পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। আড়াইশ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি নিজেই কালের সাক্ষী। কিশোরগঞ্জ-তো বটেই বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সারা দেশেই যার রয়েছে আলাদা পরিচিতি। সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে ‘মসজিদের দানবাক্সে দেড় কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে নতুন করে আলোচনায় আসে মসজিদটি।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি অবস্থিত। যার দূরত্ব জেলার রেল স্টেশন কিংবা বত্রিশ বা গাইটাল বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার। রয়েছে পাঁচতলা উঁচু দৃষ্টিনন্দন মিনার। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। শুধু মুসলিমদের কাছেই নয়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কাছেও মসজিদটি পবিত্র স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
মসজিদটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রæতি। এরমধ্যে প্রসিদ্ধগুলোর একটি হলো- বীর ঈশা খানের অধস্তন পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা আধ্যাত্মিক সাধনায় জীবন যাপন করতেন। আধ্যাত্মিক এই পুরুষ খর¯্রােতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্ত সমবেত হন। পরে তার এবাদতের জন্য দেওয়ান পরিবারের পক্ষ থেকে নদীর মাঝখানে টিলার ওপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। কালের পরিক্রমায় যেটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
আরেক জনশ্রæতি হলো, হয়বতনগরের প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকত। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ‘পাগলা বিবির নামে পরিচিতি পায়। এরকম আরো অসংখ্য জনশ্রæতি মিলে এলাকার লোকমুখে। বর্তমানে মসজিদের প্রায় ৪ একর জায়গা রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ১০ মে ওয়াকফ স্টেটে চলে যায় মসজিদটি। জেলা প্রশাসক সভাপতি হিসেবে মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন।
তবে মসজিদটি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনায় আসে মূলত দানবাক্সের জন্য। মুসলিম-অমুসলিম সবাই এ মসজিদে দুই হাত খুলে দান করেন। এলাকায় প্রচলিত আছে; বিশ্বাস ও একনিষ্ঠ মনে এখানে মানত বা দান করলে রোগবালা-মসিবত দূর হয়। শুধু টাকা-পয়সা নয় দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। সাধারণত প্রতি তিন মাস পর পর মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। গত ২৬ অক্টোবর মিলে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি দেড় কোটি টাকা। ফলে সারাদেশের মানুষের মাঝে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয় মসজিদটিকে নিয়ে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভ‚ঁইয়া জানান, গত অর্থ বছরে মসজিদের আয় হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৪১৩ টাকা। দানবাক্সে দৈনিক প্রায় দু’লাখ টাকা জমা পড়ে। এই টাকায় শুধু পাগলা মসজিদের নয় অন্যান্য মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। অনুদান দেওয়া হয় এলাকায় দরিদ্র অসহায়, অসুস্থ এবং অসচ্ছল পরিবারকে। চলে লেখাপড়া, চিকিৎসা, অভাবী নারীদের বিয়েতে সাহায্যসহ নানা গণমুখী কার্যক্রম। মসজিদের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে নুরুল কুরআন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদরাসা।
মসজিদ নির্মাণ উপ-কমিটির আহŸায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে ৫০ সহস্রাধিক মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।