পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের কথারও হিসাব নিবেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেছেন, “কান, চোখ ও অন্তরের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে”। “যে কথাই তোমরা উচ্চারণ কর, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য রক্ষী নিয়োজিত আছে”। আল-কুরআন। হাদিস শরিফে আছে, নবী করিম (সা.) বলেন, জিহ্বা আকৃতিতে ছোট, কিন্তু তার ভ‚মিকা অনেক বড়। ক্ষতির দিক দিয়েও এটি ভয়ানক। -আল-হাদিস। অন্য হাদিসের ভাবার্থ এমন এসেছে- নবী করিম (সা.) বলেন, যে নিরব থাকে সে ক্ষমা পাবে। যে কথা কম বলে, সে নাজাত পায়। মানুষের দ্বীন তখনই পূর্ণ সুন্দর হয়, যখন সে অর্থহীন সব বিষয় থেকে বেঁচে থাকে।
সম্প্রতি ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে জাতীয় ইমাম সমাজ আয়োজিত এক ওলামা সম্মেলনে বক্তৃতা করতে গিয়ে এমন কিছু অসতর্কতামূলক মন্তব্য করেছেন, যা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির করা উচিত নয়। রাজনীতির মাঠে আমাদের দেশে মানুষ হিসাব করে কথা বলে না। গ্রাম্য সালিস দরবারেও এত চিন্তা করে কথা বলতে হয় না। সাধারণ মজলিস বা আড্ডায় কথার কোনো আগামাথা থাকে না। কিন্তু কেউ যখন সরকারের অংশ হন, মন্ত্রী হন, তখন তাকে অনেক সংযতবাক হতে হয়। জবান সংযত রাখতে হয়। মিতবাক হওয়া আরো বেশি শোভনীয়।
প্রতিমন্ত্রী কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের বা কাছাকাছি অর্থের কিছু কথা বলেন, “আমি কওমীদের বলছি, নাম বললে আবার দোষ হবে, বুঝে নিন হক্কানি আলেম, এসব আলিয়া-মালিয়া....”। এরপর বলেন, “দশজন আলেম হজে পাঠাবার নিয়ত করেছিলাম, হয়ে গেলেন ৫৮ জন। অনেকে বয়সে বৃদ্ধ মা’জুর হওয়া সত্তে¡ও আমাকে সুপারিশ করলেন। ফোন করতে বললেন। একজন আরেকজনের নাম দিলেন। অনেকে ... সঙ্গে নিতে চাইলেন।” এ সময় তিনি ইশারা-ইঙ্গিতে বরেণ্য অনেক আলেমের পরিচয় প্রকাশ করে দেন। একজন মুরুব্বি আলেমের নামও উল্লেখ করেন। এরপর বলেন, “নামাজ পড়ার সময় কুকুর ঘেউ ঘেউ করলে এক কেজি গোস্ত দিয়ে তাকে শান্ত রাখা যায়, কুকুর হাড্ডি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আপনি শান্তিতে নামাজ পড়তে পারেন। সরকারের কর্মকান্ডেও যারা ঘেউ ঘেউ করবে তাদের হজের ব্যবস্থা করে আমি নিরব করে দিয়েছি।”
এবার সরকার হজগাইড কোটায় তিনশ’র মতো হাজী নিয়ে যান। হজ মিশনে মন্ত্রীর সাথে বিশিষ্টজনদের এক বহর যায়। যার মধ্যে সিইসিসহ অনেক এমপি-মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। দেশ থেকে সোয়াশ’র বেশি হাজী হজে গিয়েছিলেন। প্রতি পঞ্চাশজন হাজীর গাইড হিসেবে কতজন গাইড যেতে পারেন তা পাঠক বুঝতে পারবেন। পঞ্চাশ জনের টাকা থেকে একজন গাইড যায়। অনেক সময় এক-দেড়শ’র জন্য একজন গাইড ঠিক করা হয়। এতে দেখা গেছে, দুশ’ থেকে পাঁচশ’ গাইড নেয়া সম্ভব। আগে এ কোটায় মন্ত্রণালয়ের নামাজি পিয়ন, ড্রাইভার, মালি যেতেন। এমপি-মন্ত্রীরা ধর্মমন্ত্রীকে বলে নিজের এলাকার ইমাম-মোয়াজ্জিন বা নিজের স্টাফ কিংবা দলীয় কর্মীদের হজে পাঠাতেন। এবারো তাই হয়েছে। স্বাস্থ্য সহায়ক হিসেবে অসংখ্য নার্স ছাড়াও এই পেশার ধারেকাছেও নেই এমন অনেক রাজনৈতিক পছন্দের লোক প্রতিবছর হজে যান। এখানে তার কোনো খরচ নেই। সরকারেরও কোনো খরচ নেই। সব টাকা হাজীদের কাছ থেকে যায়।
ধর্মমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ প্রায় ৫০ জনের মতো বিশিষ্ট আলেমকে এ ফ্রি কোটায় হজে পাঠান। এখানে এমন বয়োবৃদ্ধ আলেম, অনেক ধনবান আলেম, পিতাপুত্র বা প্রতিনিধিত্বশীল নন তবে মন্ত্রীর পছন্দের কিংবা রাজনৈতিক কারণেও বহু মানুষের নাম তিনি দিয়েছেন। এ নিয়ে পরবর্তীতে কোনো উন্মুক্ত ময়দানে যে কোনো শ্রেণির বা ঘরানার আলেমকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বন্ধের জন্য এক কেজি মাংস বা একটি হাড্ডি ছুঁড়ে দেয়ার কথা বলা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
পবিত্র হজের সাথে ওলামায়ে কেরামকে এমন নিকৃষ্ট তুলনা বা উদাহরণ অতীতে কোনো দায়িত্বশীল করেছেন বলে মনে হয় না। আলেম আলেমই। হন তিনি আলিয়া, কওমী কিংবা অন্য কোনো ধারার। এ বিষয়ে আলেম সমাজে তো বটেই, সাধারণ গণমানুষের মনেও প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। দেশব্যাপী এ নিয়ে তুলকালাম চলছে। মন্ত্রী অবশ্য একটি ব্যাখ্যা তার দপ্তর থেকে প্রকাশ করেছেন। যা অনেকটাই বেমানান ও অসংলগ্ন। মন্ত্রী নিজে লন্ডন সফরে থাকায় সেখানে এর প্রতিক্রিয়া তিনি আঁচ করতে পেরেছেন এবং হোটেল কক্ষে একজন প্রবাসী মুফতী সাহেবের সাথে অনলাইনে এসে প্রশ্নোত্তরের মতো কিছুটা সাফাই বয়ান দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
১৪ তারিখ সম্ভবত তিনি তেহরানে ইসলামী ইউনিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেন। ঢাকায় ইরানী রাষ্ট্রদূত নিজে গিয়ে তাকে এ সম্মেলনের দাওয়াত করেছেন। এখানেও তাকে এ বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশি আলেমগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হতে পারে। দেশে ফিরেও তিনি আলেমগণের কাছে কৈফিয়ত দিতেই থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তাকে এসব কথার জবাব দিতে হবে। তবে উত্তম হবে, দায়িত্বশীল হিসেবে এখন আগের মতো বেশি কথা না বলে সংযতবাক হওয়া। জবানের হেফাজত করা। ভেবে কথা বলা, কম কথা বলা। কথা বলে পরে বারবার ব্যাখ্যা দেয়ার এ অভ্যাস তাকে এবং তার সরকারকে বারবার বেকায়দায় ফেলবে। বিশেষ করে এখন শীত মৌসুম। সারাদেশে আগামী ৪-৫ মাস চলবে ওয়াজ ও তাফসীর মাহফিলের ধুম। আলোচকগণ যদি ধর্মমন্ত্রীর এ বক্তব্যটিকে নিন্দা ও ক্ষোভের সাথে প্রচার করতে থাকেন তাহলে এ আলোচনা আর ছোট্ট পরিসরে থাকবে না। কোটি কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। সরকারের অর্জন অনেকটাই মøান হবে। হজ করানোর যে সুফল হতে পারত তা তো রীতিমতো শেষ হয়েই গেছে। ভবিষ্যতেও সরকারের ডাকে কোনো আত্মমর্যাদাশালী আলেম সাড়া দিবেন না।
যতদূর জানি, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এমনিতে লোক হিসেবে খারাপ না। বেশ মিশুক, সদালাপী। কর্মঠও বটে। সরল মনে কথা বলতেই থাকেন। মনে করেন, মাহফিল বা মিডিয়া তার ড্রয়িং রুম। দলীয় কর্মীদের সাথে নিজ এলাকায় বসে প্রাণখুলে যেভাবে আড্ডা দেয়া যায়, কথা বলা যায়। মন্ত্রিত্বের চেয়ারে বসে ভর মজলিসে কিংবা মিডিয়ার সামনে এতটা খোলামেলা হওয়া যায় না। আশা করি, তিনি দেশের ওলামায়ে কেরামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল আলেমগণের সাথে কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার করে নেবেন। আর তিনি ভবিষ্যতে খুব ভেবে কথাবার্তা বলবেন। কম কথা বলবেন। শুধু তিনি নন, দায়িত্বশীল সকলে কথা বলার সময় খুব ভেবে-চিন্তে বলবেন। বাক সংযম পালন করবেন। মিতবাক হবেন। কেননা, জবান সংযত না রাখলে একটি ভুল কথাই মানুষের সব অর্জন নষ্ট করে দিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।