Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুফল মিলছে না

সড়ক পারাপারে ‘পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল’

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

নগরবাসীর জন্য নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিতে ‘পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল’ নামের নতুন ধরণের সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও নাগরকিদের ট্রাফিক আইন মানতে আধুনিক এ সিগন্যাল সিস্টেম চালু করা হলেও এটির ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না অধিকাংশ নগরবাসী। চলতি বছরের গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে পরীক্ষামূলকভাবে এমন একটি সিগন্যাল ব্যবস্থা (পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং) স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এ সিগন্যাল চালুর পর দু’সপ্তাহ পার হলেও পথচারী ও যানবাহনকে আগের মতোই রাস্তা পার হতে দেখা গেছে।

চালক ও পথচারীদের ভাষ্য, আধুনিক এ সিগন্যাল সম্পর্কে তাদের অধিকাংশই জানেন না। তেমনি এটির ব্যবহারও জানেন পথচারীরা। তারা বলেন, চালক-যাত্রী ও পথচারীদের মাঝে যথাযথ প্রচার-প্রচারণা চালানো হলে তবেই নতুন পদ্ধতি জানতে ও মানতে পারবে নাগরিকরা। গত কয়েকদিন গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের সামনের সড়কে সরেজমিনকালে প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।
সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পথচারী পারাপারের সময় সবুজ সঙ্কেত ও গাড়ি থামার জন্য লাল সঙ্কেত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পথচারীদের পারাপারের জন্য ২৫ সেকেন্ড সবুজ সঙ্কেতটি জ্বলবে। এই সময়ের মধ্যে পথচারীদের রাস্তা পার হতে হবে। ২৫ সেকেন্ড পর আবার গাড়ি চলাচল শুরু হবে। অন্যদিকে, গাড়ি চলাচলের জন্য নির্ধারিত সময় ১২৭ সেকেন্ড। এ সময়ে বাটনে চাপ দিলেও সবুজ সংকেত জ্বলবে না। নির্ধারিত ১২৭ সেকেন্ড শেষ হলেও পুনরায় সবুজ সংকেত চালু হবে। এছাড়া যখন পথচারী পার হবে তখন গাড়ি থামানোর জন্য লাল সঙ্কেতটি জ্বলবে।
গত কয়েকদিন সরেজমিনকলে দেখা গেছে, পথচারীরা আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। গাড়িও চলছে খেয়াল খুশি মতো। অনেকেই এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। আর যারা জানেন তারাও এই সিগন্যাল মানছেন না। যদিও সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা ও নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সেখানে শিফট অনুযায়ী চারজন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কাজই হলো পথচারীদের সিগন্যাল সম্পর্কে জানিয়ে রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করা। কিন্তু খুবই কম সংখ্যক পথচারী ও যানবাহনকে নতুন পদ্ধতির সিগন্যাল মানতে দেখা গেছে। দেখা গেছে, কেউ সিগন্যাল না মেনে রাস্তা পার হতে গেলে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের বাধা দেন এবং সিগন্যালটির ব্যবহার জানানো ছাড়াও মানার জন্য বলছেন।

সাখাওয়াত হোসেন নামের বেসরকারি চাকুরে বলেন, নতুন সিগন্যাল পদ্ধতি চালু করা হলেও খুব কম সংখ্যক পথাচারী এই বাটন চেপে রাস্তা পার হয়। তিনি বলেন, অধিকাংশ লোক না জানার কারণে বাটন চেপে রাস্তা পার হয় না। তিনি সিগন্যাল মানতে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা রফিক মোহাম্মদ বলেন, চালক-পথচারী সিগন্যাল মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেক কমবে এবং নিরাপদে রাস্তা পারাপার সম্ভ হবে। তিনি বলেন, নতুন চালু হওয়ায় অনেকে সিগন্যাল ও এটির ব্যবহার সম্পর্কে জানে না। আবার যারা সিগন্যাল বসানো সম্পর্কে জানে তারা ব্যবহার না জেনেই রাস্তা পার হয়। নগরবাসীর মাঝে যথাযথভাবে প্রচারণা করা গেলে নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপারে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজ সঙ্কেত চলাকালে পথচারীদের পারাপার হওয়ার সময় বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশা সিগন্যাল অমান্য করে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বললে তার সিগন্যাল সম্পর্কে জানেন না বলে জানান। চালকদের ভাষ্য, এমন সিস্টেম থাকলে অবশ্যই ভালো। তবে তারা আগে থেকে জানলে সিগন্যাল অমান্য করতেন না। টিভি-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও লিফলেট ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালালে সবাই আইনটি সম্পর্কে জানতে পারবে।

সিগন্যালের দায়িত্বে থাকা মাহাবুবুল হক নামের এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, পথচারী-চালক কেউই নতুন সিগন্যাল মানছে না। পথচারীরা কিছু সময় অপেক্ষা করতে চায় না। তাদের ধৈর্য খুবই কম। যার কারণে তাদেরকে মানানো যাচ্ছে না তবুও তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে। নিরাপত্তা কর্মীদের অভিমত, যথাযথ প্রচাণার পাশাপাশি প্রথম দিকে সিগন্যাল মানতে বাধ্য করতে হবে। তখন অব্যস্ত হয়ে যাবে। নয়তো কেউ মানতে চাইবে না।

গত ২৪ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে এই পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। উদ্বোধনকালে তিনি বলেছিলেন, নতুন এসব সিগন্যাল লাইটের সঙ্গে ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে। যেসব গাড়ির চালক ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করবেন তাদের গাড়ির নম্বর ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করে মামলা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পুলিশকে সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পথচারীদের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর ২০টি স্থানে পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং বসাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এসব পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল ক্রসিং দিয়ে যেন শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ সব বয়সের মানুষ সহজে রাস্তা পারাপার হতে পারে, সেজন্য বর্তমানের উচু ফুটপাথও রাস্তার সঙ্গে সমান করে মেলানো হবে। এছাড়া এসব স্থানে গাড়ির গতি কমানোর জন্য রেইজড জেব্রাক্রসিং তৈরি করা হবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৪৮টি স্থানে এমন পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং স্থাপনের চাহিদা প্রেরণ করেছে। এরমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০টি স্থানে পুশ বাটন কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ডিএনসিসির সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এ সিগন্যালগুলো বসানো হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, ডিএনসিসির পাইলট প্রকল্পের আওতায় মোহাম্মদপুরে চালুর পরে একইভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একইরকম একটি পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সংকেতসহ জেব্রাক্রসিং স্থাপনের কাজ চলছে। এ দুটি সিগন্যালসহ জেব্রাক্রসিং নির্মাণে ডিএনসিসির প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ