Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘রাজা-বাদশাহর যুগে ফিরে গেছি’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

নাগরিকের বাক স্বাধীনতা না থাকলে ’৭১ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাই থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘হুমকির মুখে বাকস্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর একজন সম্পাদক সম্পর্কে মন্তব্যের পরও সাংবাদিকদের তোষামোদী আচরণের সমালোচনা করে বলেন, ‘নাস্তানাবুদ হওয়ার পর বেহায়া হাসি দেখি সম্পাদকদের। বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় একজন ব্যাক্তির উপর সবকিছু নির্ভরশীল প্রসঙ্গ তুলে ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমরা রাজা-বাদশার যুগে চলে গেছি। সে সময় একক ব্যাক্তি সবকিছু করতেন। রাজা-বাদশার কথাই সব হতো। এখন দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। বাকস্বাধীনতা যত সংকুচিত হবে তত দেশের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না। আমার জীবন হয়ে যাচ্ছে পশুর জীবন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। অনেক রক্ত ঝড়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে; স্বাধীন দেশে পশুর মতো বাঁচা যায় না। এখন যতগুলো আইন তৈরি হচ্ছে, প্রত্যেকটি আইনেই নাগরিকের বাকস্বাধীনতা খর্ব হয় এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকার ১৭৯১ সালের সংবিধানে বলা হয়েছে, বাকস্বাধীনতা খর্ব হয় এমন কোনো আইন সংসদে পাস করা যাবে না। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা সেই গণতন্ত্রে যেতে পারিনি। আমরা রাজা-বাদশাহদের যুগে ফিরে গেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশের মানুষের পক্ষ্যে এবং ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলায় মৃত্যুবরণ করতে হবে এগুলো মানা যায় না। এমন দেশে আজ আমরা বসবাস করছি। বর্তমানে স্বাধীন দেশে পরাধীন হিসেবে বসবাস করছি। আমাদের বাকস্বাধীনতা না থাকলেও ক্ষমতাসীনদের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। তারা যখন-তখন দেশের গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে যা ইচ্ছা তা বলে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া, ড. মুহম্মদ ইউনূস, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) যা ইচ্ছা তা বলছেন। এখানে তাদের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই বিবিসি, সিএনএন দেখি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর যখন সংবাদ সম্মেলন হয়, সেখানে সাংবাদিকরা তাদের প্রশ্নের মাধ্যমে নাস্তানাবুদ করে ফেলেন। কীসের ট্রাম্প কীসের কী! তিনবার, চারবার তারা দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন। বারবার তারা বলতে থাকেন, ‘আপনার (প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীকে) কোনো অধিকার নেই আমার প্রশ্ন বন্ধ করার।’ প্রেসিডেন্টদের ঘাম ছেড়ে জ্বর চলে আসার মতো অবস্থা হয়। বাংলাদেশে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে তুলনা করে আসিফ নজরুল আরো বলেন, আর আমাদের এখানে যখন সম্পাদক সম্মেলন (সংবাদ সম্মেলন বলেননি) হয়, তারা ওখানে যানই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাস্তানাবুদ হতে! সেখানেই শেষ না, নাস্তানাবুদ হওয়ার পর সঙ্গে যে কী একটা বেহায়া হাসি দেখি- এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সাংবাদিক সম্মেলন। সেটাতেও তারা খুশি, খুবই আনন্দিত! আমরা কোন জায়গাতে আছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকার। এটি কারও দান নয়। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই আইনে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর মধ্যে ৮ জন সাংবাদিক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চিন্তার নিয়ন্ত্রণের ধারাও রাখা হয়েছে মন্তব্য করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আপনি অপরাধ করতে পারেন, এটাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মামলা করার বিধান রাখা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। অর্থাৎ, আপনি কী ভাবতে পারেন, সেটা আগে থেকেই আরেকজন ভেবে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে! আপনি ভাবলেন কেন, আপনার ভাবনাটা তো অপরাধ! তার মানে আপনার কল্পনা, চিন্তাশক্তি আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এই আইনে আছে। ১৯৯০-এর গণআন্দোলনে যারা জড়িত ছিলেন তারা জানেন যে, কীভাবে হাসতে হবে সেটাও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিখিয়ে দিতেন। আর নতুন এই আইনে আপনার চিন্তাটা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, যুগে যুগে চিন্তাকে আটকে দেওয়া হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। সব জায়গায় শাসকদের কঠোর সমালোচনা হয়। এর মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র টিকে থাকে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা এলে সেটা রাজনৈতিক বøাসফেমি। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করা হয়েছে মত প্রকাশের জন্য। তর্কহীন, প্রশ্নহীন সমাজ মৃত সমাজ। নিজেদের বাঁচার জন্য, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান স্তম্ভ বাক্স্বাধীনতা। বাক্স্বাধীনতা না থাকলে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ হয় না। পৃথিবী জুড়েই এর চর্চা চলছে। খাবার কম দিয়েও যদি মানুষকে কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে মানুষ কথা বলাটাই বেছে নেবে। এ আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বক্তৃতা করেন।



 

Show all comments
  • জামাল ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩১ এএম says : 0
    কি মন্তব্য করব? যে দেশে ভাবনার কারনে হত্ত্যার শাস্তি, মন্তব্য করলে ইন্সট্যান ফাসি, আর সাংবাদিকদের চাটুকারিতার রাশি!!! সেখানে কি লিখব? পাঠক গন জানে"! আমি শুধু শিক্ষক গনের শাথে সহমত প্রকাশ করে একটা কথা বলতে চাই,, সময় হাতে নেই বল্লেই চলে বাংলাদেশিদের আবারও একটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে, শেখ মুজিবের ভাসনের বাস্তবতা ঘটাতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Soikot ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
    আপনারা যদি সত্যিই মানুষের মতো বাচতে চান - একমাত্র পথ - বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে হেগ-এর আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করুন। আপনারা মত প্রকাশের কথা বলছেন, আর এদেশে আমার মতো হাজারো হয়তো লাখো মানুষ আছে যারা পুলিশের চরম অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়েছি, কিন্তু আমাদেরকে শাসানো হয়েছে মুখ খুললে পরিণতি এর থেকেও ভয়ানক হবে। এমন কোন দিন নাই যখন নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের কথা খেয়াল করে ভেঙে পড়ি না, বুক ফেটে যায় কিন্তু মুখ খুলতে পারি না, জানি কাউকে কিছু বলতে গেলেই “জনগণের বন্ধু” রাতের বেলা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এবার মেরেই ফেলবে। পৃথিবী পাক বাহিনীর কথা জানে যারা মানুষ তুলে নিয়ে টর্চারসেলে টর্চার করে মারত, সময় এসেছে বাংলাদেশের এই নব্য পাক-বাহিনীর আসল চেহারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরার, বিদেশী অবরোধ দেওয়া, এ বাহিনীর সকল বিদেশী সাহায্য বন্ধ করা, মায়ানমার সেনাবাহিনীর মতো এদের মাথাগুলোর বিদেশ ভ্রমন বন্ধ করে একঘড়ে করা- তবেই যদি মুক্তি আসে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Uddin ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    জালিমে শাসন চলছে
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Uddin ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    ঠিক
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ উদ্দিন রিমন ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    রাজা-বাদশাহদের যুগ আরও ভালো ছিল। এখন যে অবস্থা....
    Total Reply(0) Reply
  • মজলুম জনতা ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:০৫ এএম says : 0
    আপনারা শুধু লিখবেন,এজন্য মোবারকবাদ। কিন্তূ কে শুনবে আপনাদের এই সাংবিদানিক নিতি কথা।জনগনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছ!
    Total Reply(0) Reply
  • MD Ahmed ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:৩৫ এএম says : 0
    এই জালিম সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ বলোন,,
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আককাছ আলি মোল্লা ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৮:১৮ এএম says : 0
    সব শেষে রাজা নিজেই হেসে শুলে চড়তে না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৩০ পিএম says : 0
    There is only and absolute way ---if we want to live in our beloved country in peace and prosperity than we must rule our country by the Law of Allah [SWT].....
    Total Reply(0) Reply
  • Abdus salam ২৬ মার্চ, ২০২০, ৮:১৩ এএম says : 0
    বাক্ স্বাধীনতার নামে বাক্ অধীনতা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ