Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পলাতক গৃহকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ

ধানমন্ডিতে জোড়া খুন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ধানমন্ডিতে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতি হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জোড়া খুনের ঘটনায় পলাতক গৃহকর্মীকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে গ্রেফতারে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পুলিশ-গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। জোড়া খুনের ঘটনায় ওই বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওই ফুটেজ দেখেও পলাতক গৃহকর্মীকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই নারী নিহতের বাসায় নতুন গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও হত্যাকান্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে লাশ দুইটির ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল। তিনি বলেন, তিন সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। দু’টি লাশের গলায় কাটাসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
পুলিশ যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা হলেন-নিহত আফরোজার জামাতা ক্রিয়েটিভ গ্রæপের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মনির উদ্দিন তারিমের বডিগার্ড বাচ্চু এবং ভবনের ইলেকট্রিশিয়ান বেলায়েত ও ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী।
পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার হাসিনুজ্জামান জানান, আমরা বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। বাসাটিতে যে নতুন গৃহকর্মী এসেছিল, তাকে আমরা সন্দেহ করছি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে এখনও তার পরিচয় জানা যায়নি। যে ব্যক্তি তাকে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল, তার মাধ্যমে ওই নতুন গৃহকর্মীর তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ছবি পেয়েছি। ওই গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে জোড়া খুনের সব বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আফরোজা বেগমের বোনের ছেলে মোশারফ হোসেন গতকাল হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ওই বাসার মোট আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরা সবাই বাসার দারোয়ান, মিস্ত্রি আর কেয়ারটেকার। আফরোজা বেগম লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। উনার কোনো শত্রæ নেই। রোগের কারণে সারাক্ষণ ঘরেই থাকতেন। তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো। আর যদি শুধু জিনিসপত্র বা টাকা নিতেই আসে তাহলে তো সেগুলো নিয়ে গেলেই পারত, এর জন্য তাদের হত্যা করবে কেন-এই প্রশ্নও করেন মোশারফ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মনির উদ্দিন একজন শিল্পপতি। তিনি তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর একজন পরিচালক। তিনি টিনটেক নামের একটি গার্মেন্টসের মালিক। ছয়তলা ভবনটির এফ-৪ ফ্ল্যাটে এই ঘটনা ঘটেছে। ফ্ল্যাটে মনির উদ্দিনের শাশুড়ি ও গৃহকর্মী থাকতেন ওই ফ্লাটে। ভবনটিতে মনিরের মালিকানাধীন মোট চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

ভবনের নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামান বলেন, এই বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন আফরোজা ও গৃহকর্মী দিতি। উপরে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন তার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা ও জামাই মনির উদ্দিন। শুক্রবার বিকাল ৩টায় মনিরের পিএস বাচ্চু এক নারীকে নিয়ে বাসায় আসেন। ওই নারী বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার কথা বলে বাচ্চুর সঙ্গে ওপরে যায়। এরপর ৬টার দিকে বাচ্চু একবার লুঙ্গি পরে নিচে নামে। এর কিছুক্ষণ পর ওই নারী চলে যায়। তারপর বাচ্চুও প্যান্ট-শার্ট পরে চলে যায়। তারপর ওপর থেকে আমাকে একটা ছেলে ফোন দিয়ে জানায় খালাম্মা মারা গেছে। এরপর লোকজন আসে।

নিহতদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল বলেন, দু’টি লাশের গলায় ধারালো আঘাতসহ শরীরের কয়েকটি জায়গায় আঘাত রয়েছে। তাদের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যুর আগে ওই গৃহকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কিনা, তা জানতেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দুইটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত শুক্রবার ১ নভেম্বর রাতে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসার পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আফরোজা বেগম ও তার গৃহকর্মী দিতির লাশ উদ্ধার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ