পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবির আন্দোলনে ক্যাম্পাস উত্তল। হলগুলো ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলেও ছাত্রছাত্রীরা হল ত্যাগ করেনি; বরং হলের তালা ভেঙ্গে আন্দোলনে শরীক হচ্ছে। ৬ নভেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে ক্যাম্পাস জুড়ে। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ভিসির ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই দফায় নির্বাচিত সাবেক ভিপি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ওটা (জাবি ভিসি) ভিসি না ওসি বলা দুস্কর। বোরকা পড়ে ভিসিকে পালাতে হবে।
জাবির ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে মঙ্গলবার ক্যাম্পাস ও হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্দেশ দেয়া হয় সন্ধ্যার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগের। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে গতকাল দিনভর আন্দোলন চালিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল কয়েক দফা হল ত্যাগের সময় বাড়ালেও ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেননি। দিনভর নানা কর্মসূচী পালন করে তারা।
গতকাল দিনের শুরুতে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে চাইলে তাদের সরিয়ে দেয়। ফলে গতকালও স্বাভাবিক হয় নি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মেয়েদের হলের দিকে যায়। সেখানে মেয়েদের হলের তালা খুলে ছাত্রীদেরকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। এরপর ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলটি পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনের ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভিসির অপসারণ দাবি, ছাত্রলীগের মারধর ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশ থেকে ভিসির অপসারণের পাশাপাশি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। এই সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি কিন্তু কখনো তো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নামানোর প্রয়োজন হয়নি! এখন কেন হলো? গতকালের ঘটনায় আমি ব্যথিত হয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত হওয়ার পর ভিসি এটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলেছে। এটি আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে দুর্ভাগ্য। জাহাঙ্গীরনগরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। এর আগে এই আন্দোলনের সাথে আমি আসিনাই। কারণ নিজেকে বোঝাতে পারিনি, কিন্তু এখন পেরেছি। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে শুধু তদন্ত না বরং তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।’
এই সময় আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক তপন কুমার সাহা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক কবিরুল বাশার, অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান প্রমুখ।
এদিকে এই সমাবেশ শেষে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ভিসির বাসভবনের সামনে গেলে পুলিশি বাধাঁর মুখে পরে। এমন অবস্থায় আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবনের পাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। সেখানে আন্দোলনকারীদের সামনে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ছিল সতর্ক অবস্থানে। এমন অবস্থায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে মানবঢাল তৈরী করে রাখেন। এই সময় ভিসির বাসভবনের সামনে প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভিসির বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আমরা রাত সাড়ে ৭টার মধ্যে আজকের মতো কর্মসূচি স্থগিত করবো। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবো।
হল বন্ধ করে দেয়ার পরও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকবে এমন প্রশ্নে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, আমরা হলে অবস্থান করার চেষ্টা করবো। যদি প্রশাসন বাঁধা দেয়, তাহলে আমরা আশপাশে থেকে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্কের মধ্যে গতকাল সকাল থেকে দুই দফা আবাসিক হল ত্যাগের জন্য সময় বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। অতঃপর দুপুর ২টায় কমিটির এক জরুরি বেঠক শেষে অধ্যাপক বশির আহমেদ শেষ বারের মতো বেলা সাড়ে ৩টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে দেয়ায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবার দোকানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, হল বন্ধের পর এবার ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানরত কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসে সভা-সমাবেশ, মিছিল এবং অফিস বা আবাসিক এলাকায় অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাত আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুস সালাম মিঞা স্বাক্ষরিত এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের জরুরি এক সভার গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলসমূহ ত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের দোকানপাটও বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করেন, এই সময়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো শিক্ষার্থীর অবস্থান সমীচীন নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।