পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘রাত পৌনে তিনটা। যাত্রীরা অনেকেই গভীর ঘুমে কাতর। হঠাৎ বিকট শব্দ। সবার ঘুম ভেঙে যায়। মুহ‚র্তেই পুরো ট্রেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। ট্রেনের ভেতর থেকে বাইরে এসে দেখি নারী পুরুষের আর্তচিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তি। তখন গভীর কুয়াশায় আচ্ছন্ন গোটা স্টেশন এলাকা। ভেতর থেকে বের হওয়ার রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কারো হাত, কারো পা, এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। চারদিকে শুধু রক্ত আর রক্তাক্ত দেহ। এ সময় চোখের সামনে অনেককে মারা যেতে দেখি।’
‘আমরা গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কান্নার শব্দ। এখানে সেখানে ছিটকে পড়ে আছে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের লাশ।’ এভাবে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ত‚র্ণা নিশীথার ট্রেনযাত্রী বশির মিয়া ও মন্দবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো সালাম । গত সোমবার রাত ৩টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘ত‚র্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। দুমড়েমুচড়ে যায় উদয়ন এক্সপ্রেসের তিনটি বগি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিশিথার ইঞ্জিনও। যাত্রীদের শোর চিৎকার শুনে আশপাশের বেশকিছু মানুষও ছুটে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়। শতাধিক আহত যাত্রীকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থাও করেন স্থানীয়রা। গভীর রাতে উদয়নের ওপর নিশিথার সিগন্যাল না মানা আঘাতে ভোরের আলো ফুটে উঠতেই হাসপাতালসহ ঘটনাস্থল ঘিরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ তে। আহত হয়েছে শতাধিক। গঠন করা হয়েছে ৫টি তদন্ত কমিটি। ত‚র্ণার চালকসহ ৩ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী, রেলসচিব, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
নিহতদের স্বজন ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা নিহতেদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করছেন। নিহতরা হলেন-চাঁদপুর হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুল রহমান (৫৫), চাঁদপুরের কুলসুম বেগম (৩০), চাঁদপুরের হাইমচরের মরিয়ম (৪), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫), চাঁদপুরের হাইমচরের কাকলী (২০), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২), হবিগঞ্জের বানিচংয়ের আদিবা (২), হবিগঞ্জের ভোল্লার ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারুরঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহামনি (৩), নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩)।
স্টেশন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ত‚র্ণা নিশিথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সঙ্কেত) দেওয়া ছিল। কিন্তু ত‚র্ণার নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় ত‚র্ণার গতি ছিল ৮০ কিলোমিটার।
তিনি আরো বলেন, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ত‚র্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক সেই সিগনাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমার কোনো দোষ নেই। ত‚র্ণা নিশীথার যাত্রী কাজি ফজলে রাব্বি বলেন, উদয়ন এক্সপেস অন্য লাইনে ঢোকার আগেই বিপরীত দিক থেকে এসে ত‚র্ণা নিশীথা ধাক্কা দেয়। এতে শেষের তিনটি বগিতে আঘাত হানলে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। উদয়ন এক্সপ্রেসের যাত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রেনটি লাইন ক্রস করছিল। ওই সময় দ্রুত গতিতে এসে ত‚র্ণা নিশীথা ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয়। আমি সামনের বগিতে থাকায় হতাহত হয়নি। পেছনে ঝ, ঞ, বগিসহ আরেকটি বগির যাত্রীরা বেশি আহত হয়। আমরা সবাই ট্রেন থেকে নেমে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করি।
দুর্ঘটনার পর কসবা, আখাউড়া, ব্রাক্ষনবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জ হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) পাঠানো হয়। ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ৪০জন ভর্তিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে মা, স্ত্রী, মেয়ে, ভাগ্নে বউসহ পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে একই ট্রেনে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)। তিনি জানান, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কারও পা নেই, কারও মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা টেনে আমাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন, পরিবারের বাকি ৪ সদস্য কোথায় আছে, বেঁচে আছে কি-না তাও জানেন না। উদ্ধার অভিযানকালে দেখা গেছে রেললাইনে রক্ত আর রক্ত। কোথাও মগজ পড়ে রয়েছে। কোথাও মাংস পিন্ড। নারীদের শাড়ী। সেলোয়ার। কামড়ার মধ্যে আটকা পড়ে রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিগন্যাল না মানায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে সকাল পৌনে আটটায় কুমিল্লার লাকসাম থেকে দুইটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।