পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যুগ যুগ ধরে দখলদারদের তালিকা তৈরি ও নোটিশ ইস্যু এবং বিভিন্ন সময় লোকদেখানো তর্জন গর্জনের পর অবশেষে যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ দখলমুক্ত ও খনন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া প্রভাবশালী দখলদারদের স্থাপনায় আঁচড় লাগেনি। ছোটখাটো কয়েকটি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করেই অভিযান বন্ধ হয়ে গেল। মাসের পর মাস স্কেভেটর নদের বুকে ফেলে রেখে খনন না করার হেতু কী তা যশোরবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। ভৈরব নদ রক্ষা কমিটির উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছায় ২শ’৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে মরা ভৈরব খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা যশোরবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়। কিন্তু প্রভাবশালী দখলদার ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের কারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ও খনন বন্ধ রয়েছে। রহস্যজনক কারণে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
যশোর শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের দড়াটানা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে দুইদিকে পরিস্কার দেখা যায় নদের পাড় দখল করে বড় বড় অট্রালিকা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যার সিংহভাগই প্রভাবশালীদের। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তালিকা বড় হলেও হাতেগোনা কিছু উচ্ছেদ হয়েছে কালেক্টরেট ভবনের উল্টোদিকে হযরত গরীব শাহ সড়কের অংশে। যেসব দোকান ছিল ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লেপ তোষক ও বইয়ের। কোন বিল্ডিংএ ন্যুনতম আঁচড় লাগেনি। বরং প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে কৌশলে চাপ সৃষ্টি করে থামিয়ে দিয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী দাবি করেছেন, পানি আইন মেনে প্লাবন ভ‚মি সংরক্ষণে করতে গিয়ে কিছু জটিলতায় বিলম্ব হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পাউবো কোন উদাসীনতা দেখাচ্ছে না বা গড়িমসি করছে না।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নদী রক্ষা কমিটির কাছে লিগ্যাল কমিটি করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলে সিএস রেকর্ড, প্লাবন ভ‚মি সংরক্ষণ, পানি আইন ও হাইড্রোলজিক্যাল ডাটা অনুযায়ী নদের ভ‚মি জরীপ করে অবশ্যই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে। একইসঙ্গে খননও হবে। তাদের কথা, প্রকল্প বাস্তবায়নে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সবকিছু ঠিকঠাক না করে কিছু উচ্ছেদ কিছু খনন হলো কেন-এ প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ঐহিত্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব আর মাথাভাঙ্গা অভিন্ন ধারায় দর্শনা রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। কিন্তু ১৮৬১ সালে শিয়ালদহ-কুষ্টিয়া রেলপথ স্থাপনের সময় ভৈরব নদ ভরাট করে মাথাভাঙ্গা নদীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুরনদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও স¤প্রসারিত হয়। ভৈরব নদে একসময় বড় বড় জাহাজ ভিড়তো। এখন ভৈরবে নদীপথ নেই বললেই চলে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ’৮০এর দশক থেকে মূলতঃ নদ দখল শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে বাঁশের খুটি তারপর কংক্রিটের পিলার, পরবর্তীতে বিশাল বিশাল অট্রালিকা, একপর্যায়ে হয়ে যায় পৈত্রিক সম্পত্তি। কিভাবে নদের জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলো তা কখনো তদন্ত হয়নি। যশোরবাসীর প্রত্যাশা ছিল এবারের অভিযানে উচ্ছেদ হবেই। কিছু হয়েছে এটিও সত্য। কিন্তু হঠাৎ থেমে যাওয়ায় যশোরবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অথচ এটি বাস্তবায়ন হলে যশোর শহরের চেহারা পাল্টে যেত। ভৈরব নদ খননের মাধ্যমে দুইপাড়ে পায়ে হাটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল। বহুদিন ধরে ভৈরব নদ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোর শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন যশোরের মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।