পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেট থেকে ছেড়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল উদয়ন এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে ঢাকার দিকে আসছিল তূর্ণা নিশীথা। এমন অবস্থায় রাতের শেষ ভাগে মন্দবাগ স্টেশনের কাছে উদয়নকে ধাক্কা দেয় তূর্ণা নিশীথা। ট্রেনের লাইন পরিবর্তনের সময়টাতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ৬টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠে যায়। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায়ই তূর্ণা নিশীথা এসে ধাক্কা দেয়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবেই। মন্দবাগ রেলস্টেশন মাস্টার দাবি করেছেন, তূর্ণা মন্দবাগ স্টেশনের প্রবেশের আগে আউটার ও হোম সিগন্যাল দুটোই লাল ছিল। ট্রেন চালক তা না মেনেই ঢুকে পড়াতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কি চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? নাকি তাকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছিল। চালকের সাথে তার সহকারিও কী ঘুমিয়ে ছিলেন। ইঞ্জিনে যে ডেডম্যান প্যাডেল আছে সেটা তাহলে কাজ করেনি কেনো? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত কমিটিও তদন্তকালে দুটি কারণ সামনে রেখে এগুবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এদিকে, এ দুর্ঘটনার পর পরই গাঢাকা দিয়েছেন তূর্ণা এক্সপ্রেসের চালক (লোকোমাস্টার) তাছের উদ্দিন এবং সহকারি চালক সুমন দে। ইতোমধ্যে এই দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরীর দাবি সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটের পর স্টেশনের আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সংকেত) দেওয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়াতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীই তখন ঘুমিয়েছিলেন। যে কারণে বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও।
স্টেশন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সংকেত) অমান্য করেন অথবা তাকে সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। মন্দবাগ রেল স্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য এই সিগন্যাল দেওয়ার কথা। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে পেরেছিল। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে উদয়নের পেছনের কয়েকটি বগিতে ধাক্কা দেয়। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটা চলন্ত ট্রেনে এক সাথে চালক ও সহকারি চালক ঘুমিয়ে পড়বেন এমন ঘটনা বিরল। আর কোনো কারণে যদি তারা ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে ইঞ্জিন আপনাআপনি বন্ধ হয়ে ট্রেন থেমে যাওয়ার কথা। এই টেকনোলজি এখন প্রতিটি ইঞ্জিনে আছে জানিয়ে রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী জানান, ট্রেন চালকদের পায়ের কাছে একটি প্যাডেল আছে। যেটা ডেডম্যান প্যাডেল নামে পরিচিত। এই প্যাডেলটি প্রতি ৫৫ সেকেন্ডে কমপক্ষে একবার চাপ দিতে হয়। একবার চাপ না দিলেই ইঞ্জিনের ভিতরে প্রথমে হলুদ পরে লাল বাতি জ্বলে উঠবে। সাথে শব্দও হবে। এরপরও যদি ডেডম্যান প্যাডেলে চাপ না দেয়া হয় তবে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে ট্রেন আপনা আপনি থেমে যাবে। রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, চালক যদি ঘুমিয়েই পড়তো তাহলে ডেডম্যান প্যাডেল কাজ করলো না কেন? তদন্তকারীদের বিষয়টি নজরে এনে একজন ট্রেন চালক বলেন, সাধারণও ডেডম্যান প্যাডেল বিকল করে রাখার দায়দায়িত্ব ট্রেন চালকদের উপর চাপানো হয়। কিন্ত ওটা আমাদের সেফটির জন্যই দেয়া। তাই আমরা ডেডম্যান প্যাডেল চেপে চলতেই অভ্যস্ত।
ওই চালক বলেন, দুজন চালক একসাথে ঘুমিয়ে পড়বেন এটাও বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। তবে রেল গবেষক নাজমুল ইসলাম মনে করেন চলন্ত ট্রেনে দুই চালক এক সাথে ঘুমিয়ে পড়ার অসম্ভব কিছু নয়। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ট্রেন চালকরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায় না। রাত জেগে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশের রানিংরুমে তারা ঘুমাতে পারে না। তিনি বলেন, ঢাকার মিটার গেজের যে রানিং রুম আছে সেখানে একসাথে ১২/১৪জন ঘুমায়। ছোট টুল আকৃতির খাটে ছারপোকার কামড় সহ্য করে চালকরা ঘুমাতে পারেন না। ঈশ্বরদী, রাজশাহী, পার্বতীপুর, পাহাড়তলী রানিং রুমেরও একই দশা। নাজমুল ইসলাম বলেন, রানিং রুমে ট্রেন চালকদের জন্য যে বিছানা, চাদর, বালিশ দেয়া হয় সেগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকে। অথচ এগুলো পরিস্কারের জন্য চালকদের কাছে থেকে টাকা নেয়া হয়। কমলাপুর লোকো সেডের কাছে চালকদের রানিংরুমের করুণ হাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রানিং রুমের পেছনেই সায়েদাবাদ-রামপুরা মহাসড়ক। মহাসড়কে চলাচলরত ভারী যানবাহনের শব্দে কোনো চালকই রাতে ভালমতো ঘুমাতে পারেন না। অথচ ভোরে আবার তাদেরকে ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। লালমনিরহাট বিভাগের এক ট্রেন চালক এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমরা এ নিয়ে বহু অভিযোগ করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। তিনি বলেন, ট্রেন বাড়ছে। কিন্তু ট্রেন চালক বাড়ছে না। এজন্য বাড়তি ডিউটি করতে হয়। বিশ্রামহীন, বিরামহীন ডিউটি করার পর রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থাও নাজুক। সব মিলিয়ে অধিকাংশ ট্রেন চালকের শারিরিক অবস্থা ভাল নয়। অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত। কয়েকজন হার্ট এটাক করে মারাও গেছেন। হার্টে রিং লাগিয়ে চলছেন বেশ কয়েকজন।
ট্রেন চালকদের অভিযোগ, ডিউটির পর তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তারা বহুবার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু কতিপয় স্বার্থপর কর্মকর্তা তাদের এসব আবেদন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছান না। এতে করে আবেদন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে।
এদিকে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটিকে আসলেও সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল কিনা তা নিয়েও যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় মন্দবাগ স্টেশনে দুই ট্রেনের ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। সেজন্য একটা ট্রেন স্টেশনে প্রবেশের পর আরেক ট্রেনকে ওই স্টেশন অতিক্রম করার জন্য সিগন্যাল দেয়ার কথা। তার আগে সিগন্যাল দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের ক্রসিং কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং ওই সময় কন্ট্রোল থেকে কি সংকেত দেয়া হয়েছিল তা রেকর্ড বই দেখলেই পাওয়া যাবে। তবে এমনও হতে পারে কন্ট্রোল থেকে বলার পরেও স্টেশন মাস্টার ভুল করে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে রেখেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। কি কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বের করার জন্য আমরা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি কমিটির প্রতিবেদনে সঠিক কারণটি বেরিয়ে আসবে। আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।