Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সবার জন্য পেনশন চালু করতে কাজ করছে সরকার

আলোচনা সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সবার জন্য পেনশন চালু করতে চায় সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যেই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় গার্ডিয়ানা হোটেলে ‘সার্বজনীন পেনশন প্রকল্প নিয়ে কাঠামোগত অনুসন্ধান বিষয়ক’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১ শতাংশ। এই হতদরিদ্র ১১ শতাংশ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সরকার কাজ করছে বলে জানান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান, অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত প্রমুখ।

সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ। সর্বজনীন পেনশন কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, বাংলাদেশের মানের অন্য দেশগুলো কীভাবে এটা চালাচ্ছে, অর্থের সংস্থান কীভাবে করা যায়- আয়োজকদের কাছে এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক পরামর্শগুলো প্রত্যাশা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সর্বজনীন পেনশন চাই কি না? আমার কথা হলো- অবশ্যই চাই। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমার জানা মতে, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ছোট একটি সেল বা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এ বিষয়টা নজরে রেখে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব দেশের জনগণের জন্য ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং আমাদের সরকার সেটি করেছে। আমাদের সরকার ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন মাথাপিছু ১০০ টাকা ভাতা দিয়ে কল্যাণমুখী কাজ শুরু করেছিল। এবার ক্ষমতায় আসার পর এটি এক্সপান্ড করেছে।

এম এ মান্নান বলেন, যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, জেনে বা না-জেনেই হোক, এর মধ্যে আমরা চলে এসেছি। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষকে আমরা নানাভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছি। তার মানে বেশি এলাকা আমরা কাভার করে ফেলেছি। আর সামান্য বাকি। আমার মনে হয়, আমরা পারব। সর্বজনীন পেনশন চালুর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অর্থ সংস্থানের প্রস্তাবও করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

এ বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, সবাই এখানে অংশ নিতে পারবে না। আমাদের এখনও ১১-১২ শতাংশ মানুষ আছে, যাদের আমরা হতদরিদ্র বলি। যাদের কোনো নিট আয় নাই। আমাদের রাজনৈতিক শক্তির প্রথম টার্গেট ওই নিচের ১১-১২ ভাগ মানুষকে টেনে উপরে আনা। তারা কন্ট্রিবিউট করতে পারবে না, তাই আসতে পারবে না, সেই ধরনের চিন্তায় আমরা যাব না। মন্ত্রী বলেন, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিয়ে এসেছি, সাক্ষরতার হার প্রায় আশির কোটায় পৌঁছেছি। আমরা মানুষের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি ক্লিনিকের মাধ্যমে। আমরা শিশুদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিচ্ছি এবং আগামী বছর থেকে দুপুরের খাবারের সংস্থানের জন্য কাজ শুরু করেছি। আমাদের সরকার পেনশন স্কিমের রাষ্ট্রীয় কাজটি সম্পন্ন করবে। আমরা পেনশন স্কিম ৫শ টাকা করে দিচ্ছি। বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। তবে এটি বাড়ানোর ফলে এর উদ্যোগ যাতে ব্যাহত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দেশের নাগরিকদের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। বর্তমান সরকারের হাত ধরেই তা চালু হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে অর্ধেক মানুষের কোন আর্থিক নিরাপত্তা নাই। বাংলাদেশ একটি আধুনিক প্রগতিশীল মধ্যম আয়ের দেশ, অথচ তার চার ভাগের এক ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে থাকবে এটা হতে পারে না। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল আধুনিক মধ্যম আয়ের দেশ হবে, তার অর্ধেক মানুষের কোন সামাজিক নিরাপত্তা বা ভবিষ্যতের আয়ের ব্যাপারে বা অন্য কোন ঝুঁকির ব্যাপারে কোনো নিরাপত্তা থাকবে না এই জিনিসটা আমার কাছে পরিষ্কার। চার ভাগের এক ভাগ মানুষ গভীর দারিদ্র্যে থাকবে। আবার অর্ধেক মানুষের কোন আর্থিক নিরাপত্তা নাই, এটা কোন আধুনিক মধ্য আয়ের দেশ হতে পারে না। আজকের আলোচনা সেই ঘাটতিটুকু পূরণ করার জন্য। তিনি বলেন, এটাকে বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। সেটা আমরা ক্রমান্বয়ে দেখতে পারছি। এটার কারিগরি দিক প্রস্তুতি, এটার কৌশল, অর্থায়নের বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক বক্তব্য এখানে এসেছে। সেটা নিয়ে আরো কাজ করা প্রয়েজন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পেনশন স্কিম শুধু পেনশন স্কিম না, এটার সাথে বৃহত্তম অর্থনৈতিক এবং কাঠামোগত সংস্কার নীতি সংশোধন এবং এটার সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডল এগুলোর সাথে জড়িত আছে। তাই শুধু ওইটুকু করবো আর বড়টা করবো না এটা হতে পারে না। সেটা এর সাথে যোগ করে আনতে হবে। তিনি বলেন, এগুলো করতে হলে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। যদি কোন নীতির পক্ষে সোচ্চার সামাজিক চাপ না থাকে তাহলে সরকারের অনেক প্রয়োজনের ভেতরে এটা হারিয়ে যায়। সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের দেশে ১০ শতাংশের বেশি পেনশন কভারেজ নাই। একটা পেনশন চালু হলে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন, তাই আমাদেরকে সাবধানতার সাথে করতে হবে। তিনি সার্বজনীন পেনশন চালু করার ক্ষেত্রে তিনটি বিয়য়ের প্রতি গুরুত্ব দেন, পেনশনের পরিমাণটা পর্যাপ্ত হতে হবে। পেনশন স্কিম সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে হতে হবে এবং এটা টেকসই হতে হবে। জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের দেশে যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন তাদেরকে উপরে নিয়ে আসতে হবে।

বক্তরা জানান, ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে দেশের সকল নাগরিকের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় তৈরির সময় এসেছে। এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা মুখ্য, কিন্তু এটি সরকারের একমাত্র দায়িত্ব নয়। এখানে ব্যক্তিখাতের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ