Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

‘স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উসকানি দিয়ে ও মুখরোচক কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিপথে নিলে তা মেনে নেয়া হবে না। আর তাদের যদি এসব করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ তাদেরকেই জোগান দিতে হবে। নইলে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেবে। কথায় বলে- স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়; এটাও মাথায় রাখতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ত্রিবার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যায় পরিচালনার অর্থ সরকার দেবে। সব রকম উন্নয়ন সরকার করবে। সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে। আর সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এটা কখনও হতে পারে না। আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বিপথে নিলে টাকার জোগান বন্ধ করে দেয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ছেলেমেয়েররা সবচেয়ে কম খরচে উচ্চ শিক্ষা পায়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত অল্প খরচে তা দেয়া হয় না। সেখানে স্বায়ত্তশাসন আছে একথা সত্যি। কিন্তু টাকা দিচ্ছে কারা? টাকা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেয়া টাকা ইউজিসিতে যায়। সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে শিক্ষকরা বেতন-ভাতাসহ আরও যা কিছু আছে পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটিতে কয় টাকা খরচ করে? মাসে বড় জোর দেড়শ’ টাকা। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চ শিক্ষা হয়! যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে? আর আমাদের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে কত লাগে? সে টাকা কে জোগান দেয়? জোগান দেয় সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় এক একজন ছাত্রের পিছনে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল কিংবা কারিগরিতে আরও বেশি টাকা খরচ হয়। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, উপযুক্ত শিক্ষা পাবে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলবে সেটাই আমরা চাই।

আন্দোলনের নামে পড়াশোনা ক্ষতির কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমরা বুঝি না? যারা কথা বলছেন তারাই কেবল বোঝেন আর বোঝেন যারা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন তারা। আর পড়াশোনা নষ্ট করে সেখানে স্ট্রাইক করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ব্যাহত করবেন, তারা বোঝেন আর বুঝব না আমরা। এটা তো হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরণের বালকসুলভ কথাবার্তা না বলাই ভাল বরং ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে। তাদের লেখাপড়া শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়। উপযুক্ত সময়ে তারা ভাল রেজাল্ট করবে এবং তারা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা চাই। কাজেই উসকানি দিয়ে ছাত্রদেরকে বিপথে নেয়া আর এখানে মুখরোচক কথা বলা, এটা কখনো কেউ মেনে নিতে পারে না। আর তা যদি করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ নিজেরা জোগান দিতে হবে। নিজেদের বেতন নিজেরা নিতে হবে। নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে, সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে। কারণ স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক দেবে, সরকার কেন খরচ করবে। সরকার কেন খরচ করবে তাহলে সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে, কোনটা করবে?

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, আমি এইজন্য বললাম, ইদানিং দেখছি, কোন কথা নেই, বার্তা নেই, ব্যবস্থা নেয়া হওয়ার পরও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ তুলছে। আমাদের আইন আছে কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে, আর সেটা যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে যে অভিযোগকারী ওই আইনে তার বিচার হয়, সাজা হয়। এটা কিন্তু আইনে আছে। কাজেই যারা কথা বলছেন, তারা আইনগুলো ভালভাবে দেখে নেবেন, সেটাই আমরা বলব। কারণ আমরাও তো ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনা করেই আসছি। এটাও তাদের ভুলে গেলে চলবে না।

বক্তব্যের শুরুতেই সবার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন ঝড়ে বুলবুলে যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। ঝড়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথাও উল্লেখ করে তিনি ঝড় মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের সব রকম প্রস্তুতি নেয়া আছে। ঝড় পরবর্তী সময়ে ত্রাণসহ সব প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিন সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হলে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতি তাকে স্বাগত জানান। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা। মঞ্চের আরেক পাশে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজ নিজ জেলার সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ