Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাদেক হোসেন খোকার লাশ আসছে আজ

রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া : ৪টি জানাজা শেষে দাফন হবে জুরাইনে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। রণাঙ্গণের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অর্জন করেছিলেন গেরিলা যোদ্ধার খেতাব। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে বীরের মতো লড়েছেন দীর্ঘ ৯ মাস। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন লাল-সবুজের একটি স্বাধীন পতাকা। জাতীয় উপহার দিয়েছিলেন একটি স্বতন্ত্র ভূ-খস্ড। আজ বুকের ওপর লাল-সবুজের সেই পতাকা নিয়েই প্রিয় জন্মভ‚মিতে ফিরছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। দেশমাতৃকা স্বাধীন করার যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরলেও এবার ৭১’র মতো তরুণ তুর্কি হিসেবে নয়, নিথর নিশ্চল হয়ে একাত্তরের সেই তেজী তরুণ জীবন-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নিজ দেশে ফিরে আসছেন। যদিও জীবিত অবস্থায় দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা ছিল সাদেক হোসেন খোকার। কিন্তুপাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফনের শেষ ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। ট্রাভেল পারমিটে খোকার লাশ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন তার স্ত্রী-সন্তানেরা। বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে খোকার লাশ পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খোকার লাশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র আব্দুস সালাম, খোকার স্ত্রী ইসমাত হোসেন, বড় ছেলে ইশরাক হোসেন, ছোট ছেলে ইশফাক হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেকসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা আসছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরহুমের লাশ গ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এরপর সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। দুপুর ১২টা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জন সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বাদ জোহর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা হবে। দুপুর ৩টায় তৃতীয় নামাজে জানাযা হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনে। এরপর বাদ আসর গোপীবাগ নিজ বাসা হয়ে ধুপ খোলা মাঠে জানাযা শেষে জুরাইন গোরস্তানে নেওয়া হবে দাফনের জন্য।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, রণাঙ্গণের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটন স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর সকালে সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

এদিকে সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শোকাহত হয়ে পড়েন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ঢাকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক জানানো হয়। খোকা যে রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন সেই দল বিএনপি গতকাল সারাদেশে শোক দিবস পালন করেছে। দিবসটির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়, নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং কোরানখানির আয়োজন করা হয়েছে।

সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু স¤প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এ সময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপ‚র্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপ‚র্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ