পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যুর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মানব পাচারকারী পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের অধিকাংশই এখনো বহাল তবিয়তে। কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরে থাক, উল্টো দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। কাউকে দেয়া হয়েছে প্রাইজ পোস্টিং। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কেউ কেউ। অফিসিয়াল পাসপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত উপ-পরিচালক নাদিরা আক্তারকে পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভের চেষ্টায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
সাধারণ মানুষকে অর্থের বিনিময়ে অফিসিয়াল পাসপোর্ট দেন তিনি। নিজস্ব তদন্তে ঘটনার বৃত্তান্ত উদঘাটিত হয়। জাল-জালিয়াতির অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ার পর সংস্থাটি সরাসরি মামলা না করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পাঠায়। কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, উল্টো পুরস্কৃত করা হচ্ছে মানব পাচারকারী এই কর্মকর্তাকে। নাম তার নাদিরা আক্তার। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরার উপ-পরিচালক। এখন তাকে ওঠানোর চেষ্টা চলছে পরিচালক পদে। প্রক্রিয়ার শুরুতেই তাকে পরিচালকের ‘চলতি দায়িত্ব’ প্রদানের জোর তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আগেই অফিসিয়াল পাসপোর্টে মানব পাচারের হোতা পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। সেই থেকে তার চেয়ারে কেউ বসছেন না। এই সুযোগে তার রেখে যাওয়া দুই শিষ্য নাদিরা আক্তারকে তার চেয়ারে বসাতে উঠেপড়ে লাগেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে সদ্য যোগ দেয়া মহাপরিচালককে বিভ্রান্ত করে নাদিরাকে পরিচালক পদে ‘চলতি দায়িত্ব’ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানায় সূত্র। অথচ তার বিরুদ্ধে এখনো বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৪ সালের এপ্রিলে অফিসিয়াল পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়। ঘটনা ফাঁস হয় ২০১৫ সালে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টির ওপর অনুসন্ধান শুরু করে ২০১৬ সালে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাধারণ মানুষদের ‘সরকারি কর্মকর্তা’ সাজিয়ে মানব পাচার করেছে পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদফতরের একটি চক্র। সরকারি চাকরি না করলেও তাদের নামে ইস্যু করা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট। প্রতিটি অফিসিয়াল পাসপোর্টের বিপরীতে নেয়া হয়েছে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা করে। এভাবে ধরা পড়া ৯টি পাসপোর্টের বিপরীতে ঘুষ নেয়া হয় ৫০ থেকে ৮০ লাখ টাকা।
পাসপোর্টের তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) এস এম নজরুল ইসলাম, পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মুন্সি মুয়ীদ ইকরাম, প্রশাসন শাকার সহকারী পরিচালক মো. নূরুল হুদা এবং প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাদিরা আক্তার পরস্পর যোগসাজশে এসব পাসপোর্ট ইস্যু করেন। এদের মধ্যে মুন্সি মুয়ীদ ইকরামের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। তদন্ত শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র পালিয়ে যান নজরুল ইসলাম। উপ-পরিচালক (উত্তরা) নাদিরা আক্তারের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে দুদক। সে অনুসারে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান। তবে নিজ পদে তিনি এখানো বহাল রয়েছেন।
দুদকের অনুসন্ধান মতে, ভুয়া অনাপত্তিপত্রের (এনওসি) ভিত্তিতে মো: নজরুল ইসলাম ৮টি অফিসিয়াল পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করেন। এগুলোর সিরিয়াল যথাক্রমে : ১১২১৫৪২, ২১২১৫৫০, ৭১২৬৬৩১, ৭১২৫৯৯৭, ৬১২৭১২৭, ৪১২২২৫৪, ৮১০৯২৬৪ এবং ২১২৫৮৯৯ নম্বর। জালিয়াতির মাধ্যমে এসব অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যুর ব্যবস্থা করেন পরিচালক নজরুল ইসলাম নিজেই। প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাদিরা আক্তার গ্রহণ করেন একটি ভুয়া অফিসিয়াল পাসপোর্টের আবেদন (ওসি ২১২৫৮৯৯)।
নাদিরা আক্তারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নাদিরা আক্তার পাসপোর্টের আবেদনপত্র গ্রহণের দায়িত্বে না থেকেও ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে আবেদনপত্র গ্রহণ করে মোহাম্মদ মামুনকে ভুয়া ও জাল এনওসি ব্যবহার করে সাধারণ পাসপোর্টকে অফিসিয়াল পাসপোর্টে রূপান্তর করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তার এহেন কার্যকলাপ, দুর্নীতি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা, নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ স্বেচ্ছাচারিতা, স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফপ্তর তথা বাংলাদেশ সরকারের সুনাম ক্ষুণœ করা, অসদাচরণ, অফিস শৃঙ্খলার পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নাদিরার গ্রহণকৃত আবেদনের পাসপোর্টটির ডেলিভারির ক্ষেত্রেও অনিয়ম হয়। প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন শাখার তৎকালীন সহকারী পরিচালক নূরুল হুদা ডেলিভারি ¯িøপে স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই জাল পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন। নূরুল হুদার বিরুদ্ধে দুদক সুপারিশ করলেও অদৃশ্য ইশারায় তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-পরিচালক হিসেবে তাকে প্রাইজ পোস্টিং দেয়া হয়। এছাড়া জড়িত উচ্চমান সহকারী মো. শাহজাহান মিয়া এবং মো. সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সহকারী পরিচালক এস এম শাহজামানের বিরুদ্ধে।
বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শিহাবউদ্দিন খান গতকাল শনিবার টেলিফোনে ‘ইনকিলাব’কে বলেন, দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা (ডিপি) চলমান রয়েছে। ডিপি চলমান থাকলে কারো পদোন্নতি হতে পারে না। নাদিরা আক্তারের পদোন্নতির বিষয়েও কোনো সুপারিশ পাঠানো হয়নি। ডিপি’র আগেই নূরুল হুদাকে সহকারী পরিচালক থেকে উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি এখন ফরিদপুরে আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।