পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফের হকারদের দখলে চলে গেছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলিস্তান, পল্টন ও মতিঝিলের সড়ক ও ফুটপাথ। হকাররা শুধু সড়ক ও ফুটপাথ দখল করেই ছাড়েনি, সড়ক ডিভাইডারসহ ফুটপাথ-সংলগ্ন রাস্তার অনেকাংশ দখল করে রীতিমতো বাজার বসিয়েছে। এতে পথচারীর পাশাপাশি সড়কের যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। সড়কে প্রতিনিয়ত লেগেই থাকছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সেই যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও যানজটের উৎস ফুটপাথ দখল নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। পথচারীদের এ দুর্ভোগ নিরসনে সিটি কর্পোরেশন কিংবা পুলিশের কার্যকর কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা থেকে বারবার উচ্ছেদের পরও হকারদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। গুলিস্তানের ফুটপাথ ও সড়ক দখল করে হকারদের বসার সেই চিত্র আবার অনেকটা আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী গুলিস্তান, মতিঝিল ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোসহ নিউমার্কেটের ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করে দিলকুশা, নবাবপুর রোড, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন, সেগুনবাগিচা ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় পাঁচটি হলিডে মার্কেট চালু করেছিলেন। এ ছাড়া পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হকারদের তালিকা করে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পরিচয়পত্র প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এসব কার্যক্রমের পরও সড়ক ও ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে পারেনি। এখন নতুন করে সড়কের ডিভাইডারও দখল হয়ে গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল সাবরিন ইনকিলাবকে বলেন, সারা বছর ধরেই আমরা ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছি। তবুও সরকারি ফুটপাথ ও রাস্তা থেকে তাদেরকে নির্মূল করতে পারছি না। এছাড়া হকার উচ্ছেদের জন্য পুলিশ ফোর্সের প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা আরো একটি বিষয় লক্ষ করছি, তাদেরকে সকালে উচ্ছেদ করলে, বিকেলে বসে যাচ্ছে। আবার বিকেলে উচ্ছেদ করলে পরদিন সকালে বসে যাচ্ছে। এটা কিভাবে ঠেকানো যায়, সেই চেষ্টা করছি এখন।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, মৌচাক, মালিবাগ, নিউমার্কেট, ফার্মগেইট, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে শীতকালীন কাপড়সহ বিভিন্ন জিনিসের জমজমাট ব্যবসা করেছে হকাররা। গুলিস্তান এলাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ থেকে বঙ্গবন্ধু স্কোয়ার হয়ে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে অসংখ্য হকার বসেছে। অনেকে নতুন করে ছাউনি বানাচ্ছে। গুলিস্তান কমপ্লেক্স থেকে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়কের অর্ধেক চলে গেছে হকারদের দখলে। সড়কের এ অংশ বন্ধ করে কাপড়, জুতা, ফলসহ নানা পণ্যের বাজার বানানো হয়েছে। পাতাল সড়ক বলে পরিচিত গুলিস্তান আন্ডারপাসের প্রবেশপথ বেলা একটায় বন্ধ দেখা গেছে। এ কারণে সেখান দিয়ে কোেনা পথচারী চলাচল করতে পারে না।
আলাপকালে নাসির উদ্দিন নামের এক হকার বলেন, বহু বছর ধরে গুলিস্তানের ফুটপাথ-সড়কে ফল বিক্রি করি। এ জন্য প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। এখানে না বসলে বসব কোথায়? কাকে চাঁদা দেন জানতে চাইলে তিনি কারও নাম বলতে রাজি হননি। গুলিস্তানের ফুটপাথ ও সড়ক দখল হলেও পুলিশকে কিছু বলতে বা তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি। বরং পুলিশ নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য বলেন, এই প্রশ্ন পুলিশকে না করে রাজনৈতিক নেতাদের করুন। গুলিস্তানের ফুটপাথে ব্যবসা করেন মোহাম্মদ মোশারফ বলেন, ‘আমাগো বসার জায়গা দেউক, তাইলেই আমরা উইঠ্যা যামু। যতদিন না এইডা দিতে পারবেন ততদিন এইখানেই বমু। এইখানে বই অনেক বছর থেকে, হুট কইরা কইলেই উইঠ্যা যাইতে হইব?’ উল্টো প্রশ্ন তার।
মতিঝিলের রাস্তায় পথচারী আফজাল আহমেদ বলেন, গত কোরবানির ঈদের আগেও পরে এ ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত ছিল। তখন ফুটপাথ দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারতাম। এখন দখল হওয়ায় হাঁটার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, কিছুই করার নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে এ পথচারী বলেন, মেয়ররা শুধু মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার চিত্র তারা দেখেও দেখেন না। বেশ কিছুদিন দখলমুক্ত থাকার পর আবারও দখল হয়ে যাচ্ছে এসব ফুটপাথ। এটি কারা সুযোগ করে দিচ্ছে? প্রশাসন তো এখানে আছে। তারা সজাগ থেকে যদি না দেখেন তাহলে কিছু করার নেই।
জানতে চাইতে মতিঝিলের একজন হকার বলেন, পুলিশই তাদেরকে ফুটপাথ দখল করে বসার সুযোগ দিয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারদলীয় স্থানীয় নেতারা। প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে এখানে বসতে হয়। তিনি জানান, ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে ফুটপাথ দখলে রাখার জন্য চাঁদার হার অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি। কারণ এখানে বিক্রি বেশি। চাঁদা না দিলে পুলিশ ফুটপাথের দখল নিতে দেয় না বলেও জানান তিনি। আলমগীর নামের এক হকার বলেন, আমরা পেটের দায়ে ব্যবসা করি। এখানে প্রতিদিন দুই-আড়াইশ’ টাকা চাঁদা দিয়ে দোকান দেই। সব খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চলে। ব্যবসা না করতে পারলে সংসার চালামু কেমনে। তিনি বলেন, আমরা অবৈধ ঠিক আছে, তবে আমাদের অন্য কোনো জায়গায় ব্যবসা করার সুযোগ দিলে এখানে আর দখল করব না।
ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের নেয়া উদ্যোগের সবগুলো প্রকল্পেই ফুটপাথকে মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস নির্মাণ, মেট্রোরেলসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নও করেছে। কিন্তু যানজটের উন্নতি হয়নি। উল্টো মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে রাজধানীর অনেক জায়গায় যানজট বেড়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ফুটপাথ দখল হওয়ায় যানজট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কিন্তু ফুটপাথ দখল নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।