Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক তান্ডব মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সিডর, আইলা, রোয়ানু, নার্গিস, ফণী ও বুলবুল নানা নামের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রায়ই আঘাত হানছে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে। অথচ ভয়াল প্রাকৃতিক তান্ডবের ছোবল মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা একেবারেই দুর্বল। প্রতিবার ছোবলের সময় এসব আলোচনায় আসে। পরবর্তীতে দৃষ্টি দেয়া হয় না বলে উপকূলবাসীর অভিযোগ। উপকূল কয়রার বাসিন্দা তসলিম উদ্দীন বললেন, নড়বড়ে বেড়ি বাঁধের আতঙ্কে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মহাবিপদ সংকেত আসলেই মহাবিপদের মধ্যে পড়ি।

সূত্রমতে, প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবনের অবস্থা খুবই কাহিল। সুন্দরবন বুক পেতে দুর্যোগের পর দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দিতে দিতে ‘পেরেসান’ হয়ে পড়েছে। সুন্দরবন ১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন থেকে শুরু করে সিডর, আইলা ও রোয়ানুসহ ছোট বড় ঝড় ও জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছে বিশাল এলাকার উপকূলীয় জনপদকে। অতীতের রেকর্ড পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন সুন্দরী, গেওয়া, শাল, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, পশুর, ধন্দুল ও গোলপাতাসহ উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গ্রীন বেল্ট উজাড়, বনে ঘন ঘন আগুন লাগা, নৌরুটের শব্দ দুষণে জলজ ও বনজ প্রাণীসহ জীবÑবৈচিত্রের অপুরণীয় ক্ষতি, বাস্তবে গত চার যুগে নতুন বনায়ন না করা, এবং সুন্দরবন থেকে নেয়া ছাড়া দেয়ার বিষয় দৃশ্যমান না হওয়ায় পৃথিবীর অনন্য সম্পদ সুন্দরবনের বনভূমি প্রাকৃতিক ঢাল দূরের কথা নিজেই বিপদের সন্মুখীন। তার ওপর রয়েছে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ।

বাংলাদেশে ঘন ঘন প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের প্রাকৃতিক তান্ডব থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে পানি বিশেষজ্ঞ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলের সচেতন লোকজন মনে করছেন। সুন্দরবন সংলগ্ন ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় শ্যামনগর-আশাশুনি, কয়রা-দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাকৃতিক ছোবলে প্রতিবারই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বাড়িঘর, ফসল ও মাছের ঘের।

সূত্র জানায়, সুতারখালি, দাকোপ, কয়রা, লেবুবনিয়া, চাদনীমুখা, গাবুরা, ডুমুরিয়া, নীলডুমুর ও সাউথখালিসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কংক্রিট বাঁধের সংখ্যা খুবই কম। উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশিরভাগ অংশ মাটির তৈরি। যা দীর্ঘস্থায়ী নয়। বারবার বাঁধ ভেঙে যায়, আর বারবার মেরামত ও সংস্কার-এভাবে বছরের পর বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্বপালন করে থাকে। কীভাবে প্রাকৃতিক ভয়াল ছোবল থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ বরাবরই অনুপস্থিত রয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় সিডর এর মাত্র ১৮ মাস পর গত ২৪ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা উপকূলীয় জনপদ তছনছ করে দেয়। যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। একের পর এক মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা একেবারেই দুর্বল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ