Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

নগদ প্রণোদনায় সাফল্য

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠালে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর গত ৬ আগস্ট এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অক্টোবর মাস থেকে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা শুরু হয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এ প্রণোদনা দেয়া শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। গত জুলাই থেকে প্রবাসী আয় যারা পাঠিয়েছেন তারা সবাই এ প্রণোদনার আওতায় আসবেন। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে ১৬৩ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৪ লাখ (৪ দশমিক ৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ (৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন) ডলার।
রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়াকে বাজেটে সরকারের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এটিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে প্রণোদনায় এখন থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো কমবে বলে উল্লেখ করছেন তারা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো। স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজীভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রণোদনা দেয়ায় রেমিট্যান্স বাড়ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সেসব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন; বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, এখন থেকে ব্যাংকে গেলেই প্রবাসী আয়ের প্রণোদনার টাকা পাওয়া যাবে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে কেউ যদি রেমিট্যান্স পাঠান, তাহলে তিনি ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। চলতি অর্থবছরের প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, যেভাবে এগোচ্ছি, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় এক হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারও হয়ে যেতে পারে। বিদায়ী অর্থবছরে এটি ছিল এক হাজার ৫০০ ডলারের মতো।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স বেড়েছে মূলত দু’টি কারণে। একটি হলো সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু হওয়া। অন্যটি হচ্ছে ডলারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এখন ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরও বৈধ চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসবে।
এদিকে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা পেয়ে খুশি প্রবাসীদের স্বজনরা। এমনই একজন বেসরকারি চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, মালয়েশিয়া থেকে এক বন্ধু ৩৮ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। গ্রীন রোডের জনতা ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় তুলতে গেলে ব্যাংক প্রাপ্য অর্থের সঙ্গে আরও ৭৬০ টাকা (২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা) বেশি দিয়েছে। সুতরাং এভাবে প্রবাসীদের উৎসাহ দিলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসবে বলেই জানান তিনি।
সূত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নগদ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে দুই শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই থেকে প্রণোদনার অর্থ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য এটি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লেগে যায়। পরে গেল মাস অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ সহায়তার অর্থ পেতে শুরু করে প্রবাসীরা।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে নগদ প্রণোদনা দেয়া শুরু হলেও গত তিন মাসে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, তারাও এর বিপরীতে দুই শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবেন। এদিকে ১৫শ’ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রেরণকারীকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না, কোনো কাগজ চাওয়া হবে না। তবে ১৫শ’ ডলারের বেশি হলে কাগজপত্র দেখাতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়েছে। অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর আগে গত চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। এ সময় রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এর পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দূরদর্শী সিদ্ধান্তকে তিনি সাধুবাদ জানান। একই সঙ্গে এটা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখছেন।



 

Show all comments
  • Munshi Jahirul Islam ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:১৬ এএম says : 0
    জুলাই থেকে যে টাকা পাঠিয়েছি সেীদি থেকে সেগুলোর কি হবে? এখনও তো কোন প্রনোদনার টাকা পেলাম না? আপনারা কেউ কি বলতে পারেন পিছনের 2% প্রোনদোনার টাকা কিভাবে পাওয়া যাবে? ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ