Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি

প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দুগ্ধখাত সমৃদ্ধিশালী (ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প) ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের শুরুতে আউট সোর্সিং ফার্ম নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রকল্পের পরিচালক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রকল্পের পরিচালক কাজী ওয়াসি উদ্দীন এবং প্রকল্পে সহকারী পরিচালক ডা. জহিরুল ইসলামে বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খসরু। প্রতিমন্ত্রী ইনকিলাবকে বলেন, অভিযোগ তদন্তে করার জন্য সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দেশের দুগ্ধখাতকে সমৃদ্ধিশালী এবং সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় এলডিডিপি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ৬ মাস না যেতেই এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার গুরুতের অভিযোগ উঠেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব মো. রইছ উল আলম মন্ডল ইনকিলাবে বলেন, দুগ্ধখাত সমৃদ্ধিশালী (ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প) আমাদের একটি মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পে আউট সোর্সিং ফার্ম নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগটির তদন্ত কাজ চলছে। তার আগে কিছু বলা যাবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব ও এলডিডিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াসি উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, আউট সোর্সিং ফার্ম নিয়োগে যারা অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। আদালতে মামলা রয়েছে। মামলায় তারা হেরে গেছে। তাদের জন্য তো প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে না। আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি।

প্রতিমন্ত্রীর দেয়া নুরুল ইসলামের অভিযোগে বলা হয়, দেশের দুগ্ধখাতকে সমৃদ্ধিশালী এবং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর প্রকল্পের ডিপিপিতে পিডি হিসেবে গ্রেড-২ ভুক্ত একজন কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়ার কথা এবং সে মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সার্বক্ষণিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত মো. জাফর উল্লাহকে গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করে ফেরত পাঠায়। পরবর্তী পর্যায়ে চলতি বছরের এপ্রিল মসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দীনকে প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী কাজী ওয়াসি উদ্দীন সকাল হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসাবে এবং বিকাল ৫ টার পর হতে ফার্মগেটস্থ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে আলোচ্য প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াসি উদ্দীন প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নির্মাণকাজের দরপত্র আহŸান, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের ফার্ম সিলেকশন ও প্রকৌশলী নিয়োগে অনিয়মসহ নানাবিধ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। নির্মাণকাজ শুরু করার আগে ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী কনসাল্টিং ফার্ম ও প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগ প্রদান বা প্রকৌশলী (সাইট প্রকৌশলী) নিয়োগ না দিয়েই তিনি ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশ প্রদান করেন। যেসব স্থানে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে ঐসব স্থানে প্রকল্পের বা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় কোনো প্রকার তদারকি ছাড়াই ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছামতো নির্মাণকাজ করে যাচ্ছেন। ফলে ঐসব নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অন্য দিকে প্রকল্পের অধীনে একজন ৬০ বসরের অধিক বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবকে প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি এযাবৎকাল মাত্র ৭-৮ জায়গায় পরিদর্শনে গিয়েছেন। ঠিকাদারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দীর্ঘ ১০-১২ বছর প্রকৌশল পেশার সাথে যুক্ত না থাকায় তিনি নির্মাণকাজ সম্পর্কে সাম্যক ধারণা (জ্ঞান) এক প্রকার হারিয়েই ফেলেছেন।

আউট সোর্সিং ফার্ম নিয়োগে দুর্নীতি
প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১৪০০ শতেরও অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আউট সোর্সিং হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সংস্থান রয়েছে। সে প্রেক্ষিত আউট সোর্সিং ফার্ম নিয়োগের লক্ষ্যে দরপত্র আহŸান করা হলে ৭-৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। ফার্ম সিলেকশনের ক্ষেত্রেও একাধিক অনিয়ম হওয়ায় সংক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক অভিযোগ দাখিল করেই যাচ্ছে। কিন্তু পিডি কাজী ওয়াসি উদ্দীন কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে অযোগ্য ২টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ প্রদান করেছেন। দরপত্রের অন্যতম শর্ত ছিল একই প্রতিষ্ঠান ২টি কাজের জন্য অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু কার্যাদেশ প্রাপ্ত ২টি প্রতিষ্ঠানই ২টি কাজের জন্য (কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য) দরপত্র দাখিল করে। সুতরাং প্রথমেই এ ২টি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ার কথা। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ডা. শেখ আজিজুর রহমান আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এছাড়াও কার্যাদেশ প্রাপ্ত ২টি প্রতিষ্ঠানই এক একটি লটের বিপরীতে ভুয়া ব্যাংক সনদ দাখিল করে, যা তদন্তে প্রমাণিত হয়। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে উভয়ের দরপত্র চূড়ান্ত করে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ফার্ম নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে। যে কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে, সেই কোম্পানির না আছে পূর্ব অভিজ্ঞতা, না আছে দক্ষ ম্যানেজমেন্ট, না আছে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কার্যালয়।

মেসার্স কৃষ্ণা সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড কর্তৃক চলতি মাসের ১০ তারিখে ৭০৩ নং স্মারকে মো. মাহমুদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে লাইভস্টক ফিল্ড এসিসট্যান্ট পদে নিয়োগ দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঠিকানাবিহীন দপ্তরে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। উক্ত নিয়োগপত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যে স্মারকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নয়। উক্ত স্মারকটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অফিসের। অন্যদিকে প্রকল্প অফিসের সাথে কৃষ্ণা সিকিউরিটি সাভিস লি: এর চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়েছে ১ বছরের জন্য। কিন্তু নিয়োগপত্রে কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি। নিয়োগপত্রে একাধিক বানান ভুলসহ কোথায়, কোন দপ্তরে যোগদান করতে হবে তার উল্লেখ নেই। সে কারণ ধরেই নেয়া যায় উক্ত ব্যক্তি কাজে যোগদান ব্যতিরেকেই বেতনভাতাদি উত্তোলন করার সুযোগ পাবেন। আর এসকল অনিয়মের সঙ্গে প্রকল্প অফিস সরাসরি জড়িত।

বিশ্ব ব্যাংকের সুদের টাকায় গ্রহীত প্রকল্প এধরনের অনিয়মের মধ্যে চলছে এবং বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের গোচরিভ‚ত হয় তা হলে প্রকল্পের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক অনিয়মের অভিযোগে অর্থ ছাড় বন্ধ করে দিতে পারে।
মেসার্স কৃষ্ণা সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড এমডি সাইমন ইনবিলাবে বলেন, আমাকে যারা কাজ দিয়েছে। আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি।



 

Show all comments
  • ahammad ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:২১ এএম says : 0
    সরকারের জবাব দীহিতা না থাকার কারনে, প্রশাষনের প্রতিটি স্তরে শিরায়,উপশিরায় দূনিতীতে একাকার হয়ে গিয়াছে। তাই জনগন এই অপশাষন,শোষন থেকে মুক্তি ছায়।
    Total Reply(0) Reply
  • আনারুল ইসলাম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৪ পিএম says : 0
    প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরে কি ফিল্ড এসিসট্যান্ড এর কোনো নিয়গ দেওয়া হয়নি
    Total Reply(0) Reply
  • আনারুল ইসলাম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৪ পিএম says : 0
    প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরে কি ফিল্ড এসিসট্যান্ড এর কোনো নিয়গ দেওয়া হয়নি
    Total Reply(0) Reply
  • আনারুল ইসলাম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৪ পিএম says : 0
    প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরে কি ফিল্ড এসিসট্যান্ড এর কোনো নিয়গ দেওয়া হয়নি
    Total Reply(0) Reply
  • আনারুল ইসলাম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৪ পিএম says : 0
    প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরে কি ফিল্ড এসিসট্যান্ড এর কোনো নিয়গ দেওয়া হয়নি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ