পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেলের আয় কমেছে। যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধি, নতুন কিছু সেবা চালু ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি সত্তে¡ও আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ইনকিলাবকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়াতে গিয়ে অনেক কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। এ অবস্থা থাকবে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এক সময় রেলই হবে সবচেয়ে লাভজনক সেক্টর।
রেলওয়ের হিসাব মতে, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) রেলের মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮ কোটি টাকা কম।
গত অর্থবছরে কিছুটা কমলেও আগের দুই অর্থবছরে রেলওয়ের আয় ছিল তুলনামুলক বেশি। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেলের আয় হয়েছিল প্রায় ৯০৪ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এক ধাক্কায় ৪০০ কোটি বেড়ে আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকায়। এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পায় আরো ১৮২ কোটি টাকা। এ সময় রেলওয়ের মোট আয় হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে গত অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ নেমে আসে প্রায় ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকায়। রেলওয়ের আয়ের প্রধান দুটি উৎস হলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন খাত। রেলওয়ের গত অর্থবছরের আয় খাত পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় অন্যান্য খাতে বাড়লেও মূলত এ দুটি খাতেই আয় কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক আয়ে।
প্রতি বছর রেলের বহরে নতুন নতুন ট্রেন যুক্ত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন খাতেও ব্যবসায়িক ও সরকারি প্রয়োজনেও রেলের ব্যবহার বেড়েছে। ভাড়া বাড়লেও সা¤প্রতিক বছরগুলোয় যাত্রীদের মধ্যে রেলভ্রমণের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে বেশি। বাড়ানো হয়েছে বহরের কোচ সংখ্যাও। রেলওয়ের অবকাঠামো খাতে গত এক দশকে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে সরকার। এছাড়া ট্র্যাক উন্নয়ন, নতুন রেলপথ নির্মাণের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও সেবার মানে নতুনত্ব আনতে না পারায় বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রত্যাশিত মাত্রায় আয় করতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের হিসাব বিভাগ থেকে স¤প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলভবনে সংস্থাটির আয়ের হিসাব পাঠানো হয়। এটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের যাত্রী খাতে আয় হয়েছে ৮৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে আয়ের পরিমাণ ছিল ৯০৫ কোটি ৩০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। গত অর্থবছরে পণ্য পরিবহন খাতে রেলওয়ের আয় ছিল ২৬৬ কোটি ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
এছাড়া গত অর্থবছরে পার্শেল খাতে ২৪ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও বিবিধ খাতে ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা আয় করেছে রেলওয়ে। দুটি খাতেই আয়ের ধারা ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
আয় হ্রাসের কারণ হিসেবে ইঞ্জিন স্বল্পতাকে দায়ী করছেন রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা। বিভাগটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রেলের উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইঞ্জিন। এটি না থাকায় রেলওয়ে কার্যত ধুঁকছে। কোচ আমদানি, ট্র্যাক সংস্কার ও নতুন ট্র্যাক নির্মাণ হলেও ইঞ্জিন স্বল্পতায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এ কারণে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য পরিবহন ধীরে ধীরে কমে আসছে। এছাড়া অতিরিক্ত কোচ সংযোজনে রেলভবন থেকে অনুমতি নেয়ার নিয়মটিও রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির অন্তরায়।
তবে এসব সমস্যার মধ্য দিয়েও বেসরকারি খাতে পরিচালিত ট্রেনগুলো বিপুল অঙ্ক আয় করছে। এটা প্রমাণ করে আয় কমে যাওয়ার পেছনে অব্যবস্থাপনাও অনেকটাই দায়ী। কারণ এখনও শত শত যাত্রী বিনাটিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার সুযোগ পায়। বিশেষ করে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-নেত্রকোনা , ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-চিলাহাটি, ঢাকা-রংপুর-লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম রুটে অসংখ্য যাত্রী বিনাটিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করছে। এসব রুটে চলাচলকারী ট্রেনের পরিচালক (গার্ড), এটেনডেন্ট ও পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে বিনাটিকিটে ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বহু অভিযোগ দেখা গেছে। কিন্তু তারপরেও দুর্নীতিবাজ রেলকর্মচারিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে বিনাটিকিটের যাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকট বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। যাত্রী চাহিদা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালাতে পারছে না রেলওয়ে। এছাড়া গত কয়েক বছরে ট্রেন পরিচালনার ওয়ার্কিং টাইম টেবিল বাস্তবায়ন না করায় রেলওয়ে সেবার মানেও পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন রেলসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সড়কপথের দ্রুত উন্নতিও রেলওয়ের আয় হ্রাসের ক্ষেত্রে কিছুটা অনুঘটকের কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক সময়ের ব্যস্ততম রেলরুট ঢাকা-চট্টগ্রামে রেলওয়ের যাত্রী চাহিদায় এখন কিছুটা মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। এ রেলপথের ৩২১ কিলোমিটারের সিংহভাগ ডাবল লাইন হয়ে যাওয়ার পরও দ্রুতগামী ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছতে ন্যুনতম সময় লাগে সোয়া ৫ ঘণ্টা। রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ রুটে যাতায়াতের (বিরতিহীন ট্রেন) সময় সাড়ে ৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকার মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেলের বদলে সড়কপথকেই বেছে নিচ্ছেন অনেক যাত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।