Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসকদের জন্য প্রহসনমূলক আইন প্রস্তাব করেছে সরকার

সংবাদ সম্মেলনে এফডিএসআর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সম্প্রতি সরকারের প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৮’ আইনের খসড়া প্রকাশ করেছেন সরকার। কিন্তু এই আইনকে চিকিৎসকদের জন্য প্রহসনমূলক বা নিবর্তনমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে চিকিৎসকদের একটি অংশ। তাদের মতে, চিকিৎসকদের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের বিয়বস্তুকে একসঙ্গে করে একটি অনৈতিক আইনের খসড়া করা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস’ (এফডিএসআর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন এবং অবিলম্বে^ ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল­াহ আল মামুনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইশতিয়াক রেজা, সংগঠনটির কোষাধক্ষ্য ডা. ফরহাদ মঞ্জুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জাহিদুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ডা. নোমান চৌধুরী, মিডিয়া ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহেদ ইমরান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে চিকিৎসকদের ‘চেম্বার প্রাক্টিস ও বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরী অধ্যাদেশ ১৯৮২’ অনেকটা জোর করে চিকিৎসকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালিন সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সেই অযৌক্তিকতার কিছু ছাপ বর্তমানের প্রস্তাবিত আইনেও রয়ে গেছে। এ আইনে চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে মিলিয়ে এক অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনের বেশ কয়েকটি ধারা বিভ্রান্তিকর বা অসম্পূর্ণ।

প্রস্তাবিত আইনের ১০(২) ধারায় ছুটির দিনে স্ব-স্ব কর্মস্থলের জেলার বাইরে বেসরকারী হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ফিস গ্রহণপূর্বক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনের কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এর ফলে বিভিন্ন জেলার সাধারণ রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার অভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের প্রস্তাবটি সমর্থনযোগ্য নয়। এর কারণ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও এলাকার ভিত্তিতে চিকিৎসকদের ফি ভিন্ন ভিন্ন হওয়াও স্বাভাবিক। তাছাড়া, অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণের ব্যবস্থা না থাকলেও কেবলমাত্র চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে রোগী দেখার ফি নির্ধারণের এই প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রস্তবিত আইনে অপ্রয়োজনীয় ধারা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ধারা ১২ (১) এবং ১২(২) সেবা গ্রহীতার বসার জায়গা না থাকলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব দুটিও সঙ্গত কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। ধারা ১২ (৩) এবং ১২ (৪) বর্ণিত বিষয় দুটো ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) সুস্পষ্টভাবে উলে­খ করা আছে। এটি নতুন করে অন্তভূক্তির যৌক্তিকতা নেই।
ধারা ১২ (৩) ও ১২ (৪) ও বিএমডিসি আইন ও মেডিক্যাল এথিক্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এর জন্যও আলাদা আইনের প্রয়োজন নেই। ধারা ১৩ তে উল্লেখিত ‘রোগী বা রোগীর সঙ্গীকে চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিতকরণ ও তথ্য প্রদানের’ ব্যাপারটি বিএমডিসি নির্ধারিত ‘কোড অব কনডাক্টের’ আওতাধীন, একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক যা মানতে বাধ্য। এই বিষয়টিকে আলাদা করে প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি না।

প্রস্তাবিত আইনের বিদেশী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি থেকে সেবা প্রদান এবং বিদেশী হাসপাতাল স্থাপনের অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত ধারা ২০ এবং ২১’র প্রেক্ষিতে বক্তারা বলেন, বিদেশী চিকিৎসক বাংলাদেশে প্র্যাকটিসের সুযোগ পাওয়ায় আমাদের বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১ নম্বর ধারায় নির্ধারিত পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা হাসপাতাল থেকে অবহেলার বিষয়টি সংশোধন করে নজরে আনতে হবে। তাছাড়া চিকিৎসক, প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এমন কিছু খসড়া আইনে কোন প্রস্তাব রাখা হয়নি।

কোম্পানী থেকে অপরাধ সংঘটনের কথা বলা হলেও সরকারী হাসপাতালসমূহের ক্ষেত্রে এই আইনটি প্রযোজ্য হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। চিকিৎসা-কালীন রোগীর মৃত্যু হলে বাংলাদেশ পুলিশ ৮৮ ধারা অগ্রাহ্য করে চিকিৎসককে ৩০৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি রাষ্ট্রের জ্ঞাত থাকা সত্তে¡ও অত্যন্ত সুকৌশলে স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষা আইন- ২০১৮ খসড়ায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ