পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বারবার আলোচনায় আসছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ। গত বছর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে কয়েক মাস ধরে আলোচনায় ছিলেন তিনি। সবশেষ আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ও ছেলেকে আটকের ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে এখন হারুন অর রশীদ। এ ঘটনায় রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে বদলি থেকে করে সদর দপ্তরে ট্রেনিং রিজার্ভ (টিআর) পদে বদলি করে।
নারায়নগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যাসায়ী বলেন, সাধারণ মানুষ তো তার কাছে পাত্তাই পায় না। এমনকি সরকারি দলের লোকজন, এমপি-মন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করেন না। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনা যায়নি। উল্টো বিভিন্ন সময় তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে এসেই তিনি প্রবল বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট লোকজনকে নানাভাবে তিনি হয়রানি করেন। কাউকে মাদক দিয়ে কাউকে চাঁদাবাজ বানিয়ে হয়রানি করেন তিনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী মহলের অভিযোগ, জেলার এসপি হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে জেলার আওয়ামীলীগকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফিরে গেলেন। যার খেসারত খোদ আওয়ামীলীগকে দিতে হবে বলে মনে করেন জেলাবাসী।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে বদলি হয়েই তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। শামীম ওসমান নিজেও এসপি হারুনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। তিনি প্রশাসন দুর্ণীতিমুক্ত চেয়েছেন গত ১১মাসে বেশ কয়েক বার। গাজীপুরে থাকাবস্থায় সরকার দলীয়রাও রেহাই পায়নি তার হাত থেকে। সরকার দলীয় কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, নুরুল ইসলাম নুরু, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদ ও তার পাঁচ সহোদরসহ অনেক দলীয় নেতাকর্মী এসপি হারুন কর্তৃক নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমনকি গাজিপুর-২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা মতিউর রহমানকেও হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শওকত আজিজ রাসেলের বাসভবনে এসপির হারুনের এই বাহিনী নিয়ে প্রবেশের কথা জানে না গুলশান থানা পুলিশ কিংবা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি। শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা। তাদের ২৩ বছরের দাম্পত্য জীবন। আর ছেলে আহনাফ আজিজ যুক্তরাজ্য থেকে পড়াশোনা শেষ করে সদ্য দেশে এসেছেন।
জানা গেছে, এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হলেও ঢাকায় এসে নিয়মিত গুলশানের লেকশোর হোটেলে বসতেন। উল্লেখ্য, এসপি হারুন নিয়মিতই নাম্বার প্লেটহীন গাড়িতে করে ঢাকায় চলাফেরা করেন। রাজধানীর শাহবাগ, মগবাজার ও গুলশান, বনানীতে স্থাপিত পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ (১ নভেম্বর) পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হন হারুন অর রশিদ। গাজীপুরে ‘মুক্ত সংবাদ’ নামে স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক সোহরাব হোসেনকে চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে।
সোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জেলার সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুল এসপি হারুনের বন্ধু। ঘুষের বিনিময়ে মনিরুল জমির মূল্য কম দেখিয়ে দলিল করান- এ নিয়ে নিউজ করি। এতে এসপি হারুন ক্ষুব্ধ হয়ে তার বন্ধুকে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেন।
সূত্রমতে, পুলিশ সুপার হারুন রশিদ ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে দায়িত্ব নেন। আতঙ্ক দেখা দেয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। কারণ গাজীপুরে থাকাকালীন এসপি হারুনের কর্মকান্ড নারায়ণগঞ্জবাসী ভালো করেই জানতো। তবে এসপি হারুন বিভিন্ন সভায় ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক, সাধারণের বন্ধু। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জবাসী জেনে যায় এটা তার উপরের কথা। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই তিনি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে ফতুল্লা ও সদর মডেল থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরি করিয়েছিলেন তিনি। জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলা মিটিয়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া ২ এপ্রিল ফতুল্লার পাগলায় ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও বার মেরি এন্ডারসন এ এসপি হারুনের নির্দেশ অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২৫ জন স্টাফ ও ৪৩ জন মাদকসেবীকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক মাদক দ্রব্য। কিন্তু ঘটনায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ টিটুকে জড়ানোর চেষ্টা করে তিনি। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ দেখা দেয় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলে।
সবশেষ গত মাসের ২, ৩ ও ৪ অক্টোবর এসপি হারুনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ধারাবাহিক ৩টি অভিযান ছিল সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথম অভিযানটি হয় গত ২ অক্টোবর রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার রসূলপুর এলাকায়। ওইদিন রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে দেশের স্বনামধন্য মাস্টার কয়েল ফ্যাক্টরির মালিক জামাল হোসেন মৃধার বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি তার বাড়ি থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা এবং নগদ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় জামাল হোসেন মৃধা, তার সহযোগী মোস্তফা কামাল ও মানিক মিয়াকে। জামাল মৃধার ৩টি মশার কয়েল তৈরির ফ্যাক্টরি রয়েছে। এ ছাড়া তার একটি গরুর খামারও রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর জামাল মৃধা ও তার সঙ্গে গ্রেপ্তাররা এখনো নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
জামাল মৃধার পরিবার এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি তিনি ধর্মপ্রাণ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। মাদকের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত মাস্টার মশার কয়েল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। তাছাড়া তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারিও।
জামাল মৃধার বড় ভাই লাভলু মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িতে সোয়া ৩ কোটি টাকা ছিল। পুলিশ দেখিয়েছে সোয়া ১ কোটি টাকা। আর ইয়াবার বিষয়টি পুলিশের সাজানো। এত টাকা সেদিন বাড়িতে ছিল কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গেল কোরবানির ঈদে খামারের গরু বিক্রির টাকা ছিল বাসায়। এ ছাড়া কারখানার মালামাল ক্রয়ের জন্য বাসায় টাকা রাখা হতো। কিন্তু তার ভাই মাদকের সঙ্গে জড়িত এ কথা পরিবারের কেউ তো নয়ই বরং এলাকারও কেউ বিশ্বাস করেনি। সবকিছুই ছিল পুলিশের সাজানো।
জামাল মৃধার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের তদন্তে প্রকৃত সত্য উঠে আসবে বলে আমরা মনি করি। তার মক্কেলকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সামাজিকভাবে ব্যবসা করে সুপ্রতিষ্ঠিত সেই ব্যক্তি কেন মাদক ব্যবসার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হবে।
অপর দিকে এ ঘটনার পর দিন ৩অক্টোবর ডিবি পুলিশের একই টিম সিদ্ধিরগঞ্জে ম্যাক্স ইলেক্ট্রা ইন্ডাস্ট্রিজে হানা দেয়। তারা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ও নকল পণ্য সামগ্রী মজুত রয়েছে। ম্যাক্স ইলেক্ট্রার মালিক বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সেদিন পুলিশ সুপার অন্যায়ভাবে তার প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে তার ৮ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের কাছে দেন। গত সোমবার পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান পুলিশের হেফাজতে ছিল বলে তিনি জানান।
এ ব্যবসায়ী আরো জানান, পুলিশ তার প্রতিষ্ঠানে অভিযানের সময় নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা ও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নেয়নি। অন্যায় ভাবে আমার প্রতিষ্ঠানে সেদিন হানা দেয়া হয়েছিল। অথচ আমার প্রতিষ্ঠানের পাশেই শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় অবস্থিত। আমি ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করেই ব্যবসা করছি। ঘটনার সময় পুলিশ সুপারকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে থাকা মালামালের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও তিনি তা দেখেননি। উল্টো টেলিফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমার কাছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন। তার দাবি না মেটানোয় এখনো আমার প্রতিষ্ঠান পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এসপি হারুনের তৃতীয় বিতর্কিত অভিযান ছিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত ইউনাইটেড ক্লাবে অভিযান। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া ওই ক্লাবে কোনো ধরনের কোনো অবৈধ কর্মকান্ড হয়নি। পুলিশও অভিযানের সময় ক্লাব থেকে কোনো অবৈধ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। অভিযানে ক্লাবে থাকা ক্লাবটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তাপুসহ ৭ জন বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে একজন ব্যাংক কর্মকর্তাও ছিলেন। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের জুয়া আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালতে ২০০ টাকা মুচলেকায় তারা জামিন পান।
ক্লাবটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তাপু সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর তিনি তার সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারেন না। পুলিশের এ ধরনের কর্মকান্ডে তিনিসহ তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা সামাজিকভাবে মারাত্মক হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। যা কোনো দিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ক্লাব মানেই খারাপ কিছু নয়। এই ক্লাবের সব সদস্য সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।