পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের অযোধ্যার বিতর্কিত জায়গা নিয়ে মামলার রায় গত শনিবার দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এই রায় নিয়ে দেশটির মুসলিম সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে অসন্তোষ জানিয়েছে। রায়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি লেখা প্রকাশ করে। অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই লেখাটি নিচে তুলে ধরা হলো-
এই রায়টা কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হলো, সবটা ঠিক বুঝতে পারছি না। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই আদালত একটা রায় দিলে তা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না। ৪০০-৫০০ বছর ধরে একটা মসজিদ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই মসজিদকে আজ থেকে ২৭ বছর আগে ভেঙে দেওয়া হলো বর্বরদের মতো আক্রমণ চালিয়ে। আর আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বললো, ওখানে এবার মন্দির হবে। সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে তো একটা বিষয় রয়েছে! এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যাতে দেশের সংবিধানের ওপর থেকে কারও ভরসা উঠে যায়। আজ অযোধ্যার ক্ষেত্রে যে রায় হলো, সেই রায়কে হাতিয়ার করে ভবিষ্যতে এই রকম কাÐ আরও ঘটানো হবে না, সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন? শুধু অযোধ্যায় নয়, মথুরা এবং কাশীতেও একই ঘটনা ঘটবে— এ কথা আগেই বলা হতো। যারা গুন্ডামি করে বাবরি মসজিদ ভেঙেছিলেন, তারাই বলতেন। এখন আবার সেই কথা বলা শুরু হচ্ছে। যদি সত্যিই মথুরা বা কাশীতে কোনও অঘটন ঘটানো হয় এবং তার পরে মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয়, তা হলে কী হবে? সেখানেও তো এই রায়কেই তুলে ধরে দাবি করা হবে যে, মন্দিরের পক্ষেই রায় দিতে হবে বা বিশ্বাসের পক্ষেই রায় দিতে হবে। অযোধ্যা মামলা এর আগেও সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে। তখনই আদালত স্বীকার করে নিয়েছিল যে, বিতর্কিত জমিতে মসজিদ ছিল। যেখানে বছরের পর বছর ধরে নামাজ পড়া হচ্ছে, সেই স্থানকে মসজিদ হিসেবে মান্যতা দেওয়া উচিত, এ কথা আদালত মেনে নিয়েছিল। তা হলে আজ এই নির্দেশ এলো কিভাবে? যেখানে একটা মসজিদ ছিল বলে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই মেনেছে, সেখানে আজ মন্দির বানানোর নির্দেশ সেই সুপ্রিম কোর্টই দিচ্ছে কোন যুক্তিতে? ভারতীয় পুরাতাত্তি¡ক সর্বেক্ষণ (এএসআই) জানিয়েছিল, ওই মসজিদের তলায় একটি প্রাচীনতর কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই প্রাচীনতর কাঠামো যে মন্দিরই ছিল, এমন কোনও প্রমাণ তো মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট নিজেও মেনে নিয়েছে যে, পুরাতাত্তি¡ক রিপোর্টে কোনোভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না যে, একটা মন্দিরকে ভেঙে ওখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে আজ মন্দির তৈরির নির্দেশ? বিশ্বাসের ভিত্তিতে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বললো, অনেক হিন্দুর বিশ্বাস ওখানে রামের জন্ম হয়েছিল। বিশ্বাস বা আস্থার মর্যাদা রাখতে ওই বিতর্কিত জমি রামলালা বিরাজমানের নামে দিয়ে দেয়া হলো। এটা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত হলো? রামচন্দ্র আদৌ ছিলেন কি না, কোথায় জন্মেছিলেন, সে সবের কোনও প্রামাণ্য নথি কি রয়েছে? নেই। রাম শুধু মহাকাব্যে রয়েছেন। সেই স‚ত্রে অনেক মানুষের মনে একটা বিশ্বাসও রয়েছে। কিন্তু সেই বিশ্বাসের বলে একটা মসজিদের জমি মন্দিরের নামে হয়ে যেতে পারে না। কালকে যদি আমি বলি, আপনার বাড়ির নিচে আমার একটা বাড়ি রয়েছে, এটা আমার বিশ্বাস, তা হলে কি আপনার বাড়িটা ভেঙে জমিটা আমাকে দিয়ে দেয়া হবে? সূত্র : এবিপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।