গাছ ভেঙে এলোমেলো করে পানিতে ডুবিয়ে দিল। এ যেন পাকা ধানে মই। আইয়ুব খান নামের আরেক কৃষক জানান, ধান কাটার পরপরই জমিতে খেসারি ডালের ফলন হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকায় প্রথম দিকে আমাদের ৫৩ একর জমিতে ২৫ মণ খেসারি ফেলি। ধান তো গেল খেসারি বীজও পানিতে তলিয়ে গেছে।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিৎ দেব জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি অধিদফতরের মাধ্যমে তালিকা করে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সকল সহযোগিতা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ