পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ট্যাক্স পে’ নাগরিকের মধ্যে রাজধানী ঢাকা নাগরিকদের অবস্থান সবার শীর্ষে। বসবাসের জন্য সিটি কর্পোরেশনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ট্যাক্স দিলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিল আত্মগোপনে, গ্রেফতার এবং বিদেশ পলাতক থাকায় প্রায় এক কোটি মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্ছিত। অথচ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নীরব। উল্টো চিত্র দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে। মামলা এবং গ্রেফতারের অজুহাত দেখিয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রায় ৬ শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যে সব জনপ্রতিনিধি বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ ও মামলা প্রতিবেদন পাওয়া যায় মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আমরা দক্ষিণ সিটি থেকে এক কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি তাদের করা হয়নি। যে সব জনপ্রতিনিধি মামলায় গ্রেফতার হয়েছে তাদের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কমিশনারদের বরখাস্ত না করা আশ্চার্যজনক। আইনে বলা হয়েছে যখনই চার্জশীট দাখিল হলেই জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কেন সেটা করছে না তাদের জিজ্ঞাস করুন।
২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনের ধারা ১২-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে লিখিত আদেশের মাধ্যমে ওই মেয়র বা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের কারণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ক্যাসিনোবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অবৈধ সম্পদের মালিক কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তিনজন কাউন্সিলর গ্রেফতার হলেও তাদের বহিষ্কার করা বা তাদের স্থানে প্রশাসক বা অন্য কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে আত্মগোপনে থাকা ও গ্রেফতার হওয়া কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, চারিত্রিক সনদ পাবার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা। তবে এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে এক ধরণের স্থবিরাবস্থা বিরাজ করছে ওয়ার্ডগুলোর নাগরিক সেবায়। তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। তারা চাচ্ছেন পলাতক এবং বিতর্কিত কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করে অন্যভাবে নাগরিকের জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, চারিত্রিক সনদ পাবার সেবার ব্যবস্থা করা হোক।
বিগত সময়ে দেখা গেছে বিএনপি সমর্থিত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নামে মামলা হলে বা গ্রেফতার হলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনের ধারা ১২-এর ১ উপধারাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জনপ্রতিনিধিদের বহিষ্কার করে। তাদের স্থানে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়েছে যেন নিয়মিত সেবা থেকে নাগরিকরা বঞ্চিত না হোন। কিন্তু ঢাকা সিটির কাউন্সিলরদের বিষয়ে নমনীয় মন্ত্রণালয় এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশনের বোর্ড সভায় মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ জন কাউন্সিলর ও ঢাকা উত্তরের ১৪ জন কাউন্সিলরকে শোকজ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হবার পর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর আত্মগোপনে রয়েছেন। এখন আর গাড়ির বহর নিয়ে চলাফেরা করেন না তারা। নিয়মিত অফিসও করেন না। অনেক কাউন্সিলরের মোবাইল ফোন বন্ধ, প্রয়োজনে কাউন্সিলরের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না। স্থানীয় জনগণ কোন সেবার জন্য কাউন্সিলর অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট সেই সেবা পাচ্ছেন না। জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, চারিত্রিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। উন্নয়ন কাজের তদারকি করার দায়িত্ব থাকলেও করছেন না কাউন্সিলররা, মশক নিধনের কর্মসূচিও থেমে আছে। শুধুমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে তবে ধীর গতিতে।
ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, ফুটপাথ দখলের বিষয়ে যেসব ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তারা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২ নং ওয়ার্ডের মো: আনিসুর রহমান, ৫ নং ওয়ার্ডের মো: আশ্রাফুজ্জামান, ৯ নং ওয়ার্ডের হাজী এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ (বহিষ্কৃত), ১৩ নং ওয়ার্ডের মোস্তবা জামান (পপি), ২০ নং ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, ২২ নং ওয়ার্ডের মো: তরিকুল ইসলাম সজীব, ২৬ নং ওয়ার্ডের হাসিবুর রহমান মানিক, ৩০ নং ওয়ার্ডের মো: হাসান (পিল্লু) ও ৩৯ নং ওয়ার্ডের ময়নুল হক মঞ্জু। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাউন্সিলররা হলেন, ১ নং ওয়ার্ডের আফসার উদ্দিন খান, ৭ নং ওয়ার্ডের মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী, ২৭ নং ওয়ার্ডের ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরান, ৩২ নং ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান মিজান, ৩৩ নং ওয়ার্ডের তারেকুজ্জামান রাজিব, ৪৯ নং ওয়ার্ডের আনিসুর রহমান নাঈম।
এই কাউন্সিলরদের মধ্যে দক্ষিণ সিটির বহিষ্কৃত ৯ নং ওয়ার্ডের হাজী এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুরে পলাতক রয়েছেন এবং ৩৯ নং ওয়ার্ডের ময়নুল হক মঞ্জু, উত্তর সিটির ৩২ নং ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান মিজান, ৩৩ নং ওয়ার্ডের তারেকুজ্জামান রাজিব মোট তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন। সাঈদের স্থলে ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন কাউন্সিলর বাদে বেশিরভাগই গা-ঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে নিয়মিত বোর্ড সভায় উপস্থিত না থাকায় নোটিশ দেয়া হয়েছে দুই সিটির ৩৫ জন কাউন্সিলরকে। দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলরের মধ্য রয়েছেন, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেন মহসিন, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গোলাম হোসেন, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বাসিত খান, ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপি, ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম, ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ, ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তারিকুল ইসলাম সজীব, ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার পারভেজ বাদল, ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মো. হাসান (পিল্লু), ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল, ৩২ নং কাউন্সিলর মো. বিল্লাহ শাহ, ৩৩ নং কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন, ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু, ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মকবুল ইসলাম খান টিপু, ৪১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো, ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন, ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও সংরক্ষিত আসনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন মনি ও ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিউলি হোসেন। এছাড়া উত্তর সিটির নোটিশ পাওয়া কাউন্সিলররা হলেন, সংরক্ষিত আসনের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন্নেছা হক, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা বাহার বিউটি, ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলোরা পারভীন। ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রজ্জব হোসেন, ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মজিবুর রহমান, ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হোসেন, ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম রতন, ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম, ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা ও ৪৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া।
তাদের মধ্যে বোর্ড সভায় অনুপস্থিতির কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দক্ষিণ সিটির ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল মমিনুল হক সাঈদকে বহিষ্কার করেছে। ফলে সকল কাউন্সিলরদের মাঝে বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকার দুই সিটির বেশিরভাগ কাউন্সিলর একই অভিযোগ করেন মেয়রদের প্রতি। তবে বিরাগভাজন হওয়া ও পদ হারানোর ভয়ে কেউ কথা বলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১৫ জন কাউন্সিলর ইনকিলাবকে বলেন, জন্ম-মৃত্যু আর চারিত্রিক সনদ দেয়া ছাড়া আমাদের কোন কাজ নেই। বোর্ড সভায় অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেও আমাদের কথা রাখা হয়নি। তাই অনাগ্রহ থেকে কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকেন। মেয়রদের এক নায়ক কেন্দ্রীক মনোভাব দূর না হলে ঢাকা শহরের সমস্যার সমাধান হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।