পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভিত্তিতে জাল দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) কার্যালয় এবং সাবরেজিস্ট্রারদের সহযোগিতায় ‘কাজে’ লাগানো হচ্ছে কথিত এসব এনআইডি। এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী জালিয়াতচক্র। একের পর এক এনআইডি জাল করলেও অধরা থেকে যাচ্ছে চক্রের হোতারা। অথচ ভুয়া দলিলে দখল করে নেয়া হচ্ছে প্লট-ফ্ল্যাট-বাড়ি। জমি বিক্রি-বায়না-বন্ধক আর ব্যাংক ঋণ নিতে গেলেই ধরা পড়ছে এনআইডি এবং দলিল জালিয়াতি। এছাড়া ভুয়া এনআইডি দেখিয়ে নতুন পাসপোর্টও হাতিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। দালালচক্র মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইস্যু করিয়ে দিচ্ছে অরিজিনাল পাসপোর্ট। এনআইডি প্রকল্প, পাসপোর্ট অফিস এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানিয়েছে এসব তথ্য।
কেস স্টাডি (এক) : রামপদ সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ২৬১১২৯৩১৮৫১০৪। ভূপতি চন্দ্র দাস নামক আরেক ব্যক্তির এনআইডি নম্বরও ২৬১১২৯৩১৮৫১০৪। রামপদ সরকারের আইডি কার্ডটি ইস্যু হয়েছে আগে। প্রথমটি জাল করে দ্বিতীয়টি তৈরি করা হয়েছে। অথচ ভূপতি চন্দ্র দাস নামক কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। অনুসন্ধানের তথ্যমতে, রাজধানীর মাতুয়াইল ধার্মিকপাড়া মৌজায় জি এম সারোয়ার এসব জাল-জালিয়াতির হোতা।
তিনি রামপদ সরকারের এনআইডি জাল করে ভূপতি চন্দ্র দাসের আইডি তৈরি করেন। কথিত এই আইডি ব্যবহার করে তিনি ২০১৩ সালে একটি (মৌজা-ধার্মিকপাড়া, এসএ-৪,আরএস-১২২, সিটি জরিপ-১/১ নং ক্ষতিয়ান, এসএ-৮১, আরএস-৫০, সিটি জরিপ-১৫০৯ ও ১৫১০) জমি বিক্রি করেন।
ওই জমি দ্বিতীয়বার বিক্রির সময় তল্লাশি দিলে রামপদ সরকারের আইডি বেরিয়ে আসে। যদিও এরই মধ্যে জি এম সারোয়ার আগ্রহী ক্রেতার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. মোস্তাফিজুর রহমান যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (৮৬০-২০/১০/২০১৯) করেছেন। জি এম সারোয়ারের বিরুদ্ধে এনআইডি জাল করে আরো কয়েকটি দলিল করেছেন- মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কেস স্টাডি (দুই) : কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ার জেসমিন আখতারের জন্ম ১৯৭৮ সালের ২০ নভেম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্রেও এ তারিখ উল্লেখ ছিল। এনআইডি হাতে পাওয়ার এক যুগ পর তার চোখে ‘ভুল’ ধরা পড়ে। কথিত এই ভুল সংশোধনের নামে তিনি নিজের বয়স কমিয়ে ফেলেন ৬ বছর। জন্মসন করেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪। আর সংশোধনের জন্য তিনি দাখিল করেন একটি জাল এসএসসি ‘প্রভিশনাল পাস সার্টিফিকেট’-এর ফটোকপি। এতে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সহকারী সচিব সৈয়দ আবু ইউসুফের ৩০ জানুয়ারি ২০০০ ইং তারিখের স্বাক্ষর উল্লেখ রয়েছে।
এনআইডি কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা জেসমিন আক্তারের দাখিলকৃত জাল এসএসসি সনদপত্রটি গ্রহণ করেন। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জাল কাগজের ওপর ভিত্তি করেই ইস্যু করেন সংশোধিত এনআইডি (নং-১৯১১৫১০৬১৪)। এ আইডি ব্যবহার করে তিনি নতুন পাসপোর্ট করেন। সেই পাসপোর্টে সপরিবারে দেশত্যাগের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানতে চাওয়া হলে জেসমিন আক্তার বলেন, এটি করা ভুল হয়ে গেছে। এক মামার সহযোগিতা ও পরামর্শে এটি করেছি। ওই মামা এক সময় শিক্ষাবোর্ডে চাকরি করতেন।
এ বিষয়ে এনআইডি প্রকল্পের পরিচালক (অপারেশনন্স) মো. আব্দুল বাতেন বলেন, ইতোমধ্যেই ভুয়া এনআইডি ইস্যুকারী এবং হোল্ডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভুয়া এনআইডি শনাক্ত হয় সাধারণত ব্যবহারের পর। এটি ব্যবহার করে যদি কেউ নাগরিক সুবিধা নিতে আসে তখন যদি সেটি ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে দুদক সূত্র জানায়, ভুয়া এনআইডির ভিত্তিতে ২০১৫ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের নামে দেদারসে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি ৫১টি রোহিঙ্গা পাসপোর্ট ধরা পড়ায় এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে।
এনআইডি প্রকল্পে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরেই ইস্যু হচ্ছে ভুয়া এনআইডি। এ ঘটনায় দুদক সংশ্লিষ্ট ৭ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সংস্থার সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ, উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফউদ্দিন ও মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর সমন্বয়ে একটি টিম জালিয়াতির অনুসন্ধান চালাচ্ছে। অনুসন্ধানের আওতায় এরই মধ্যে এনআইডি প্রকল্প এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এনআইডি জালিয়াতির অনুসন্ধান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত ইনকিলাবকে বলেন, কোনো জালিয়াতির সঙ্গে সরকারি কর্মচারী জড়িত থাকলে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এ হিসেবে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে কমিশন। মামলাও হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।